Ajker Patrika

তীব্র শব্দে কান পাতা দায়, রক্ষা পাচ্ছে না হাসপাতাল এলাকাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
তীব্র শব্দে কান পাতা দায়, রক্ষা পাচ্ছে না হাসপাতাল এলাকাও

রাজধানীর নীরব ও আবাসিক এলাকাগুলোও অসহনীয় মাত্রায় শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে। কর্মদিবসে রাজধানীর হাসপাতালের সামনেও সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৯ ডেসিবল শব্দের মাত্রার শব্দ শনাক্ত করা হয়েছে। দেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা থাকলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন তো হচ্ছেই না বরং দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) আন্তর্জাতিক শ্রবণ দিবস উপলক্ষে ‘প্রাণ প্রকৃতির ওপর শব্দ দূষণের প্রভাব ও প্রতিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। 

ক্যাপস এবং ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। 

ক্যাপসের গবেষণায় কর্মদিবসে রাজধানীর ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৭টি হাসপাতালের সামনে স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মেশিনের সাহায্যে ১ ঘণ্টা শব্দের মাত্রা রেকর্ড করা হয়। এতে সর্বোচ্চ শব্দের মাত্রা ৮৯ দশমিক ৯ ডেসিবেল পাওয়া যায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল লিমিটেডের সামনে। আর সর্বনিম্ন ৬৯ দশমিক ৭ ডেসিবেল পাওয়া যায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায়।

অথচ শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ধরা হয়। নীরব এবং আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় অনুমিত শব্দের মাত্রা যথাক্রমে ৫০ এবং ৫৫ ডেসিবল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৭১ থেকে ৯০ ডেসিবেলকে তীব্রতর এবং ৯০ ডেসিবেলের ওপরে অসহনীয় শব্দদূষণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। 

সেখানে রাজধানীর ১৭টি হাসপাতালে গড়ে শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৮১ দশমিক ৭ ডেসিবল। যেখানে নয়টি স্থানেই ৮০ ডেসিবেলের ওপরে। আর এসব এলাকায় হর্ন বাজানোর সময় শব্দের মাত্রা ১২২ ডেসিবল পর্যন্ত ওঠে। 

এর আগে ট্রাফিক পুলিশের ওপর চালানো ক্যাপসের আরেক গবেষণায় দেখা যায়, গবেষণায় অংশ নেওয়া ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ জানান, তাঁদের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ জানান, তাঁদের মোবাইলে কথা বলতে অসুবিধা হয়। ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ বলেন, অন্যরা উচ্চস্বরে কথা না বললে শুনতে পান না। 

ওয়েবিনারে বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা বলেন, ‘শব্দ দূষণের ফলে জলজ প্রাণীরও ক্ষতি হয়, একেক ধরনের প্রাণীর শ্রাব্যতাসীমা একেক রকম। ফলে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের ফলে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে।’ সম্মিলিতভাবে শব্দ দূষণ রোধে কাজ করার আহ্বান জানান অধ্যাপক গুলশান আরা। 

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, ‘হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো নিষেধের আগে এর বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। শব্দ দূষণ গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ডেটাবেজ সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’ 

মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে প্রাণীরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এতে ওই এলাকায় উদ্ভিদের পরাগায়ণ ও প্রজনন ব্যাহত হয় বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। 

অনুষ্ঠানে শব্দ দূষণ রোধে ক্যাপসের পক্ষ থেকে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর শতভাগ বাস্তবায়ন; বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতায় পরিবেশ ক্যাডার ও পরিবেশ পুলিশ নিয়োগ দেওয়াসহ ১০ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। 

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন—নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া, শ্রবণ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন, প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোসা. রাশিদা বেগম, ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক কাজী ফরহাদ ইকবাল, বাপার যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির, ইউএসএইড ও এফসিডও-এর বায়ু ও শব্দ দূষণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ইঞ্জিনিয়ার মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

সাবেক ‘র’-এর প্রধানের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত