Ajker Patrika

এ বছর ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেলেন যাঁরা

মুসাররাত আবির
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২২, ১৩: ২২
এ বছর ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেলেন যাঁরা

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রিন্সেস ডায়ানার নামে তাঁর দুই ছেলে প্রিন্স হ্যারি ও প্রিন্স উইলিয়াম ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করেন। পুরস্কারটিকে ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাকর পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১ জুলাই রাত ৮টায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এ বছর বাংলাদেশ থেকে আটজন শিক্ষার্থী-উদ্যোক্তা এই পুরস্কার লাভ করেন ৷ সেই আটজনকে নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

আমিমুল-এহসান-খানআমিমুল এহসান খান

আন্তর্জাতিক যুব-নেতৃত্বাধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’-এর সিনিয়র আঞ্চলিক কর্মকর্তা তিনি। বর্তমানে তিনি জাপানের টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি দেশের বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং তরুণদের জাতিসংঘের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেন। যেহেতু তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধামতো কাজ করা যায়, তাই কোনো কিছুই বাড়তি চাপ বলে মনে হয় না। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের তরুণদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জাতিসংঘের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করাই বর্তমানে তাঁর পরিকল্পনা।

মুরাদ-আনসারীমুরাদ আনসারী

তিনি মানসিক স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম ‘সাইকিউর’র প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর উদ্দেশ্য হলো সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে স্নাতক সমাপ্ত করেন। সাইকিউর মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য নানান ক্যাম্পেইন, ট্রেনিং ও কাউন্সেলিং সেবা দেন। মুরাদের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি স্টার্টআপ চালানো বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও, দক্ষ টিমের কারণে এটা মোটেও চাপ হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি আগস্টের শেষেই একটি অ্যাপ লঞ্চ করতে যাচ্ছেন, যার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন।


নাফিরানাফিরা নাঈম

১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাফিরা নাঈম ২০১৯ সালে ‘অ্যামপ্লিটিউড’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা, যা বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূরীকরণের
জন্য কাজ করছেন। ২০২২ সালে তিনি গ্রিন হেরাল্ড স্কুল থেকে এ লেভেলস দেন। তাঁর জন্য পড়াশোনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কাজও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু তিনি রুটিন মেনে কাজ করেন, তাই তাঁর কাজ করতে কোনো অসুবিধা হয় না। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে চান।

দীপ্রদীপ্র প্রত্যয়

দীপ্রর পড়াশোনা যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে। এখানে তিনি সিএসই বিভাগে অধ্যয়নরত। দেশে থাকতেই তিনি দেখতেন বাংলাদেশের অনেক মানুষের মনে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে একটা অজ্ঞতা কাজ করে। অনেকে খরচের কথা ভেবেও বাইরে পড়তে চান না। তাই তিনি গড়ে তোলেন ‘ডিপি টিউটোরিয়ালস’। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র শিক্ষামূলক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান, যা তাদের কোর্সে ভর্তি হতে ইচ্ছুকদের প্রয়োজনভিত্তিক আর্থিক সহায়তা দেয়। এর পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের মাসে স্বল্পমূল্যে স্যাট ও আইইএলটিএস প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করেন।

আনুশা-চৌধুরীআনুশা চৌধুরী

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গণসচেতনতা তৈরি এবং একই সঙ্গে মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করার জন্য ২০১৮ সালে আনুশা ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর কার্যক্রম শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি জনসচেতনতা সৃষ্টি আর মানসিক অবসাদে ভোগা মানুষদের সাহায্য করার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পড়ালেখা তাঁর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সংগঠনটিও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। কাজ নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, মানুষকে সহায়তা করা, প্রতিষ্ঠানটিকে মানুষের মধ্যে পরিচিত করে তোলা।

শামীম-আহমেদ-মৃধাশামীম আহমেদ মৃধা

বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত ভারসাম্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে শামীম আহমেদ মৃধা ‘ইকো-নেটওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় সংগঠন। তাদের কাজগুলো মূলত ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যাঁরা পরিবেশবিজ্ঞান সাবজেক্টে পড়াশোনা করছেন, অথবা পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। শামীম বিইউপির এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কিছুটা কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব নয়। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই মূলত তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ‘ইকো-নেটওয়ার্ক’ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও বেশ কিছু ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে কাজ করতে চায়; যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

মনীষা-মীম-নিপুনমনীষা মীম নিপুণ

নিপুণ হলেন একজন ট্রান্স যুব প্রশিক্ষক, যিনি ২০১৯ সালে ‘পথচলা ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করছেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি ‘পথচলা ফাউন্ডেশন’ হিজড়া ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কিল ডেভেলপমেন্ট, মানবাধিকার রক্ষা, সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।

ফয়েজুদ্দিন-বেলালফয়েজুদ্দিন বেলাল

তাঁর প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগ ‘বিওয়াইএস’-এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষা, ক্লাইমেট অ্যাকশন, নারী-পুরুষ সমানাধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য এই স্বীকৃতি প্রদান করা। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ২ মিলিয়ন নারী এবং কিশোরীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে কাজ করে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই সংগঠন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত