পান্থকুঞ্জের ওপর দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ গণশুনানিতে স্থগিত

পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী সংযোগ সড়কের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা দিয়েছেন ‘পান্থকুঞ্জ মোকদ্দমা: জনগণ বনাম অন্তর্বর্তী সরকার’ শীর্ষক গণশুনানির বিচারকমণ্ডলী। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পান্থকুঞ্জ উদ্যানে জনগণের অবাধ প্রবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার বিকেলে পান্থকুঞ্জ উদ্যানের সার্ক ফোয়ারা গেটে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত গণশুনানি শেষে এই রায় দেন তাঁরা।

বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. গীতিআরা নাসরীনের নেতৃত্বে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, অর্থনীতিবিদ ড. আনু মুহাম্মদ, প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সামসি আরা জামান।

বাদীপক্ষ বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন। বিবাদীপক্ষে ছিলেন সড়ক ও সেতু, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা। তবে শুনানিতে বিবাদীপক্ষের কেউ অথবা তাঁদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

বাদীপক্ষের প্রসিকিউটর ছিলেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব ও নাঈম উল ইসলাম। তাঁরা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক কারসাজি ও পিপিপি নীতিমালা ভঙ্গ, সংবিধান, আইন ও আদালতের নির্দেশনার ব্যত্যয়, মেয়াদোত্তীর্ণ পরিবেশ ছাড়পত্র ও শর্তাবলির লঙ্ঘন, বৈষম্যমূলক চুক্তির ধারা ও জনস্বার্থবিরোধী দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প, নাগরিক হত্যা ও বিদেশি কোম্পানির দায়মুক্তি, প্রকল্পের অজুহাতে পান্থকুঞ্জে গাছ কাটার কারণে পাখি, বাদুড় ও পতঙ্গদের মৃত্যু, প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো ও আশ্রয়হীন করার অভিযোগ উপস্থাপন করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে বাদীপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দেন নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক সৈয়দা রত্না, পান্থকুঞ্জ প্রভাতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন তুহিন, শিল্পী ও সংগঠক সৈয়দ মুহাম্মদ জাকির। তাঁরা ঠিকাদারের স্বার্থ রক্ষায় অবৈধ প্রকল্প চলমান রাখা, সংরক্ষিত ঘোষিত গাছ, পাখির ক্ষতিসাধনের অভিযোগ করেন।

গণশুনানি শেষে আদালত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পে যেসব দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা প্রমাণিত বিষয়ে দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পান্থকুঞ্জ উদ্যানের দুই হাজার গাছ কেটে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানোয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নে্ওয়া নির্দেশ নিয়েছেন। এ ছাড়া বিবাদীদের আইন লঙ্ঘন ও দায়িত্বহীনতার জন্য ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করেছেন। শুনানিতে বিবাদীপক্ষের অনুপস্থিতির বিষয়টির তিরস্কার করেছেন।

সবশেষে প্রধান বিচারক গীতিআরা নাসরীন বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পান্থকুঞ্জ উদ্যান জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হলো এবং বাদীপক্ষের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে বিবাদীপক্ষসহ অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পান্থকুঞ্জ উদ্যানে জনগণের অবাধ প্রবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালতের রায় বাস্তবায়ন এবং বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়কের সব প্রকার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হলো।

উল্লেখ্য, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবিতে গত ১৬৮ দিন ধরে পান্থকুঞ্জ পার্কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন।