Ajker Patrika

জিনের বাদশার এক সিমে ৬ মাসে অর্ধকোটি টাকা লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫৮
জিনের বাদশার এক সিমে ৬ মাসে অর্ধকোটি টাকা লেনদেন

মধ্যরাতে হঠাৎ অচেনা নম্বর থেকে কল। রিসিভ করতেই ভেসে আসে মধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত। কথা চলে দুনিয়া ও আখিরাতে পাপ-পুণ্যের নানান ইমোশনাল বিষয় নিয়ে। এভাবেই কথা এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রলোভন দেখানো হয় কাড়ি কাড়ি টাকা ও হাঁড়ি ভর্তি স্বর্ণালংকারের। এভাবেই জিনের বাদশা সেজে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু যুবক। 

সম্প্রতি তিনজনকে জিনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারের পর সিআইডি জানতে পারে, তাদের একজনের ব্যবহৃত এক সিমেই লেনদেন হয়েছে অর্ধকোটি টাকা। এসব টাকা শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সিআইডির ধারণা, তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করলে লেনদেনের এই পরিমান হয়তো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। তিনি জানান, একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে জিনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণাকারী তিনজন ধরা পড়ে। 

গ্রেপ্তাররা হলেন-মো. লুৎফর রহমান (২৬), আব্দুল গফফার (৩০) ও মো. শামীম (২৬)। তাদের সবার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। সেখান থেকে সারা দেশের টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নম্বরে কল দিয়ে প্রতারণা করত। 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্ত ধর বলেন, ‘আব্দুল কাদের নামের একজন ভুক্তভোগীর দায়েরকৃত অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করি। গ্রেপ্তারের পর তারা জানায়, গত দুই-তিন বছর ধরে তারা জিনের বাদশা সেজে দেশের বিভিন্ন মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করত। এভাবে তারা শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’ 

মুক্ত ধর বলেন, ‘আমরা তাঁদের গ্রেপ্তারের পর শুধুমাত্র একজনের ব্যবহৃত সিম থেকে অর্ধ কোটি টাকা লেনদেনের স্পষ্ট দলিল পেয়েছি। কিন্তু তাদের আরও যারা রয়েছেন তাদের মাধ্যমে কত টাকা লেনদেন হয়েছে তা এখনো জানতে পারিনি। অধিকতর তদন্তে তাও স্পষ্ট হবে, এটা আমাদের বিশ্বাস।’ 

জিনের বাদশা সেজে কীভাবে প্রতারণা করত সে বিষয়ে মুক্ত ধর বলেন, তারা রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময়কে বেছে নেয়। এরপর এ সময়ে তাদের সংগৃহীত নম্বরে কল দেয়। যদি কেউ কল ধরে তাহলে শুরুতে ইসলামিক বিভিন্ন কথা-বার্তা দিয়ে আলাপ শুরু করে একপর্যায়ে দিন দুনিয়া ও আখিরাতের পাপ-পুণ্যের ভয় দেখিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে। এরপর একপর্যায়ে ভিকটিম কিছুটা নমনীয় হয়ে গেলে তাকে স্বর্ণালংকার ও কাড়ি কাড়ি টাকার প্রলোভন দেখানো হয়। 

মুক্ত ধর আরও বলেন, প্রথমে প্রলুব্ধ করার পর তারা ভিকটিমকে জানায়, তিন হাজার টাকা দিতে হবে গরিব মিসকিনদের খাওয়ানোর জন্য। তাদের খাওয়ালে স্বর্ণালংকার পাওয়া যাবে। না খাওয়ালে পাওয়া যাবে না। একপর্যায়ে ভিকটিম এই টাকা দিলে পরে নানান ছলছাতুরি করে আরও টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবেই তাদের প্রতারণার চলতো। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে রাজবাড়ীর কালুখালী থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। 

এ বিষয়ে ভিকটিম আব্দুল কাদের বলেন, ‘একদিন ভোররাতে আমাকে কল দিয়ে একজন বলে, আমি জিনের বাদশার অ্যাসিস্ট্যান্ট। তোমার সঙ্গে জিনের বাদশা কথা বলবে। এটা বলে জিনের বাদশাকে ফোন ধরিয়ে দেয়। পরে জিনের বাদশা আমাকে নানান কথা বলে একপর্যায়ে বলে আমার খাটের নিচে সাতটা হাঁড়ি থাকবে। তিনটাতে ভর্তি থাকবে স্বর্ণালংকার, আর বাকি চারটাতে থাকবে কাঁচা টাকা। এসব বলে প্রথমে আমার কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা নেয়। এভাবে আমার কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে আমি বুঝতে পারি এটা প্রতারণা। তখন পুলিশকে জানাই। তারা আমাকে শুরু থেকে বলেছিল কাউকে এটা জানালে স্বর্ণালংকার কিছুই পাব না। যে কারণে এ বিষয়ে আমার স্ত্রীও জানত না।’ 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত