Ajker Patrika

১০০ কোটি টাকার জমি কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেই

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
১০০ কোটি টাকার জমি কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেই

চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড়। এখানে ২৭ কাঠার একটি জমি প্রায় ৯৪ কোটি টাকায় ক্রয় করেছিল কর্ণফুলী গ্যাস (কেজিডিসিএল)। উদ্দেশ্য ছিল সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা। কিন্তু জমি কেনার ৬ বছরেও কোনো ভবন নির্মাণ করতে পারিনি কর্তৃপক্ষ। অথচ ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতাই সম্পন্ন হয়েছে। রয়েছে ৩৭ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদনও। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন জমিটিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হলে কোম্পানির ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় হতে পারত। দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকায় এখন রাতে মাদকের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে জায়গাটি।

২০১৭ সাল থেকে কেজিডিসিএলের চারজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তন হয়। কিন্তু জায়গাটির উন্নয়নের বিষয়ে কেউ পদক্ষেপ নেননি। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রত্যেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, কেউ এখনো উদ্যোগ নেননি। কী কারণে ভবন নির্মাণ হচ্ছে না, সে বিষয়েও স্পষ্ট উত্তর নেই কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষের। এতে হতাশা বিরাজ করছে কোম্পানিতে কাজ করা কর্মচারীদের মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হলে অনেক কর্মচারী লটারির মাধ্যমে দোকান পেতেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভবন থেকে অর্জিত আয় কোম্পানির কোষাগারে জমা হত। এই আয় থেকেই বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেওয়া যেত। এতে সরকারের ওপর চাপও কম পড়ত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ৬ বছরেও ভবন নির্মাণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এটি খুবই হতাশাজনক।

সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, জমিটি ক্রয় করার উদ্দেশ্যে ছিল অফিসের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার। টাকার সংকট থাকলে, ঋণ নিয়ে পুরো ভবন নির্মাণ করা যেত। ভবন নির্মাণ শেষে খুব সহজে ঋণ পরিশোধ করা যেত। এত বছরেও ভবন নির্মাণ না হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, কোম্পানির ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে শ্রমিক–কর্মচারী সংসদ (সিবিএ) ও কেজিডিসিএল অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন জমি ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি তুলে আসছিল। ওই সময় দায়িত্ব ছিলেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরী। তিনি সবার দাবির মুখে জমি ক্রয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য একাধিকবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন তিনি। 

এ সংক্রান্ত একটি কমিটি যাচাই-বাছাই করার পর কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপকদের সমন্বয়ে গঠিত মোট ২১ জন কর্মকর্তার টিম জমিটি ক্রয় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন। এরপর ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর জিইসি কনভেনশন সেন্টার ও ইউনেসকো সেন্টারের মাঝামাঝি ২৭ কাঠা পরিমাণের জায়গাটি ক্রয় করে কেজিডিসিএল। রেজিস্ট্রেশনসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা দাম পড়ে জমিটির।

সরেজমিন দেখা যায়, জিইসি মোড়ের প্রধান সড়কের পাশেই জমিটির অবস্থান। এর পাশে জিইসি কনভেনশন সেন্টার ও ইউনেসকো সেন্টার। ৬ বছর ধরে খালি পড়ে থাকায় রাত হলেই মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। চোর, ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে এখন জায়গাটি। 

নথিপত্র বলছে, জমিটি ক্রয় করা হয় হাজী ইউনুস নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে। রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত প্রতি কাঠার দাম পড়ে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২৭ কাঠার দাম পড়ে রেজিস্ট্রেশনসহ ১০০ কোটি টাকা। জমিটিতে ৩৭ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) অনুমোদন রয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর, বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রও রয়েছে।

জিইসি মোড়ের বাণিজ্যিক ভবন যেমন ইকুয়েটি প্লাজার বর্তমান বাজার দর প্রতি বর্গফুট ৮০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে এই জায়গার ওপরে ভবন নির্মাণ করা হলে সরকারের প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় হত। 

সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়া কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল ইসলাম অবশ্য এখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত কোটি টাকার সম্পদ আমরা ব্যবহার করতে পারছি না, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আমার সময়ের মধ্যে জায়গাটিতে বাণিজ্যিক ভবন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করল সরকার

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বোঝার ভুলের খেসারত দিচ্ছে ভারত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত