Ajker Patrika

সেই তিন জাহাজ এখন গলার কাঁটা

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ০৮
সেই তিন জাহাজ এখন গলার কাঁটা

৫০ কোটি টাকায় কেনা তিনটি জাহাজ এখন চট্টগ্রাম বন্দরের গলার কাঁটা। বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জের পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে পণ্য পরিবহনের জন্য কনটেইনারবাহী ওই জাহাজগুলো কেনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলো এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস, এমভি পানগাঁও ভিশন ও এমভি পানগাঁও সাকসেস।

২০১৩ সালের শেষ দিকে ৫০ কোটি টাকায় কেনা হয় ১২০ থেকে ১৪০ টিউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ তিনটি। এগুলো পরিচালনা করে এ পর্যন্ত ১৬ কোটি টাকা আয় করেছে বন্দর।

শুরুতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জাহাজ তিনটি পরিচালনা করত। পরে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের কাছে ৫ বছরের চুক্তিতে জাহাজগুলো হস্তান্তর করা হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সামিট অ্যালায়েন্স সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে জাহাজ তিনটি চট্টগ্রাম বন্দরকে ফেরত দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে (বিএসসি) তিনটি জাহাজ পরিচালনার অনুরোধ করা হয়। বিএসসি এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে। দফায় দফায় জাহাজগুলো পরিচালনার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় তিন বছর ধরে অলস পড়ে আছে সেগুলো।

সূত্রে জানা গেছে, একাধিকবার ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও উপযুক্ত দর মেলেনি। বাধ্য হয়ে জাহাজ ৩টি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বন্দরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে নির্মিত পানগাঁও টার্মিনালে নদীপথে কনটেইনার পরিবহনের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকায় জাহাজ ৩টি কেনা হয়েছিল। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দুটি এবং ২০১৪ সালের আগস্টে একটি জাহাজ বুঝে নেন তাঁরা। শুরুতে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জাহাজ তিনটি পরিচালনা করে বন্দর। পরবর্তী কালে ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল জেটিতে তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উপস্থিতিতে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রতি মাসে তিনটি জাহাজের ভাড়া বাবদ ৪২ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ৫ বছরের চুক্তি হয়।

এদিকে কনটেইনার পরিবহন করে ক্রমাগত লোকসানের কবলে পড়ে সামিট অ্যালায়েন্স। ফলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২ বছর ৮ মাসের মাথায় বন্দরের কাছে জাহাজগুলো হস্তান্তর করে তারা।

পরবর্তীতে জাহাজ তিনটি ভাড়া দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় বন্দর। তবে আশানুরূপ দর না পাওয়ায় জাহাজ তিনটি নিলামের বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের আইন উপদেষ্টার মতামত জানতে চাওয়া হয়।

বন্দরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে জাহাজ তিনটি বিক্রির বিষয়ে আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বন্দরের আইন উপদেষ্টা। এর আগে দেড় বছর আগে চট্টগ্রাম-পানগাঁও রুটের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কা রুটে পরিচালনার জন্যও আইন উপদেষ্টার মতামত চাওয়া হয়েছিল। জাহাজের ফিটনেস থাকা সাপেক্ষে এই রুটেও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই বলে মতামত দেওয়া হয়েছিল। এরপরও জাহাজ তিনটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তবে এরই মধ্যে জাহাজ তিনটি পরিচালনার জন্য বিএসসিকে অনুরোধ জানায় বন্দর। এ বিষয়ে বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (শিপিং) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেওয়া চিঠির মাধ্যমে ওই তিনটি জাহাজ পরিচালনায় প্রস্তাব পেয়েছি। তবে এই জাহাজগুলো আমাদের পরিচালনার সুযোগ নেই। বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

বন্দরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জাহাজ তিনটি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত জানতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসব বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক বিদেশে অবস্থান করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বন্দরের নৌ বিভাগের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন জহিরুল ইসলাম ওই তিনটি জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২০১৭ সালের শেষ থেকে কর্ণফুলী নদীর বাংলাবাজার ঘাটে অলস পড়ে ছিল জাহাজ তিনটি। সম্প্রতি জাহাজগুলো বন্দরের সার্ভিস জেটিতে আনা হয়েছে। বন্দরের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও চিফ পারসোনাল অফিসার মো. নাসির উদ্দিন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত