Ajker Patrika

আলোচনায় সুইফটের ‘বিকল্প’ লেনদেন সতর্কতার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২২, ১০: ২১
আলোচনায় সুইফটের ‘বিকল্প’ লেনদেন সতর্কতার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

আন্তর্জাতিক লেনদেন প্ল্যাটফর্ম সুইফটের সঙ্গে রাশিয়ার ১২ এবং বেলারুশের ২ ব্যাংকের লেনদেনে নিষেধাজ্ঞার পর এখন জোর আলোচনায় বিকল্প লেনদেন পদ্ধতি। কী উপায়ে বাংলাদেশ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লেনদেন করবে, এ নিয়ে সরকারের ভেতরে বাইরে বিস্তর কথা হচ্ছে। কেউ তৃতীয় দেশের মুদ্রার সঙ্গে, কেউ বা চীনের মুদ্রার সঙ্গে আবার কেউ দুই দেশের মুদ্রার সঙ্গে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ করার কথাও বলছেন। তবে কোনো প্রস্তাবই নিরাপত্তা, গ্রহণযোগ্যতা কিংবা বিশ্বস্ততার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এখনও মানোত্তীর্ণ হতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে মুদ্রা সোয়াপের বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এদিকে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা সুইফটের বিকল্প ব্যবস্থায় যাওয়ার আগে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, একটি পরীক্ষিত ব্যবস্থার বিকল্প কতটা নিরাপদ হবে, তা নিশ্চিত না হয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।

জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক অংশীদার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন–সুইফট’। এতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ সহায়তার অর্থ লেনদেন এবং যন্ত্রপাতির বিল পরিশোধ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ করে লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব এসেছে। কারেন্সি সোয়াপ হচ্ছে এমন পদ্ধতি যখন দুটি দেশের মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানির বিল নিজ নিজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিশোধ করে থাকে। খোদ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও সম্প্রতি এ পদ্ধতির আভাস দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও ‘কারেন্সি সোয়াপ’ করার বিষয়ে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশমালা পাঠিয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, এ ক্ষেত্রে মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক রাখা জরুরি। এখন রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের সঙ্গে সোয়াপ করলে, যদি রুবলের দরপতন হয়, তখন বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রুবলের দর নিয়মিত পতন হচ্ছে। সাধারণত কারেন্সি সোয়াপ হয় যদি উভয় মুদ্রার মান স্থিতিশীল থাকে। এ ক্ষেত্রে মুদ্রার মান কতটা স্থিতিশীল থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন অর্থনীতিবিদেরা। শুধু মান নয়, সুইফট থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিকল্প মুদ্রা বা কারেন্সি সোয়াপের ফলে সুইফটের নেতৃত্বে থাকা দেশগুলো বিষয়টিকে কীভাবে নেয়–এটিও বিবেচনার বিষয়। কারণ এর পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। তাদের মনোভাব বুঝেই সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়ানো নীতি অনুসরণ করতে বলছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর আমদানি-রপ্তানির অর্থ পরিশোধ জটিল আকার ধারণ করেছে। এতে অনেক অর্থ আটকা পড়েছে। এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রাখাই উত্তম।’

কারেন্সি সোয়াপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার রাশিয়ার সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে চাইলে প্রথমে লিখিত চুক্তি করতে হবে। সেই চুক্তিতে মুদ্রার বিনিময়ে রুবল নাকি ডলার হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। মূল্যমানেও সামঞ্জস্য রাখতে হবে। তবে তাতেও খুব একটা লাভ হবে না। কারণ রুবলের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার ও ব্যবসায়িক লেনদেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমতা রক্ষা করা কঠিন। আর যুদ্ধাবস্থায় রুবলের মূল্যমান কমে গেলে তখন কারেন্সি সোয়াপের কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য আনা সরকার যদি কারেন্সি সোয়াপে যায়, তাতেও ঝুঁকিও রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনকে তৃতীয় দেশ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে টাকার মূল্যমান হিসাবে রাশিয়ার মুদ্রা ও চীনের মুদ্রা বিনিময় করা যায় কি না তা চুক্তির সময় আমলে নিতে পারে। তবে এ রকম বিনিময়ের বিষয়টি পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে নেবে ও তার ঝুঁকির দিক গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা ঠিক করবে পরবর্তী করণীয়। তবে সব ধরনের ঝুঁকি মাথায় রেখে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত