Ajker Patrika

পায়ে হেঁটে ওটিতে ঢুকে ফিরলেন লাশ হয়ে, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ৪০
পায়ে হেঁটে ওটিতে ঢুকে ফিরলেন লাশ হয়ে, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

পাইলসের সমস্যার কারণে সুস্থ-সবল অবস্থায় রাজধানীর উত্তরার ‘উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে’ নিজ পায়ে হেঁটে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) ঢোকেন ফরিদ আহমেদ তালুকদার (৫২)। কিন্তু তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের হতে হয়েছে লাশ হয়ে। স্বজনদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে।

স্বজনেরা জানান, ফরিদ আহমেদকে গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওটিতে ঢোকানো হলে রাত ৮টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ বের করা হয়। 

ভুক্তভোগী ওই রোগী মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর উপজেলার দামপাড়া এলাকার হাজি তৈয়ব আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন। 

ফরিদ আহমেদের মৃত্যুর খরব পাওয়ার পরপরই ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। পরে স্বজনদের আহাজারি ও প্রতিবাদে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। 

নিহতের ছেলে মোহাম্মদ রায়হান তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রফেসর ড. এম এ হাশেম ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে আমার বাবাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছে। বিকেলে ডাক্তার আমাদের জানিয়েছেন ওনার (ফরিদ আহমদ) পালস (হার্টবিট) আপডাউন করছে। তাই অপারেশন করা হবে না। এর পরও আমার বাবাকে ওটিতে ঢোকানো হয়েছে। সঙ্গে ডা. হাশেম ভূঁইয়া পরিচয়ে একজন ওটিতে ঢুকেছেন, আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। নিচে গিয়ে রিসেপশনে শুনি ডা. হাশেম ভূঁইয়া আসেন নাই। তিনি বাসায়। তাহলে কার সঙ্গে কথা বললাম!’ 

রায়হান বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেছি,তাকে যে অচেতন করার জন্য এনেস্থেসিয়া দেওয়া হয়েছে, তার শিশি কই? তারা দেখাতে পারে নাই। আমি ড্যাম শিওর, ওনাদের ফার্মেসিতে খোঁজা হলে মেডিসিনে দুই নাম্বারি পাওয়া যাবে। অথবা ডেট অভার পাওয়া যাবে।’ 

ফরিদ আহমেদ তালুকদাররায়হান বলেন, ‘বাবা ওটিতে হেঁটে ঢুকছে। সুস্থ-সবল ছিল। তখন ওনার পায়ে প্লাস্টিকের জুতা ছিল, সেটা রাখার জন্য আবার বের হইছিল। জুতা রাখার সময় আমাদের বলছে জুতাগুলো সরাইয়া রাখ, অন্য মানুষের যাইতে-আইতে সমস্যা হবে। সেই লোক কেমনে মারা গেল?’ 

তিনি বলেন, ‘আমি মাগরিবের আজানের সময় বের হয়ে নামাজ পড়ে আসছি। এসে দেখি ডাক্তার আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলছে। পরে ডাক্তার আমাকে জানায় বাবা নেই।’ 

ছোট ছেলে আহনাফ তাহমিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাইলসের জন্য ৯০ হাজার টাকা কন্টাকে বাবাকে ভর্তি করাইছি। অপারেশনের সময় পাঁচজন অপারেশন থিয়েটারে থাকার কথা ছিল। তখন বাবার সঙ্গে ছিল একজন এবং পাশের ওটি থেকে ডাক্তার ডেকে এনে অপারেশন করাইছে।’ তিনি বলেন, ‘ডাক্তার আমাদের ৭টার দিকে বলছে আমার বাবা নাকি মাইনর একটা অ্যাটাক করছে। তারপর তারা বলে, আমার বাবা তিনবার স্ট্রোক করছে। তারা নাকি শেষ চেষ্টা করছে। এরপর আমার বাবার লাশ বের করছে তারা।’ 

হাসপাতালের সামনে স্বজনদের ভিড়তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অথচ অপারেশনের আগে ডাক্তাররাই বলছে আমার বাবা মাইনর অ্যাটাক করছে। তাহলে তারা অপারেশন করাইল কীভাবে? অ্যাটাক করার পরও তারা এক থেকে দেড় ঘণ্টা আমাদের ঘুরাইছে। অন্য কোথাও শিফট করে নাই। আবার অপারেশন করাইছে কে, সেই ডাক্তারও পেলাম না।’ 

আহনাফ তাহমিদ বলেন, ‘আমার বাবা নামাজি মানুষ ছিলেন। চিকিৎসকদের ভুলে তিনি কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। আমি চাচ্ছি না তিনি আর কষ্ট পাক। তার মরদেহ কাটাছেঁড়া করা হোক। তাই আমরা মামলা করব না।’ 

ফরিদ আহমদের ছেলেরা বলেন, ‘আমাদের বাবাকে চিকিৎসকেরা ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমরা শুনতে পারছি, এই হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগীদের ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলা হয়। আমরা এর বিচার চাই।’ 

একই দিনে গাজীপুরের কলেজগেট থেকে নিয়ে এসে দুপুর ১২টার দিকে আয়েশা বেগম (৮০) নামের এক রোগীকে ভর্তি করানো হয়। রাত ১১টার দিকে কোনো উন্নতি না হওয়ায় অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রোগীর ছেলে মফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার রোগীর কোনো ইম্প্রুভ নাই। বিকেলে বলছে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে। বিল বানাইছে ৪০ হাজার টাকা। ওদের বিল বানাইতে লাগছে ছয় ঘণ্টা। অথচ রাত ১০টা পর্যন্তও ওরা বিলের হিসাব দিতে পারেনি।’ 

মফিজুর রহমান বলেন, ‘৪০ হাজার টাকা দিয়েও কোনো চিকিৎসা পাইনি। অথচ আমি এই টাকা দিয়ে ভারতে সুন্দর চিকিৎসা পেতাম, যার কারণে বাংলাদেশের ৭০ ভাগ রোগীই ভারতে চলে যায়।’ 

রোগীর নাতি মেরিন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নানিকে শ্বাসকষ্ট ও বার্ধক্যজনিত কারণে গুরুতর অবস্থায় জরুরিভাবে ভর্তি করানো হয়। অথচ কনসালটেন্ট আসছে সন্ধ্যা ৭টায়। তাহলে চিকিৎসা করাবে কে আর কখন?’ 

এ বিষয়ে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপারেশনের আগেই এনেস্থেসিয়া দেওয়ার পর সাডেনলি অ্যাটাক করেছে। পরে সে মারা গেছে।’ এ কথা বলার পরই আসছি বলে পালিয়ে যান তিনি। পরে সহকারী ম্যানেজার মো. মাহবুব আলমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা জানার ম্যানেজারের কাছ থেকে জেনে নেন।’ এটা বলেই তিনিও খালি অ্যাম্বুলেন্সে উঠে চলে যান। 

অন্য দক ওই হাসপাতালের পরিচালক বি এম জহিরুল হক ওরফে মিথু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি দেখছি বলেই তিনি ফোন রেখে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্যকলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত