Ajker Patrika

মজুরির বদলে নির্যাতন হাসপাতালে ৪ কিশোর

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫৬
মজুরির বদলে নির্যাতন  হাসপাতালে ৪ কিশোর

বাবা প্রতিবন্ধী। ছেলে মাদ্রাসাছাত্র ফিরোজ হাসান (১৪)। মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য কাজ নিয়েছিল এক গুঁড়ার মিলে। সঙ্গে ছিল তার তিন বন্ধু মো. মেহেদী (১৫), তুষার (১৪) ও তুহিন (১৩)। কিন্তু মজুরি পাওয়ার পরিবর্তে পেয়েছে মিলমালিকের নির্মম নির্যাতন। সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে শুয়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়।

গত মঙ্গলবার বগুড়ার শেরপুরের গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ঘটনায় গত বুধবার রাতে এক কিশোরের বাবা থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। তবে এখন পর্যন্ত মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মজুরির বকেয়া টাকা চাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে একটি মিলঘরে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে মঙ্গলবার রাতে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেন। নির্যাতনের শিকার কিশোর এই শ্রমিকেরা উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের মহিপুর কলোনী গ্রামের বাসিন্দা।

নির্যাতনের শিকার ফিরোজ হাসানের কাছ থেকে জানা যায়, করোনার কারণে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় সে ও তার তিন বন্ধু গুঁড়ার মিলে কাজ নেয়। মিলের মালিক মহিপুর জামতলা গ্রামের ইয়াকুব আলী বলেছিল তাদের প্রতিদিন ৫৫০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হবে। কিন্তু তারা কাজ করলেও নিয়মিত বেতন দেওয়া হতো না। এভাবে তাদের বেতনের ১৪ হাজার টাকা আটকে রাখা হয়। তারা বকেয়া বেতন চাইলে মালিকপক্ষ তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তারা কাজ ছেড়ে দেয়।

কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুরে বেতন দেওয়ার কথা বলে ইয়াকুব তাদের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তাদের মিলঘরে আটকে রেখে বৈদ্যুতিক তার চুরির অভিযোগে ইয়াকুবসহ চারজন লোহার রড, বাঁশ, কাঠ, হাতুড়ি ও প্লায়ার্স দিয়ে নির্যাতন চালায়। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের চামড়া তুলে নেওয়া হয়। তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। লোহার রডের আঘাতে তার কলার বোন ভেঙেছে বলে সে জানায়।

মেহেদীর মা মিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ও তার বন্ধুদের উদ্ধারের চেষ্টা করলে ইয়াকুব আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করি।’

প্রত্যক্ষদর্শী রেখা বেগম বলেন, ‘কিশোরদের চিৎকারে মিল ঘরে ছুটে যাই। আমাদের সামনেই তাদের হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় তুষার পানি খেতে চাইলে ইয়াকুব তার মুখ পা দিয়ে চেপে ধরে।’

তুষার ও তুহিনের বাবা স্বপন বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের হাতের তালু ও পায়ের চামড়া তুলে নিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তুহিনের পা ভেঙে দিয়েছে। টাকার অভাবে তাদের চিকিৎসা করাতে পারছি না। এ ঘটনার বিচার চাই।’

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় বুধবার রাতে ইয়াকুবসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন স্বপন। আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

এস আলমের জামাতার পেটে ৩৭৪৫ কোটি টাকা

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত