Ajker Patrika

পরিণতি

সম্পাদকীয়
পরিণতি

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শামসুল হক একটি অবশ্য-স্মরণীয় নাম। ১৯৪৯ সালে যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়, তখন শামসুল হক সেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যে প্রতিনিধিদল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, শামসুল হক ছিলেন সেই দলের একজন। তাঁরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্র সমাবেশে পরিষদের ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তিনি। কিন্তু উত্তেজিত ছাত্ররা তা মানেননি।

১৯৫২ সালের ১৯ মার্চ শামসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে তিনি ছিলেন। এরপর জেল থেকে মুক্তি পান যখন, তখন তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায়।

ভাষাসংগ্রামী ডা. সাঈদ হায়দার যখন লাহোরের কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত, তখন একদিন দুপুরবেলায় দুজন বাঙালি নারী এলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁদের একজন হলেন আনোয়ারা খাতুন, যিনি ছিলেন প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য, অন্যজন শামসুল হকের স্ত্রী। সে সময় লাহোরের মানসিক হাসপাতালে শামসুল হকের চিকিৎসা চলছিল। কোনোভাবে তাঁকে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়া যায় কি না, সেটাই ছিল তাঁদের আরজি।

ডা. সাঈদ হায়দারের জন্য বিষয়টি কঠিন ছিল না। বন্ধু মাকসুদুর রহমান মানসিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। তাঁর মাধ্যমে দেখা করানোর ব্যবস্থা নেওয়া হলো। একদিন সাঈদ হায়দারও দেখতে গেলেন শামসুল হককে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছেন?’

উত্তরে শামসুল হক বললেন, ‘ভালো আছি, তবে বড্ড চিন্তায় আছি। কাল রাতে রানি এলিজাবেথ এসেছিলেন। উনি চান, আমি প্রধানমন্ত্রী হই, কিন্তু আমি রাজি হইনি।’

দুরারোগ্য সিজোফ্রেনিয়ার হ্যালুসিনেশন, ডেলুশনের নিদর্শন শামসুল হকের মধ্যে সুস্পষ্ট। তখন বিখ্যাত এই রাজনীতিবিদের সঙ্গে বাস্তব দুনিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মায়ার জগতে। 

সূত্র: ডা. সাঈদ হায়দার, পিছু ফিরে দেখা, ৩৪০-৩৪১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত