Ajker Patrika

৮ ধরনের যানে ঢাকায় ঢুকছে মাদক, চালকের অপরাধে বিপাকে মালিকেরা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩, ২২: ২১
৮ ধরনের যানে ঢাকায় ঢুকছে মাদক, চালকের অপরাধে বিপাকে মালিকেরা

যানবাহনের চালক ও তাঁর সহযোগী মাদক চোরা কারবারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে বিপদে পড়ছেন গাড়ির মালিকেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জেরা, নানাভাবে হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তাঁরা। জব্দ গাড়ি ফেরত পেতে আদালতে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত অনেকে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে খোলা আকাশে নিচে থাকতে থাকতে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার গাড়ি।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে, পরিবহনশ্রমিকেরা মাদকের বাহক হিসেবে কাজ করছেন। চালকদের সহযোগিতায় কেবল রাজধানীতেই আট ধরনের যানবাহনে মাদক ঢুকছে। তাই চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে মালিকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে ইউরিয়া সারবোঝাই একটি ট্রাক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে জব্দ করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মহানগরের তেজগাঁও সার্কেলের সদস্যরা। চালকের সিটের ওপরের সিলিং থেকে উদ্ধার হয় দুই হাজারটি ইয়াবা। গ্রেপ্তার হন চালক মো. মোজাফফর হোসেন এবং তাঁর সহকারী মো. আনিছুর রহমান। মোজাফফরের বাড়ি ঠাকুরগাঁও এবং সহকারীর বাড়ি দিনাজপুরে। এ ঘটনায় ডিএনসির পরিদর্শক হাওলাদার মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। পাশাপাশি ৩০ লাখ টাকার ট্রাকটিও জব্দ করা হয়।

ট্রাকটি ঠাকুরগাঁওয়ের সেলিনা হাসান নামে এক নারীর নামে নিবন্ধিত। ট্রাক ফেরত পেতে ঠাকুরগাঁও থেকে ছয়-সাতবার ঢাকার আদালতে আসেন ষাটোর্ধ্ব ওই নারী। বৃদ্ধ স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ডিএনসির অফিস, আদালত আবার ঠাকুরগাঁও দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে দীর্ঘদিন। দুই মাস ট্রাকটি খোলা আকাশের নিচে পড়ে প্রায় অকেজো হয়ে যায়। কিছু যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। 

সেলিনা হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চালক মোজাফফরকে আমি ভালোই জানতাম। থানায়ও তার বিরুদ্ধে মাদকের কোনো মামলা নেই। সে যে ভেতরে ভেতরে মাদকের কারবার করে, তা আমি জানতাম না। গাড়িটি ছাড়িয়ে আনার পর আমাকে লাখ টাকা খরচ করে ঠিক করতে হয়েছে।’

চট্টগ্রামের মনির নামে এক কারবারির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মোজাফফর মাদক কারবারে নাম লেখান। মামলার তদন্ত শেষে দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনসির উপপরিদর্শক (এসআই) আসহাব উদ্দিন চৌধুরী। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সাতটি শর্তের ভিত্তিতে আদালত মালিককে ট্রাক বুঝিয়ে দিতে বলেন। সব শর্ত পূরণ হওয়ার পর তাঁকে আদালতের নির্দেশে ট্রাক বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সেলিনা ট্রাক ফিরে পেলেও আব্দুস সালাম নামে এক ব্যক্তি তাঁর নোয়া গাড়িটি ছয় মাসেও ছাড়িয়ে নিতে পারেননি। গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। গাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন আব্দুস সালাম। আরোহীরা মাদকসহ ধরা পড়ে। নানা আইনি জটিলতা ও নথিপত্র না থাকায় আজও গাড়িটি ছাড়িয়ে নিতে পারেননি। পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল গাড়িটি।

আট ধরনের যানে ঢাকায় ঢুকছে মাদক
ডিএনসির তথ্য বলছে, গত বছরের মে থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত গত এক বছরে কেবল ঢাকা মহানগরীর ডিএনসির সাতটি সার্কেল মাদকসহ আট ধরনের ২৭টি গাড়ি জব্দ করেছে। এর মধ্যে আন্তজেলা বাস তিনটি, কাভার্ড ভ্যান চারটি, ট্রাক চারটি, প্রাইভেট কার পাঁচটি, পিকআপ চারটি, মাইক্রোবাস দুটি, কার্গো ট্রাক একটি এবং মোটরসাইকেল চারটি। 

গাড়িগুলো ঢাকা মহানগরীর ডিএনসির বিভিন্ন কার্যালয়ে জব্দ রয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলা থেকে মালামাল অথবা যাত্রী নিয়ে এসব যান ঢাকায় এসেছিল। জব্দ গাড়ির চালকেরা সবাই বাহক। তাঁরা মাদক বহন করে পরিমাণ অনুযায়ী অর্থ পান। কখনো চালান বিক্রির লাভের অংশ পান।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্র বলছে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, রাজশাহী বিভাগ থেকে আসা যেকোনো গাড়িতে বাড়তি নজর রাখতে হয়। গত ১৯ মে ঢাকার বাড্ডার প্রগতি সরণি থেকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মারসা ট্রান্সপোর্ট নামে একটি বাস জব্দ করে ডিএনসির রমনা সার্কেল। ওই গাড়ির এ-১ সিটে বসা রুমা আক্তার নামে এক নারী ও গাড়িটির চালক মাহমুদুল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডিএনসির সদস্যরা। ওই নারী স্বীকার করেন তাঁর জুতায় বিশেষ চেম্বারে ইয়াবা আছে। জুতা খুলে ২ হাজার ৮০০-এর বেশি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। 

গাড়িচালক মাহমুদুল করিম জেরার মুখে জানান, তাঁর পকেটে ও গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ইয়াবা রয়েছে। সেসব স্থান থেকে আরও দুই হাজারটি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় বাসটিসহ গাড়িচালক ও ওই নারীকে আটক করে ডিএনসি। বাসটি এখন ডিএনসির তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে রয়েছে।

মার্সার জেনারেল ম্যানেজার ওমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই কোম্পানির কোটি কোটি টাকার বাস সড়কে চলছে। যে চালকদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। সব কাগজপত্র নেওয়া হয়। তারপরও তারা ফাঁদে পড়ে। লোভ করে নিজেরাও বিপদে পড়ে, বাসমালিক, প্রতিষ্ঠানকেও বিপদে ফেলে।’

এর আগে গত ১৩ মে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস জব্দ ও চালককে আটক করে ডিএনসি। এই বাসটিও পড়ে আছে ডিএনসির তেজগাঁও কার্যালয়ে। 

সম্প্রতি তেজগাঁওয়ের ডিএনসির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অফিসটির চত্বরে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পড়ে আছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এগুলো সব মাদকসহ আটক হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। 

মাদক মিললেই গাড়ি জব্দ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চালকেরা গাড়ির মালিকদের না জানিয়ে মাদক কারবারিদের সঙ্গে হাত মেলায়। গাড়িতে মাদক চোরাচালান করে। চালক বা তার সহকারীদের শরীরে মাদক পেলে তখন গাড়ি জব্দ করা হয় না। তবে যদি গাড়ির সঙ্গে কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়, তখন গাড়ি জব্দ করা হয়। আইনেও তাই বলা আছে। কারণ, অনেকেই এই গাড়ি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা জানান, গাড়ির চালক ও সহকারীরা অল্প কিছু টাকার জন্য মাদক কারবারিদের সঙ্গে হাত মেলায়। তাদের কথামতো ভয়াবহ মাদকের চালান এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় পৌঁছে দেয়। তারা নিজেরা বিপদে পড়ে, গাড়ির মালিককেও বিপদে ফেলে। কারণ, গাড়িতে মাদক পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী সেটি জব্দ করতে হয়। 

গাড়ির চালক নিয়োগে মালিকদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ‘চালক নিয়োগ দেওয়ার আগে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট থানায় তাঁর বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে খোঁজ নেওয়া যেতে পারে। তিনি অপরাধী হলে পুলিশ জানবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্যকলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

‘আপত্তিকর’ ভিডিও: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালেন গভর্নর

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের যৌন সহিংসতার প্রসঙ্গ জাতিসংঘে তুললেন ভারতীয় দূত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত