Ajker Patrika

বাঁচতে চান শুটার সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাঁচতে চান শুটার সোবহান

‘আমি এখন কিছুটা ভালো আছি। ফিস্টুলা অপারেশন হয়ে গেলে হাসপাতাল থেকে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু ডায়ালাইসিসটা সারা জীবন চালিয়ে যেতে হবে।’

গত পরশু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বেডে বসে বিষণ্ন কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন তরুণ শুটার আবদুস সোবহান। খানিকটা ঝুঁকে বেডের নিচ থেকে বের করে দেখালেন শেখ কামাল যুব গেমসে পাওয়া সোনা ও জাতীয় যুব শুটিংয়ে জেতা ব্রোঞ্জের পদকও। এই দুই পদকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলেন অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারানো সোবহান। যুব গেমসে সোনা জিতে পেয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে চাকরি। কিন্তু জীবনকে নতুন করে শুরুর সব স্বপ্ন সোবহানের এখন ধূসর হতে বসেছে দুই কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ায়।

এই মাসের শুরুতে যুব গেমসে এয়ার রাইফেলে সোনা জিতেছিলেন সোবহান। গেমস চলার সময়ই টের পাচ্ছিলেন চোখে তীব্র ব্যথা। ফুলে যাচ্ছিল হাত-পা। শুরুতে গুরুত্ব না দিলেও পরিচিতদের পরামর্শে চিকিৎসকের শরণ নিয়ে শুনলেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সংবাদটি। জানলেন, দুই কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর দিকে এক পা করে এগোচ্ছেন দিন দিন। বাঁচতে হলে এখন সারা জীবন ডায়ালাইসিস করে যেতে হবে সোবহানকে। না হলে দেহে প্রতিস্থাপন করতে হবে একটি কিডনি।

বাবা কবে মারা গেছেন জানেন না সোবহান। শৈশবে চলে গেছেন মা-ও। বাবা-মাকে হারিয়ে বড় হয়েছেন দাদির কাছে। সেই দাদিকেও হারিয়েছেন দুই বছর আগে। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে রক্তের সম্পর্কের কারও মধ্যে অথবা মরণোত্তর কেউ কিডনি দান করলে তবেই বাঁচার সুযোগ পাবেন সোবহান। রক্তের সম্পর্ক বলতে কেউই আর জীবিত নেই সোবহানের জীবনে। এখন শুধু ভরসা মরণোত্তর কিডনি দান। সেটা করতে গেলেও খরচ পড়বে ১০ লাখের বেশি, যা সোবহানের সাধ্যের বাইরে। প্রতি মাসে ডায়ালাইসিসে খরচ পড়বে ৩০-৩৫ হাজার টাকা।

মাদ্রাসায় পড়ালেখা করা সোবহানের শিক্ষাজীবন বেশি দূর এগোয়নি। শুটিংয়ের ফাঁকে বাবুর্চির সহকারী হিসেবে যা পেতেন তাতেই চলত জীবন। বাড়ির পাশে রংপুর সৈনিক ক্লাবে শুটিংয়ের হাতেখড়ি। শুটিংকে এতটাই ভালোবেসেছেন, সুযোগ থাকার পরও যাননি অন্য খেলায়। হাসিখুশি, মিশুক সোবহানকে খুব পছন্দ করেন তাঁর সতীর্থরা। রংপুর রাইফেলস ক্লাবের সতীর্থ মিরাজুল ইসলাম হাসপাতালে দেখভাল করছেন সোবহানের।

এখন বাঁচার আকুতি সোবহানের। আকুতি প্রিয় খেলা শুটিংয়ে ফেরার। তীব্র কষ্ট বুকে নিয়ে বললেন, ‘আমি বাঁচতে চাই। ফিরতে চাই প্রিয় খেলা শুটিংয়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত