Ajker Patrika

রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা কমাচ্ছে জাতিসংঘ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা কমাচ্ছে জাতিসংঘ

নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে এমনিতেই উদ্বেগে আছে বাংলাদেশ। দাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ সহায়তা না পাওয়া, ক্যাম্প এলাকায় আর্থসামাজিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। এর মধ্যেই এবার আরও দুঃসংবাদ দিয়েছে জাতিসংঘ। তহবিল ঘাটতি দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব সংস্থাটি। এটি রোহিঙ্গা সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে বলে মত দিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, মহামারি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং সংকটের কারণে দাতাদের বাজেট কমে গেছে। এতে তহবিল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে আগামী মাস থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ ১৭ শতাংশ কমিয়ে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার করা হবে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চেয়েছে ডব্লিউএফপি। সংস্থাটি বলেছে, ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু। পুষ্টির অভাবে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যাদের বেশির ভাগের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এমন পরিস্থিতিতে তাদের খাদ্যের জন্য জরুরি তহবিল গঠন করা না গেলে এর প্রভাব ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী হবে।

বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘ক্যাম্পগুলোতে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে। আন্তর্জাতিক দাতারা যদি শিশু ও তাদের পরিবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সেটা প্রতিশ্রুতির বরখেলাপই হবে।’

জাতিসংঘের দুই বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি ও টম অ্যান্ড্রুজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা কমিয়ে আনা আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর চরম ব্যর্থতা। রোজার মাসের আগে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য এভাবে তহবিল কমিয়ে আনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা অযৌক্তিক।’

বিবৃতিতে জাতিসংঘের এ দুই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে এমনিতেই খাদ্যাভাব রয়েছে। বেশির ভাগ শিশুই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এমন পরিস্থিতিতে যদি খাদ্যসহায়তা কমিয়ে আনা হয়, তবে সেখানে সংকট আরও প্রকট হবে।’

কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রয়টার্সকে বলেন, ‘আইনগতভাবে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরেই থাকতে হয়। বাইরে কাজের সুযোগ নেই। যদি সহায়তা কমে আসে তবে শরণার্থীরা কাজের খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠবে। এতে করে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা কঠিন হবে।’

ডব্লিউএফপির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জনি আইলিয়েফ বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক সংকট থেকে রেহাই পেতে নানা ঝুঁকি নিতে হয় রোহিঙ্গাদের। এ ছাড়া, তাদের সামনে কোনো উপায়ও নেই। এমন পরিস্থিতিতে তাদের খাদ্যসহায়তা কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’ 

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হত্যা ও নিপীড়নে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালের আগস্টে দেশে আশ্রয় নেওয়া ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তার আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল কয়েক লাখ। কক্সবাজার ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে সব মিলিয়ে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। 

ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শনে ৪ রাষ্ট্রদূত
কক্সবাজারের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বড় একটা অংশ এখন নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করছে। গতকাল শুক্রবার ভাসানচরের এই আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চার দেশের রাষ্ট্রদূত। তাঁরা হলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলো। সেখানে তাঁরা বিভিন্ন ওয়্যারহাউসে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের সুযোগ-সুবিধা, জীবনযাত্রার মানসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বলে আজকের পত্রিকার নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের অফিসার-ইনচার্জ সিমোন পার্চমেন্ট প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত