Ajker Patrika

কানাডায় কাজ ও বাসার সংকটে শিক্ষার্থীরা

মমতাজ জাহান মম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৪৭
কানাডায় কাজ ও বাসার সংকটে শিক্ষার্থীরা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছেও উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ কানাডা। শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্বপ্ন নিয়ে পড়তে যান দেশটিতে। কিন্তু বর্তমানে কানাডার শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখা দিয়েছে আবাসনসংকট। সে কারণে বাড়ছে বাড়িভাড়া। উপায় না পেয়ে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ থাকছেন হোটেলে। এতে অর্থসংকটে পড়ছেন অনেকে। কানাডায় অবস্থানরত পাঁচ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর কথা শুনেছেন মমতাজ জাহান মম

শাহ ইমতিয়াজ 
শিক্ষার্থী, শেরিডান কলেজ মিসিসাগা, অন্টারিও 

শেরিডান কলেজের শিক্ষার্থী শাহ ইমতিয়াজ থাকেন মিসিসাগাতে। সেখান থেকে তাঁর ক্যাম্পাস প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। তিনি যে শহরে বাস করছেন, সেখানে আবাসনসংকট নেই। কিন্তু বাসাবাড়ির ভাড়া আগের তুলনায় বেশি। শাহ ইমতিয়াজ জানান, কানাডার সব জায়গায় আবাসনসংকট এক রকম নয়। বড় শহরগুলোর সংকট বেশি। তবে বাসা খুঁজে পেতে কষ্ট হলেও তা পাওয়া যায়। কিন্তু দেখা যায়, বাসাভাড়া অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি ছোট কক্ষের ভাড়া প্রতি মাসে প্রায় ৮০০ ডলার। আবার টরন্টো শহরে একই রকম কক্ষ বা বাসা পাওয়াই অনেক কঠিন। সেখানে কলেজের সংখ্যা বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা সেদিকেই থাকতে চান। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে, টরন্টোতে থাকলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তাই সব শিক্ষার্থী সেখানেই পাড়ি জমান। এ কারণে টরন্টো শহরে থাকার প্রতিযোগিতাও বেশি। কিন্তু সব জায়গায় এটি এক রকম নয়। কবে এর সমাধান হবে, সেটা কেউ জানেন না 

সজীব কুমার ভাওয়ালসজীব কুমার ভাওয়াল
শিক্ষার্থী, হাম্বার কলেজ, ইটোবিকোক

হাম্বার কলেজে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল প্রযুক্তির ওপর স্নাতকোত্তর করছেন সজীব কুমার ভাওয়াল। থাকেন টরন্টোর ইটোবিকোক শহরে। এটি কানাডার অন্টারিওর টরন্টো শহরের একটি অংশ। কানাডার অনেক শহুরে এলাকা আবাসনসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কানাডায় আসার সময় আবাসন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন ইটোবিকোকের মতো জায়গায়ও। কলেজ ও ইউনিভার্সিটির অফার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট। তার মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পাসে আবাসন। তবে কেউ যদি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে পছন্দ করেন, তাহলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ, কিজিজি, এয়ারবিএনবি, ক্রেইগ লিস্ট বা হাউজিং ইত্যাদির মতো ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিকল্প উপায় খুঁজে থাকেন। অনেক শিক্ষার্থী কক্ষ ভাগাভাগি করছেন, বেসমেন্ট এমনকি গ্যারেজের কক্ষে বসবাস করছেন।  এখন কানাডায় বাসাভাড়া তুলনামূলক বেশি। এ কারণে অনেক ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন খুঁজে পাওয়া কঠিন। 

জহিরুল ইসলাম অভিজহিরুল ইসলাম অভি
শিক্ষার্থী, সেনেকা কলেজ, টরন্টো, অন্টারিও

বর্তমানে কানাডায় অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসছেন। এই সংখ্যা গত দুই-তিন বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কানাডায় মানুষের সংখ্যা কম। দেশটি আয়তনে বড় হলেও জনসংখ্যা কম। তাই বাসাও অনেক কম। এ পর্যন্ত কানাডায় তিনটি বাসা বদলেছেন অভি। তিনি বলেন, এখন কানাডার অবস্থা খুবই খারাপ। বাসাসংকট অনেক বেড়েছে। নতুন শিক্ষার্থীদের এখন এ-সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। প্রধানত, মানুষের সঙ্গে ভালো সংযোগ রাখতে হবে। যদি মানুষের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ থাকে, তাহলে বাসা পাওয়া কষ্টকর বিষয় নয়। ভালো সম্পর্কের কারণে একজন আরেকজনকে মুখে মুখেই বাসা দিয়ে দেন। নতুন কোনো শিক্ষার্থী আসার পর যদি একজন আরেকজনের পরিচিত না হন, তাহলে তাঁর বাসা খুঁজে পেতে অনেক কষ্ট হয়। আবাসনসংকট ছাড়া পার্টটাইম কাজের সংকটও বেড়েছে। নতুনদের জন্য কাজ খুঁজে পাওয়াটা এখন অনেক কঠিন। তাঁদের জন্য সপ্তাহে মাত্র ২০ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ রয়েছে, সেটি নির্ধারিত। এ কারণে তাঁদের টিউশন ফি ও বাসাভাড়া দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

দেওয়ান আবিদ হাসানদেওয়ান আবিদ হাসান
সাবেক শিক্ষার্থী, টরন্টো, অন্টারিও
  
২০২১ সালের দিকে কোভিডের মাঝামাঝি কানাডায় যান শিক্ষার্থী দেওয়ান আবিদ হাসান। ওই সময় আবাসনসংকট খুব বেশি ছিল না। সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও কানাডীয়র জন্য যথেষ্ট বাসা ছিল। বাসার ভাড়াও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি পার হওয়ার পর দ্রুত শিক্ষার্থীরা কানাডায় ঢুকতে শুরু করেন। এ দেশে মানুষ কম থাকায় কানাডীয় সরকার বেশি মানুষ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল। সে কারণে বেড়ে যায় ভাড়া বাসার চাহিদা।

কানাডীয় কিছু বাড়ির মালিক একটি কক্ষে তিনটি বেড দিয়ে বাসা ভাড়া দিচ্ছেন বলে জানান দেওয়ান আবিদ হাসান। বর্তমানে টরন্টো ডাউন টাউনে একটি কক্ষ পাওয়াই কষ্টকর হয়ে গেছে। পাওয়া গেলেও তার ভাড়া আকাশছোঁয়া। ২০২১ সালের দিকে টরন্টোর প্রধান শহরগুলোতে একটি কক্ষের ভাড়া ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ ডলার। এখন সেই একই কক্ষের ভাড়া ৯০০ থেকে ১ হাজার ডলার। শিক্ষার্থীদের যে উপার্জন, তাতে এই আকাশছোঁয়া ভাড়ায় থাকার সামর্থ্য তাঁদের নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

বিদ্যালয়ে সময় দেন না শিক্ষক, ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় সহকর্মীকে মারধর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত