Ajker Patrika

সিরাজুদ্দীন হোসেন

সম্পাদকীয়
সিরাজুদ্দীন হোসেন

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান লোক পাঠালেন ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনের কাছে। প্রথিতযশা এই সাংবাদিককে অনুরোধ করা হলো প্রেস ট্রাস্ট থেকে প্রকাশিতব্য ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এর ভার নিতে। বিশাল বেতন, গাড়িসহ আরও কত লোভনীয় প্রস্তাব! বেশ কয়েকবার তাঁর কাছে এল আইয়ুবের লোকজন। শেষে বিরক্ত হয়ে সিরাজুদ্দীন হোসেন বললেন, ‘তোমাদের প্রেসিডেন্টকে বলে দাও, বাংলার সব মানুষের মাথা কেনা যায় না!’

এমনই ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। যেন খাপখোলা তলোয়ার।

ছাত্র ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের, থাকতেন বেকার হোস্টেলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ছাত্রাবস্থায় আজাদ পত্রিকায় ঢুকেছিলেন। সে পত্রিকায় মুসলিম লীগের সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম ঘরানার খবর ছেপে দিতেন। বাদ যেতেন না শেখ মুজিবও।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর অসাধারণ সাংবাদিকতার প্রকাশ রয়েছে আজাদ পত্রিকায়। দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করার সময় তাঁর ক্ষুরধার লেখনী ও অসাধারণ টিমওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতাকে নিয়ে যান এমন এক উচ্চতায়, যা এ দেশের সাংবাদিকতায় বিরল।

সিরাজুদ্দীন হোসেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জনক। ছেলেধরাবিষয়ক সিরিজ রিপোর্টের মাধ্যমে তিনি কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিলেন সরকারের পুলিশ বিভাগকে এবং ছেলেধরাদের। এরই সূত্র ধরে মুক্ত হয়েছিল ৭২ শিশু।

১৯৬৬ সালে ছয় দফা নিয়ে সিরাজুদ্দীন হোসেনের চালানো প্রচারণা এখন ইতিহাসের অংশ।

১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সিরাজুদ্দীন হোসেন লিখেছিলেন, ‘...এতেও যদি ভুট্টো সাহেবদের অনীহা থাকে, তবে তারা যে পথে চলতে চাইছেন, সে পথ বাংলার নয়। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ভাগ্যে যা ঘটবে তা লাহোর প্রস্তাবকেও হার মানাবে, এ কথা বলাই বাহুল্য। যে অপবাদ এত দিন বাঙালির পোহাতে হয়েছে, সেই অপবাদের হাত থেকে এত দিনে তারা নিষ্কৃতি পাবার পথ খুঁজে পাবে। যেন আর ছয় দফা নয়, হয়তো এক দফাতেই সবকিছুর নিষ্পত্তি হবে।’

 ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দালাল আলবদর বাহিনী ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ করে। তিনি আর ফিরে আসেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত