Ajker Patrika

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগে পদ পাওয়ার দৌড়ে বিতর্কিতরাও

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ০৮
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগে পদ পাওয়ার দৌড়ে বিতর্কিতরাও

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ছাত্র নেতারা। তাঁদের মধ্যে বিতর্কিত অনেকেও রয়েছেন।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা শাখার মেয়াদ ১ বছর। জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৫ সালের ১২ মে। প্রায় ৭ বছর পর চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ওই কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ টিটু মিলনায়তনে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন অর্ধ শতাধিক প্রার্থী। এবার কাউন্সিল হবে না। প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানানো হবে নতুন কমিটির কথা।

আলোচনার শীর্ষে আছেন সদ্য সাবেক সহসভাপতি আরিফুল আলম শাওন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম পারভেজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথিলেস কুমার প্রসাদ, উপসম্পাদক ফজলে রাব্বী, সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ তোহা, প্রচার সম্পাদক মুকুল ইসলাম, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সজীব সাহা, সদস্য আল জাহিদ রাসেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আল মাহিদুল ইসলাম জয়।

আগে কোনো পদে না থাকলেও আলোচনা ও প্রচারে আছেন মাহফুজার রহমান, তৌহিদ আহমেদ, নোমান আল সাব্বির।

এঁদের মধ্যে শাওন, সাব্বির, ফজলে রাব্বী ও তৌহিদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু সমর্থিত। মিথিলেস, সজল ও মাহফুজার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের অনুসারী এবং পারভেজ, মুকুল, সজীব ও জয় জেলা সভাপতি মজিবর রহমান মজনু সমর্থিত। তোহা ও রাসেল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিকের অনুসারী।

জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহকালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্যে বলেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা পেরিয়ে গেলে, তাঁদের কমিটিতে আসার সুযোগ নেই।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা ২৭ বছর। মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও দুই বছর বাড়িয়ে দেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র অনুয়ায়ী ২১ জানুয়ারি কমিটি বিলুপ্তির দিনই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথিলেস প্রসাদের বয়স হয় ২৯ বছর ৯ দিন।

এদিকে মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও ককটেল নিক্ষেপসহ হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। সেটি আদালতে বিচারাধীন।

এ বিষয়ে মাহফুজার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, ওই মামলায় আমি রেগুলার হাজিরা দিচ্ছি। আমি তো ব্যক্তিগত বিষয়ে মামলায় পড়িনি। আপনি এজাহারে দেখেন, তৎকালীন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও ওই মামলার আসামি। আমি তো একজন কর্মী ছিলাম মাত্র। ওই মামলার আসামি অসীম কুমার রায় পরবর্তীতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তিনিও তখন কর্মী ছিলেন।’

এ ছাড়া ২০১৮ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি তৌহিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেন আজিজুল হক কলেজের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হোসাইন বুলবুল। এর আগে অপহরণ করে চাঁদা দাবির ঘটনায় সংগঠন পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার দায়ে কলেজ কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে তৌহিদ বলেন, ‘আজিজুল হক কলেজের সভাপতি ওই সময় মিথ্যা মামলা করেছিলেন আমার বিরুদ্ধে। ওটা গ্রুপিংয়ের জন্য করেছে। আর আজিজুল হক কলেজের অর্থ সম্পাদকের পদ থেকেও আমাকে বহিষ্কারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য বিরোধী পক্ষ ব্যাকডেটের একটি বহিষ্কারের মিথ্যা কাগজ বানিয়ে ছড়াচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, মাহফুজার রহমান, আল মাহিদুল ইসলাম জয় ও নোমান আল সাব্বির এর আগে জেলা ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিলেন না।

জয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য বলে দাবি করেন। তবে সোহাগ-জাকির কমিটির ৩০১ সদস্যের মূল কমিটিতে তাঁর নাম পাওয়া যায়নি। জয়ের দাবি, বর্ধিত কমিটিতে তাঁকে সদস‌্যপদ দেওয়া হয়। তবে বর্ধিত কমিটির কোনো তালিকা তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং এস এম জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠির ফটোকপি দেখান, যেটায় স্বাক্ষরের সঙ্গে কোনো তারিখ লেখা ছিল না।

আল নোমান সাব্বিরকে এর আগে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রমে সক্রিয় দেখা যায়নি। জেলার কোনো ইউনিটে তাঁর কোনো পদ নেই। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সুবাদে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাঁর।

জানা যায়, সাব্বিরের চাচা ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন রাজু ওই ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। পৌরসভা নির্বাচনে তাঁর পক্ষে গণসংযোগ এবং বিজয় মিছিল  করেন সাব্বির। এমন একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ‌্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

আরিফুল আলম শাওনের বিরুদ্ধে কলেজে ভাঙচুরের অভিযোগে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন অধ্যক্ষ। পরদিন তাঁকে জেলা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তবে ‍দুই বছর পর মামলা থেকে খালাস পান শাওন।

এ বিষয়ে শাওন বলেন, ‘অধ্যক্ষ আমার বিরুদ্ধে ভুল বুঝে মামলা দিয়েছিলেন। পরে এফিডেভিট করে তিনি মামলা তুলে নেন। আমার বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করেছে জেলা ছাত্রলীগ।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁরা ধরেননি। খুদেবার্তা পাঠিয়েও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত