Ajker Patrika

বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব মাহমুদ মাদানি ও আয়েশা বিউলি

ইজাজুল হক
বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব মাহমুদ মাদানি  ও আয়েশা বিউলি

ভারতীয় মুসলমানদের কণ্ঠস্বর 
মাহমুদ মাদানি
ভারতের সবচেয়ে পুরোনো মুসলিম সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানি ইসলামি পণ্ডিত, বক্তা, সমাজকর্মী ও শান্তির বাণী প্রচারক। তাঁর নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সন্ত্রাসবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখছে এবং তৃণমূল পর্যায়ের মুসলমানদের উদ্বেগের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করছে।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ব্যানারে তিনি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। পাশাপাশি ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়ে ভারতীয় মুসলমানদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। মুসলমানদের অধিকার আদায়ে তিনি ভারতজুড়ে নিয়মিত জনসভা ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করেন। মুসলমানদের নাগরিক, বিচারিক এবং ধর্মীয় অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার সুরক্ষার জন্য কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জাস্টিস অ্যান্ড ইম্পাওয়ারমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্ডিয়ান মুসলিম’ (জেইআইএম)। এর মাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং ভিকটিমের সব ধরনের সেবা দেওয়া হয়।

মাওলানা মাদানি সব সময় বৈচিত্র্য ও মতপার্থক্যের মাঝে ঐক্যের কথা বলেন এবং ভারতের আন্তধর্মীয় সংলাপ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পরমতসহিষ্ণুতার প্রতি বেশি জোর দেন। তাঁর দাদা মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি ছিলেন ভারতে বহু ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মাহমুদ মাদানি এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক আন্তধর্মীয় সম্মেলনের আয়োজন করেন এবং সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের বার্তা ছড়িয়ে দেন।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের দীর্ঘ ২৫ বছরের দায়িত্ব পালনকালে মাহমুদ মাদানি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের সেবা করেছেন। প্রান্তিক ও সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করেছেন। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুজাতিক নীতির জন্য তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

তাঁর তত্ত্বাবধানে ভারতজুড়ে ১০ লাখ মক্তব রয়েছে। মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী আলেম হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন জমিয়ত ওপেন স্কুল, যার মাধ্যমে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সাধারণ কারিকুলামের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সনদ নিতে পারবে। যুবকদের দক্ষতা বাড়াতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন জমিয়ত ইয়ুথ ক্লাব (জেওয়াইসি)। বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া সামাজিক সংগঠন ‘ভারত স্কাউটস অ্যান্ড গাইডস’-এর চেয়ারম্যানও মাওলানা মাহমুদ মাদানি।

এসব কারণে মাওলানা মাদানিকে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের কণ্ঠস্বর বলা যায়। কারণ তাদের জন্য বড় পরিসরে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন এবং সফলও হচ্ছেন।

আয়েশা বিউলিপশ্চিমে ইসলামের ভাষ্যকার 
আয়েশা বিউলি
এ সময়ের খ্যাতিমান অনুবাদক আয়েশা আবদুর রহমান বিউলির জন্ম ১৯৪৮ সালে, আমেরিকায়। ১৯৬৮ সালে ধর্ম পাল্টে ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর ৫ দশক ধরে ইসলামের ধ্রুপদি রচনাগুলো আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ করে চলেছেন। স্বামী আবদুল হক বিউলির সঙ্গে যৌথভাবে পবিত্র কোরআনের ইংরেজি অনুবাদ করেন। কোরআনের তাফসির, হাদিস, ফিকহ, সুফিবাদ ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে তাঁর কয়েক ডজন মৌলিক ও অনূদিত রচনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক নথিভুক্ত লাইব্রেরি ‘ওয়ার্ল্ডক্যাট’ তাঁকে ‘৩ ভাষায় ১৭২ পাবলিকেশন্সে ৭৩ রচনাকর্ম এবং ৮৫৫ লাইব্রেরি হোল্ডিং’য়ের লেখক/অনুবাদক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

আয়েশা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ার ইস্টার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে এমএ করেন। তিনি কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পড়েন এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে সুফিবাদের পাঠ গ্রহণ করেন। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে তিনি শাইখ ড. আবদাল কাদির আস-সুফি আল-মুরাবিতের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর মুরিদ হন। শাইখ মুহাম্মদ ইবনুল হাবিবের কাছে তিনি ঐতিহ্যবাহী ইসলাম শিক্ষার যাত্রা শুরু করেন।

আল-মুরাবিতের উৎসাহে আয়েশা ইসলামের বিভিন্ন মৌলিক রচনা আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে শুরু করেন। তাঁর অনেক কাজই তাঁর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। ইমাম মালিকের আল-মুয়াত্তা, ইবনে সাআদের তাবাকাত এবং কাদি আয়াজের আশ-শিফার অনুবাদ তাঁকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলে। স্বামী আবদুল হক বিউলির সঙ্গে কোরআনে অনুবাদের পাশাপাশি বিখ্যাত তাফসিরে কুরতুবির অনুবাদও করেছেন। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে ‘দ্য সাবটমিক ওয়ার্ল্ড ইন দ্য কোরআন’, ‘ইসলাম দ্য ইম্পাওয়ারিং অব উইমেন’, ‘ডেমোক্রেটিক টির‍্যানি অ্যান্ড দ্য ইসলামিক প্যারাডাইম’ অন্যতম।

আয়েশা বিউলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং মদিনার আদলে মুসলিম সমাজ গড়ার আহ্বান ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর অবদানগুলো অতিগুরুত্বপূর্ণ। এর ফলাফলও জাদুকরি। দীর্ঘদিন এর সুফল ঘরে তুলবে মুসলিম বিশ্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত