Ajker Patrika

হায় প্রধান শিক্ষক!

সম্পাদকীয়
হায় প্রধান শিক্ষক!

শিক্ষকদের নৈতিকতার মান নেমে যাচ্ছে, এ রকম কথা আজকাল শোনা যায়। সত্যিই, ডিজিটাল যুগে এসে পুরোনো মূল্যবোধ, নৈতিকতা এখন নতুন পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে লড়াই করছে। এই লড়াইয়ে জয়ী কে হবে, তা আপাতত বোঝা যাচ্ছে না।

ইদানীং শিক্ষকদের কারও কারও আচরণ দেখে হতবাক হয়ে যেতে হয়। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছেন এক প্রধান শিক্ষক। উপজেলার নন্দনালপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হালিম টিসি দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। সর্বশেষ স্কুলের স্টোরে নিয়ে শ্লীলতাহানি করলে মেয়েটি তার মাকে সে কথা বলে দেয়। গত ২ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন শিক্ষার্থীর মা। সেই মামলায় প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

অভিনব খবর নয় এটা। অসহায় শিশুরা যে ইদানীং শিক্ষকদের যৌন লিপ্সার শিকার হচ্ছে, এ রকম খবর হরহামেশাই প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নৈতিক সম্পর্কটি প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় শিক্ষকদের দ্বারা শিশু ধর্ষণের যে খবরগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বোঝা যায়, অনেক শিক্ষকের নৈতিক ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। তাঁদের এহেন মানসিকতার কারণ খুঁজতে গবেষণা হওয়া দরকার। এটা অবশ্যই মানসিক ও মানবিক সংকট।

এই সংকট শুধু শিক্ষকদের নয়, সমাজের সর্বক্ষেত্রেই অনৈতিকতা বেড়ে উঠছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো শুভবুদ্ধি হয়তো আছে, কিন্তু তা অনৈতিকতার শক্তির কাছে দুর্বল। পেশিশক্তির কাছে পরাজিত হচ্ছে নৈতিকতা। একজন আদর্শ শিক্ষকের চেয়ে একজন ঋণখেলাপি অনেক বেশি শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। সরলপথে কাজ না হলে বাঁকা পথই ভরসা। সেই ভরসায় মানুষ নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। সমাজের এই অধঃপতনের সময় শুধু শিক্ষকেরা সততার ঝান্ডা-বরদার হয়ে থাকবেন—এ নিছক কষ্টকল্পনা। তবু শিক্ষকদের ওপর আস্থা রাখতে মন চায়।

নৈতিকতার যদি কোনো মূল্য থাকে, তাহলে শিক্ষকের ওপর আস্থা রাখা প্রয়োজন এবং সে কাজটি শিক্ষকই তাঁর জীবনাচরণ দিয়ে শিক্ষার্থীর মনে গেঁথে দিতে পারেন।

আমাদের সমাজে যে সুবচনগুলো আছে, সেগুলো এ যুগে কার্যকরী কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, কিন্তু শুভ-অশুভের বিভাজনটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না শিক্ষক। ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’ বা ‘ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়’ ধরনের প্রবাদবাক্যগুলো লক্ষ করলে দেখা যাবে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ার জন্য লেখাপড়ার চেয়েও যোগ্য জিনিস আছে এবং ইট না মারলেও পাটকেল খেতে হতে পারে।

কিন্তু সামাজিক সম্পর্কে নিরাশা আসছে বলে শিক্ষকেরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করতে থাকবেন, এটা কোনো কাজের কথা নয়। এই অপরাধের উপযুক্ত বিচার হওয়া দরকার। তবে তার সঙ্গে দরকার, শিক্ষকদের এই অনৈতিক পথে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করা এবং তার প্রতিকার করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

জামায়াত আমিরের বাসায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক, পিআর নিয়ে অনড় অবস্থান

মির্জাপুরে বিএনপি নেতার পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইবরাহিমের নাম বাদ দিতে ইসিকে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত