Ajker Patrika

দুর্ভিক্ষের ভীতি ছড়ানো নয়

সম্পাদকীয়
দুর্ভিক্ষের ভীতি ছড়ানো নয়

দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গটি সম্প্রতি বিভিন্ন আলোচনায় আসছে। বিষয়টিকে রাজনৈতিকীকরণের মাধ্যমে পানি ঘোলা করার অপচেষ্টাও আছে। আমরা মনে করি, খাদ্য এমন একটি অতি জরুরি দ্রব্য, যা প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। খাদ্যের মতো এমন জরুরি জিনিস নিয়ে রাজনীতি হয় না, তা নয়। তবে আমরা আশা করব, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক, জ্বালানি ও খাদ্যসংকটের আগাম আভাস যখন পাওয়া যাচ্ছে, তখন খাদ্য নিয়ে অপপ্রচার ও রাজনীতি থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বক্তৃতায় খাদ্যসংকটের ইঙ্গিত দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানানোর পর বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ছড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেননি যে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবেই; বরং তিনি এটাই বলেছেন যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের আছে। তিনি বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনতে বলেছেন। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে ব্যয় কমানোর নির্দেশনা। ব্যক্তি পর্যায়েও ব্যয় কমানোর পাশাপাশি সঞ্চয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি সঠিক কাজটিই করেছেন।

এটা ঠিক যে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে পরিস্থিতি খারাপ হবেই। আমরা খাদ্য উৎপাদনে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। আমাদের খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। চাল-গমসহ যা যা আমদানি করতে হয়, বিশ্বে তার উৎপাদন কমে গেলে আমরা তো সংকটে পড়তেই পারি। এর ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বিশ্বজুড়েই অর্থনীতির চরম অবস্থা যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। প্রান্তিক মানুষ আরও প্রান্তিকীকরণের শিকার হচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে কোনো অবস্থায়ই স্বাভাবিক বলা যাবে না।

প্রাকৃতিক কারণে যেমন দুর্ভিক্ষ হতে পারে, তেমনি মানুষসৃষ্ট কারণেও হতে পারে। খাদ্য মজুত আছে অথচ মানুষের হাতে টাকা নেই—তেমন পরিস্থিতিও হতে পারে। অস্বীকার করার জো নেই যে প্রচুর টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে। এখনো যাচ্ছে। মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই পথে বসে যাচ্ছে দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে। গুটিকয়েক মানুষের হাতে টাকা জমা হওয়ায় বাড়ছে বৈষম্য। ক্রয়ক্ষমতা কমছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী বারবার সঞ্চয়ের কথা বলছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন সঞ্চয়ী হওয়া সময়ের দাবি, তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবেও সঞ্চয় বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্নীতি, অপচয়, অর্থ পাচার রোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভালো হবে কীভাবে? মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ পৃথিবীর বাইরের কোনো রাষ্ট্র নয়। পৃথিবী সংকটে পড়লে তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না, তা কি হয়!

সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আতঙ্ক না ছড়িয়ে মানুষের জীবনীশক্তি, শ্রমশক্তি কাজে লাগানোর বিষয়টি উৎসাহিত করতে হবে। মজুতদার, মুনাফাখোর, মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু সংকটের কথা বড় করে প্রচার করা গণমাধ্যমের কাজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত