Ajker Patrika

রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলা: ১০ বছরেও হয়নি বিচার

শিপ্ত বড়ুয়া, রামু (কক্সবাজার) 
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ০৫
রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলা: ১০ বছরেও হয়নি বিচার

১০ বছর পেরিয়ে গেলেও রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৮ মামলার একটিরও বিচার শেষ হয়নি। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্ম অবমাননার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়ানোকে কেন্দ্র করে রামু উপজেলার ১৯টি প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির ও প্রায় ২৬টি বসতঘরে একসঙ্গে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। পাশাপাশি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় মন্দির ও বৌদ্ধদের ঘরবাড়ি। 

ওই সাম্প্রদায়িক হামলার ১০ বছরে রামুতে বৌদ্ধ-মুসলিম সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি ফিরলেও মুছে যায়নি মনের ক্ষত। ওই দিনের হামলার ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা করা হয়েছিল। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর আপসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হলেও ১৮টি মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে আটকে গেছে মামলার বিচারকাজ। 

জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের বেশ কিছু ছবি-ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকলেও অভিযোগপত্রে অনেকের নাম বাদ পড়েছে। রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় করা মামলার মূল অভিযুক্তদের বেশির ভাগ মানুষ জামিনে, কেউ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে বেরিয়ে গেছেন। এই সাম্প্রদায়িক হামলার মূল অভিযুক্ত রামু ফকিরা বাজারের ফারুক কম্পিউটারের ফারুক ও আলিফ মুক্তাদিলও জামিনে রয়েছেন। 

বর্তমানে নান্দনিকতায় সেজেছে রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহারটিশুধু তাই নয়, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর যে বৌদ্ধ তরুণ উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে কোরআন অবমাননার ছবি ছড়ানোর গুজব রটেছিল, আজ অবধি নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। গত ১০ বছর ধরে উত্তম বড়ুয়ার কোনো খোঁজ পায়নি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। 

প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বরের বিভীষিকাময় কালো রাতকে স্মরণ করতে স্থানীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠন আয়োজন করে সংঘদান ও শান্তি শোভাযাত্রার। প্রতিবছর এই দিনে বিচারের দাবিতে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হন। 

সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার রামু মৈত্রী বিহারে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত বৌদ্ধমন্দিরগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে, রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহারে পুড়ে যাওয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বই, বুদ্ধমূর্তি ও প্রাচীন তৈজসপত্র সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি নান্দনিকতায় সেজেছে বৌদ্ধমন্দিরটি। 

এ বিষয়ে ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ পরিবারের এক শিক্ষক সুমথ বড়ুয়া বলেন, ‘নিজের চোখের সামনে নিজেদের ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাট হতে দেখেছি। সেদিন পাশের অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিবার আবার আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। কোনো কিছুরই বিচার এই গত ১০ বছরে হলো না। এই সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হলে দেশে অন্য হামলার ঘটনা হয়তো ঘটত না। আজও রাতে ওই দিনের কথা মনে হলে আঁতকে উঠি।’ 

রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহারে পুড়ে যাওয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বই, বুদ্ধমূর্তি ও প্রাচীন তৈজসপত্র সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছেসীমাবিহারের আবাসিক ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পর বর্তমানে মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে সম্প্রীতি ফিরেছে। তবে আমরা আশাবাদী হতে চাই, এ ঘটনার বিচারিক কার্যক্রম রাষ্ট্র সমাপ্ত করবে। আমরা যার যার অবস্থান থেকে সুন্দরভাবে অবস্থানের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া আব্বু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি মামলার বিচারও এখনো হয়নি। আদৌ এসব মামলার বিচার হবে কি না, সন্দেহ আছে। যারা মন্দির হামলায় জড়িত, চোখের সামনে তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ 

হামলার ঘটনায় হওয়া ১৮ মামলার পরিস্থিতি জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাক্ষীর অভাবেই মূলত মামলাগুলো ঝুলে আছে। এসব মামলার বেশির ভাগ সাক্ষী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। মামলার দিনে অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন না।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত