Ajker Patrika

বাসাইলে রাস্তা ভরাটের নামে চলছে বালুমাটি বিক্রির মহোৎসব

বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
বাসাইলে রাস্তা ভরাটের নামে চলছে বালুমাটি বিক্রির মহোৎসব

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়ার ঝিনাই নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে রাস্তা ভরাটের নামে চলছে বালুমাটি বিক্রির মহোৎসব। দিনের বেলায় লোক দেখানো কিছু বালি রাস্তায় ফেলা হলেও রাতভর চলে অন্যত্র বালুমাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাবশালী একটি চক্র দিনের পর দিন এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তাঁরা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাঞ্চনপুর ছনকাপাড়া থেকে কোদালিয়াপাড়া হয়ে আদাজান পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ড্রেজার। আর এ রাস্তা ভরাটের নামে কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়া ঝিনাই নদীর মাজমের দও থেকে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার দিয়ে বালুমাটি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী চক্র। এসব ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালুমাটি উত্তোলনের ফলে এরই মধ্যে নদী তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি, কবরস্থান, আবাদি জমি, কাঁচা-পাকা সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

নতুন করে আরও অনেক স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এসব ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করতে না পারলে নদী তীরবর্তী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ভিটে-বাড়িসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীতে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়া এলাকায় ঝিনাই নদীর বাঁকে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালুমাটি উত্তোলন অব্যাহত থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই পুরো এলাকা ভাঙনের কবলে পড়বে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ডিডিআইআরডব্লিউএসপি প্রকল্পের আওতায়  ১ কোটি ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৪৬২ টাকা ব্যয়ে ‘আদাজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কোদালিয়াপাড়া সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালী করণ’ নতুন রাস্তার কাজ শুরু হয়। মেসার্স তাপস ট্রেডার্স এ কাজটি পায়। ১ হাজার ১০০ মিটার এই রাস্তায় ১৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে ৩১৫ মিটার প্যালাসাইটিং, ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫২ টাকার প্রাক্কলন ব্যয়ে সাইড বাই সাইড বালুমাটির কাজ করা হবে। তবে রাস্তার বক্সের মাটি ভরাট করা হচ্ছে ড্রেজার দিয়ে। এতে উন্নয়নের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে বেশি। 

কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাঁর সহযোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাটি ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাঁরা জানান, দিনের বেলায় লোক দেখানো কিছু বালুমাটি রাস্তায় ফেলে। কিন্তু রাতের বেলায় লোক চক্ষুর আড়ালে ভরাট করা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি ও পুকুর-ডোবা। 

গত কয়েক সপ্তাহে কোদালিয়াপাড়ার আশরাফ হোসেন, শাহজাহান মিয়া, মিজানুর রহমান, মামুন নামের কয়েকজনের ভিটেবাড়ি এবং পুকুর ভরাট করা হয়েছে। নালা ভরাট করা হয়েছে আরও কয়েকজনের। অভিযোগ উঠেছে, ছনকাপাড়া, কোদালিয়াপাড়ার অসংখ্য বাড়িতে মাটি ভরাটের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এই বালু ব্যবসায়ীরা। 

স্থানীয় কৃষক  ছানোয়ার হোসেন বলেন, এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে ড্রেজার দিয়ে বালুমাটি উত্তোলনে বাধা দিতে গেলে ওই ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে নানা ধরনের হুমকি দেয়। 

ভুক্তভোগী আবু সাইদ বলেন, ‘একটি সরকারি রাস্তা করতে গিয়ে আরেকটি রাস্তা নদীগর্ভে ফেলার ব্যবস্থা করছে তাঁরা। ভাঙন কবলে পড়ে বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীতীরে বসবাস করা নিরীহ মানুষ। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’ 

এ বিষয়ে ড্রেজার মালিক জাকির হোসেন বলেন, ‘রাস্তার ঠিকাদার আমাকে রাস্তায় বালুমাটি ফেলার কাজ দিয়েছে।’ 

মেসার্স তাপস ট্রেডার্সের প্রতিনিধি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদ হোসেন মীম রাস্তার কাজ এনেছে। আপনারা ওনার বক্তব্য নেন।’ 

উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদ হোসেন মীম বলেন, ‘এলাকা ও রাস্তা উন্নয়নের স্বার্থে ড্রেজার দিয়ে রাস্তায় বালুমাটি ফেলার কাজে একটু সহযোগিতা করছি। আমি কারও কাছ থেকে কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা নিই না।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল জলিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাস্তায় সাইড বাই সাইড মাটির কাজ ধরা আছে। বালি ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দে আছে। ড্রেজার ব্যবহার করে বালি ফেললে সে দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে। আমরা ড্রেজার ব্যবহারের বিপক্ষে।’ 

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, ‘ড্রেজার বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ অভিযান চলছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন ও বালুমাটি উত্তোলনে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ধ্বংস করাসহ মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে। ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত