Ajker Patrika

নদীর পেটে বসতভিটা অন্যের জমিতে বসবাস

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ 
নদীর পেটে বসতভিটা অন্যের জমিতে বসবাস

জমেলা বেগম। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা। যমুনা নদীতে বাড়িঘর, ফসলি জমি হারিয়ে নদীর পাড়ে অন্যের জমিতে পলিথিন টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ভিটেমাটি যা কিছু ছিল, চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে যমুনার তীব্র ভাঙনে তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই শীতে স্বামীকে নিয়ে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে তাঁর বাস।

সবকিছু হারিয়ে জমেলার স্বামী এখন বেকার। কোনোমতে চলছে তাঁদের সংসার। একটু বাসস্থানের খোঁজে ছুটে চলছেন এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।

জমেলা বেগম এ প্রতিবেদককে তাঁর বাড়িঘর হারানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘পানি বাড়ার পরে বাড়ি ঘর ভেইঙে গেছে। ক্ষ্যত ভেইঙে গেছে। মাষকলাইয়ের জমি আছিল, তাও ভেঙে গেছে। আপনজন আশ্রয় দেই নাই। অন্যের জমিতে পলিথিন টানাইয়া থাকি। আমার কাছে এহন পয়সাপাতি নাই, এহন কী করব। আমাগো নদীডো ব্যইন্দা দিলে এলাকার মানুষ বাইচলোনি। জমি কেনার মতো সামর্থ্য নাই। এহন সরকার যদি একটু আশ্রয় দেয় তাইলে থাইকপের পারমু।’

জমেলা বেগমের মতো নদীর পাড়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন হালিমুন বেগম ও খাদিজা খাতুন। তাঁরা সবাই নদীগর্ভে বসতভিটা আর ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোমতে চলছে তাঁদের সংসার। বাড়িঘর হারানো এসব মানুষের একটাই দাবি, তা হলো বসবাসের জন্য এক টুকরো জমি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, চলতি বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জালালপুর ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ। বাড়িঘর হারানো এসব মানুষ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমি, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। আবার অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে অন্য গ্রামে।

স্থানীয়দের দাবি, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী ইউনিয়নের পাঁচিল পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় এ বছর ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বছরের বন্যায় জালালপুরে এক হাজার থেকে বারো শ বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে। আমার বাড়িও নদীতে গেছে। এলাকার মানুষ নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। পলিথিন টাঙ্গিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। এই শীতে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা কারণে এই এলাকায় এ বছর তীব্র নদীভাঙন হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে কাজ শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছরে দফায় দফায় পানি বৃদ্ধির কারণে কাজ বন্ধ ছিল। এখন শুষ্ক মৌসুম চলছে। আশা করছি, ৮-১০ দিনের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত