Ajker Patrika

সরকারি হাসপাতালে মাত্র ৩ শতাংশ রোগী ওষুধ পায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৬
সরকারি হাসপাতালে মাত্র  ৩ শতাংশ রোগী ওষুধ পায়

ক্যানসারে আক্রান্ত ৫২ বছর বয়সী ফেরদৌসী আরা তিন মাস ধরে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। এই সময়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। যার বেশির ভাগই দিতে হয়েছে নিজের পকেট থেকে। শুধু তিনি নন, দেশের সরকারি সব হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের মাত্র ৩ শতাংশ বিনা মূল্যে ওষুধ পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গতকাল রোববার এক কর্মশালায় গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের ৮৫ দশমিক ১ শতাংশের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় ব্যক্তিখরচে। এতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রোগী ও তাঁর পরিবারকে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা যথাযথ কার্যকর না হওয়ায় এবং শহর এলাকায় পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে স্বাস্থ্যব্যয়ে ব্যক্তির পকেট থেকে ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় হলেও বাংলাদেশে তা ৬৭ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোয় এই হার ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্যব্যয়ে দেশের একজন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যায় ১১ শতাংশ। বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়ের এই হার ১২ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ কম। এ কারণে সেবাপ্রত্যাশীদের ব্যয় বেশি হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে যত ব্যয় হয়, তার বেশির ভাগই যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এ ছাড়া সেবার পেছনে ব্যয়ের তুলনায় প্রচার-প্রকাশনায় ব্যয় হচ্ছে বেশি। এ কারণেও স্বাস্থ্যসেবা পেতে ব্যক্তির ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় ১ শতাংশেরও কম। অর্থ না থাকলে আপনি কীভাবে মানুষকে সেবা দেবেন? উন্নত দেশে ব্যক্তিপ্রতি

যেখানে ৭০-৮০ মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়, সেখানে আমাদের তা অর্ধেকের কাছাকাছি। আবার যা বরাদ্দ হয়, তার বেশির ভাগই যায় বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচে। কাজেই সেবার মান বাড়াতে হলে বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই।’

চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রায় সকল প্রকার ওষুধ কেনার সুযোগ থাকায় এবং ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বিপণনের ফলে স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাতুড়ে চিকিৎসকেরাও ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। তাঁরা অতিমাত্রায় ওষুধ লিখে থাকেন। ফলে রোগীর ব্যয় বেড়ে যায়। জরুরি ওষুধের তালিকা সংশোধন ও সম্প্রসারণ এবং ব্যবস্থাপত্রে প্রটোকল অনুসরণ করে কোম্পানির ওষুধের ‘ব্র্যান্ড’ নাম ব্যবহারের পরিবর্তে ‘জেনেরিক’ নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে এ ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের রোগীদের বড় একটি অংশ চিকিৎসকের কাছে তেমন যান না। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ। জ্বর থেকে শুরু করে জটিল রোগেও তাঁরা ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খান। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাম পড়ছে তাঁদের। আবার আমাদের বাজেট যেমন কম, তার থেকে বড় সমস্যা হলো, তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না-জানা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

আমাকে ধর্ষণের সময় পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল দুই যুবক: ধর্ষণের শিকার তরুণী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত