Ajker Patrika

বাংলাদেশের মানুষই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিক: আজরা জেয়া

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৩, ১১: ৫০
বাংলাদেশের মানুষই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিক: আজরা জেয়া

সংঘাত পরিহার করে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহায়তা করার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। তিনি বলেছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সফর শেষে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে একটি বার্তা সংস্থাকে আজরা জেয়া এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য আমি সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিই।’

এ ছাড়া একটি টেলিভিশন চ্যানেলকেও সাক্ষাৎকার দেন নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। সেখানে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন বর্জন বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার কথা নয়। কোনো দলের প্রতি আমাদের পক্ষপাত নেই।’ তবে তিনি জানান, প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চায় যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষা করে দেখছে।

আর ভিসা নীতি বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরির জন্য নয় জানিয়ে মার্কিন এই আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সহায়তা দিতে এই পদক্ষেপ।

মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকার অনুরোধ করেছে। এ প্রসঙ্গে আজরা জেয়া বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা কমেছে। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে হলে আগের অপরাধগুলোর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বাহিনীতে সংস্কার দরকার হবে।

ঢাকা ছাড়ার আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে আমেরিকান ক্লাবে আজরা জেয়া বসেছিলেন সুশীল সমাজ ও শ্রমিক সংগঠনের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, সলিডারিটি সেন্টারের কর্মসূচি পরিচালক এ কে এম নাসিম ও চাকমা রানি ইয়ান ইয়ান।

সবার কথা শুনে কী বললেন আজরা জেয়া, জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে কী হচ্ছে, সেসব তথ্য উনাদের কাছে আছে। কিছু প্রশ্ন করে উনারা নিজেদের মতো করে বুঝতে চাইলেন পরিস্থিতি কেমন।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেখানে উপস্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আজরা জেয়াকে বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থ, সরকারের স্বার্থ ও মানুষের স্বার্থ মিলিয়ে ফেললে ঝামেলা হয়। এখানে তা-ই করা হচ্ছে। কেউ মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের সমালোচনা করলে তা রাষ্ট্রবিরোধিতা মনে করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা সৃষ্টি না করলে এই নীতি নিয়ে তার চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে কল্পনা আক্তার বলেন, এখানে শ্রম আইনে কী আছে, ইউনিয়ন করতে গিয়ে শ্রমিকেরা কী পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন, শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের বিচার কোন পর্যায়ে আছে—এসবসহ কয়েকটি বিষয় জানতে চান আজরা জেয়া।

মার্কিন এই কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে শহিদুলসহ দুজন শ্রমিকনেতা খুন হওয়া প্রমাণ করে, এখানে ইউনিয়ন করতে গেলে কী পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। শহিদুলের সব হত্যাকারীর গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে।

আরও বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক শ্রমিকনেতারা আধিপত্য বিস্তার করায় প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়নগুলো কোণঠাসা হয়ে আছে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতার অন্যায় ও অন্যায্য কিছুর প্রতিবাদ করলে চাকরি হারান শ্রমিকেরা। শ্রম আদালতে মামলা করেও সুবিচার মেলে না।

বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, মানুষ ভোটাধিকার ফেরত চায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ এই আইনের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে। সরকার আইনটি সংশোধনের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করছে।

তিন পার্বত্য জেলায় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না বলে একজন অংশগ্রহণকারী উল্লেখ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

১১ জুলাই থেকে চার দিনের সফরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের পর মার্কিন প্রতিনিধিদলটি গতকাল ঢাকা ত্যাগ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত