Ajker Patrika

পরিত্যক্ত কারাগার যখন দক্ষ জনশক্তির কারখানা

মারুফ কিবরিয়া, নাটোর থেকে ফিরে
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৩৮
পরিত্যক্ত কারাগার যখন দক্ষ জনশক্তির কারখানা

বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার আসামিদের রাখার জায়গা কারাগার। সেখানেই এখন চলছে সৃজনশীল কাজের চর্চা। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তরুণেরা, আয় করছেন লাখ টাকা। কারাগার যেন দক্ষ জনশক্তি তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। নাটোরের শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের গল্প এটি। পরিত্যক্ত একটি কারাগার সংস্কার করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এখানে তরুণেরা ওয়েবসাইট ডিজাইন, ওয়েব অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, লোগো ডিজাইন, টি-শার্টের ওপর লেখা ডিজাইন, গ্রাফিকস ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

নাটোরের দিঘাপতিয়া কলেজের সাইফুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছি। আমি ওয়েব ডিজাইনার ও ডেভেলপার। দেশের ও বিদেশের অর্ডার পাচ্ছি। প্রতি মাসেই ২৫ হাজারেরও বেশি আয় হয়।’ আরেক তরুণ হানিফ বললেন, ‘আমি পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করি। কোনো কোনো মাসে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাটোরে পুরোনো জেলখানা মেরামত করে সেখানে গড়ে তোলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণকেন্দ্র। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক ৭৯৮ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।

শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, এখানে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশিক্ষণ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে আগ্রহী তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাস্তবভিত্তিক ও প্রয়োজনীয় কারিকুলাম, প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবেশন সুবিধার মাধ্যমে এখান থেকে তৈরি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সার। পরিত্যক্ত জেলখানার চারটি ভবন মেরামত ও আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, ‘ওই জেলখানায় আমিও বন্দী ছিলাম। রাজনৈতিক কারণে বিএনপি-জামায়াত সরকার আমাকে বন্দী রেখেছিল। এখন পুরোনো সেই জেলখানা বিশ্ব বাতায়নকেন্দ্র। সেখানে শত শত ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আইটি খাতে কাজ করছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তাঁদের দূরদর্শিতার কারণে আমরা এখন একটি মেধাভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করছি।’

সিংড়ায় টেলিমেডিসিন সেবায় অভূতপূর্ব সাড়া নাটোরের সিংড়া উপজেলায় কয়েক বছর আগেও প্রায় ৫ লাখ মানুষের জন্য কোনো চোখের চিকিৎসক ছিল না। চোখের সমস্যা হলেই মানুষকে ছুটতে হতো রাজশাহী কিংবা ঢাকা। তবে একটি উদ্যোগ বদলে দিয়েছে সেই চিত্র। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন প্রায় ২০ জন চোখের রোগী সেবা পাচ্ছেন। এখানে আরেকটি উদ্যোগে বদলে গেছে পুরো স্বাস্থ্যসেবার চিত্র। সেটি হলো, ‘টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্যসেবা’। মূলত ডিজিটালপদ্ধতিতে ভিডিও কনফারেন্সে রোগী ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পাচ্ছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।

সিংড়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. আমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই সেবাগুলো ডিজিটালপদ্ধতিতে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে আমরা সুফলও পাচ্ছি। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ফলে খুব সহজেই দেশের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। আমরা তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। এ কার্যক্রমটিতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবংকার্যালয়ের এটুআই প্রজেক্ট।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত