Ajker Patrika

রোহিঙ্গাদের সাহায্যের আড়ালে জঙ্গি তৎপরতা, গ্রেপ্তার ৩ 

নিজস্ব প্রতিনিধি
রোহিঙ্গাদের সাহায্যের আড়ালে জঙ্গি তৎপরতা, গ্রেপ্তার ৩ 

ঢাকা: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা ও জাকাত সংগ্রহের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দান ও মানবিক সাহায্যের আড়ালে উগ্রবাদী মতাদর্শ ও জঙ্গিবাদে ধাবিত করতেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের তিন সদস্য সাইয়েদ তাইমিয়া ইবরাহীম ওরফে আনোয়ার, মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহান ও মো. ফয়জুল মোরসালিন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে গতকাল শনিবার তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ।

আজ রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃত আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সম্পর্কে এসব কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আসাদুজ্জামান। 

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল তারা রামপুরা এলাকায় একত্র হয়ে যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসির বিশেষ টিম আগে থেকে অবস্থান নেয় এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করে।’ 

রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে কীভাবে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা কাজ করল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনকল্যাণমূলক কাজ বা চ্যারিটির নামে দেশ ও বিদেশ থেকে সাদকাহ ও জাকাতের নামে অর্থ সংগ্রহ করে সাহায্য দেওয়ার  নামে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করে। সাহায্য দেওয়ার  পাশাপাশি দাওয়াত কার্যক্রম পরিচালনা করত।’ 

এ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গাকে সংগঠনের সঙ্গে তারা যুক্ত করতে পেরেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির ডিআইজি বলেন, ‘আমরা তাদের গতকালই গ্রেপ্তার করেছি। তারা ওই এলাকায় কার মাধ্যমে গিয়েছিল, কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এসব কিছু রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কিছু তথ্য দিয়েছে তার ভিত্তিতে পরবর্তী অপারেশন করা হবে।’ 

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তাইমিয়া ইবরাহীম ওরফে আনোয়ার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি শিক্ষা কোর্সে অধ্যয়ন করছিলেন। সে ২০১৫ সাল থেকে এই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। ২০১৬ সাল থেকে তিনি সেলের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহান ২০১৬ সাল থেকে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং ২০১৭ সালে কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকায় তিন মাস কাজ করেছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দান, সদকা ও মানবিক সাহায্য দেওয়ার  আড়ালে রোহিঙ্গাদের উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার করার জন্য দীর্ঘদিন অবস্থান করে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছিল। ফয়জুল মোরসালিন ঢাকার একটি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে বিআইইউবিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে অধ্যায়ন করছিল।’ 

সিটিটিসি প্রধান উপপুলিশ মহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সংগঠনটি বর্তমানে কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা জানিয়েছে। সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা চালিয়ে সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে তারা ৩ / ৫ জনের গোপন সেল বা মডিউলের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরা কাট আউট পদ্ধতিতে সংগঠনে রিক্রুট হয়। ফলে ভিন্ন ভিন্ন সেলের সদস্যরা কেউ কাউকে চিনে না। গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন প্রকার এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে নিজেরা যোগাযোগ করত।’ 

গ্রেপ্তারকৃতদের আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কানেকশন নেই। এছাড়া জঙ্গিদের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আছে।’ 

গ্রেপ্তারকৃতদের নামে রামপুরা থাকায় একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত