Ajker Patrika

রবাদ্দের অভাবে আটকে আছে সংস্কারকাজ

বরুন কান্তি সরকার, নাসিরনগর 
রবাদ্দের অভাবে আটকে আছে সংস্কারকাজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ঐতিহ্যবাহী হরিপুর জমিদার বাড়ি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুই গম্বুজের তিনতলা সুবিশাল বাড়িটি দেখতে হরিপুরে আসেন। সংস্কারের অভাবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িটির বিভিন্ন স্থাপনা ও কারুকার্য। ঐতিহ্য রক্ষার্থে বাড়িটিকে দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বলছে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সংস্কারকাজ বন্ধ আছে।

উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে তিতাস নদের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত জমিদার বাড়িটি। এই বাড়িতে মধুমালতি, ঘেটুপুত্র কমলা, নাইওরীসহ অসংখ্য ছবি চিত্রায়িত হয়েছে। বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও কারুকাজ রুচিশীল যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করে। বর্ষা মৌসুমে বাড়িটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায় বহুগুণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৭৫ বছর আগে প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বাড়িটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে ও ২০১৯ সালের প্রথম দিকে দুই ধাপে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর; কিন্তু বরাদ্দ কম থাকায় সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার আগেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির কোথাও কোথাও খসে পড়ছে ইটের গাঁথুনি, পলেস্তারা। রান্নাবান্নার ধোঁয়ায় কালো হয়ে গেছে লাল দেয়ালগুলো। বাড়িটির অনেক স্থানে ক্ষয়ে গেছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। মানুষের মলমূত্র আর হাঁস-মুরগির বিষ্ঠায় চারদিকে দুর্গন্ধ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি জমিদারবাড়ি।

দেখাশোনা, নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটিতে বর্তমানে দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ছয়জন আনসার সদস্য কর্মরত।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায়চৌধুরী নির্মিত এই বাড়িটি বর্তমানে ২৩টি পরিবার অবৈধভাবে দখল করে আছে। ইতিমধ্যে ১০টি পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হরিপুর মিলনপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় তাঁরা সেখানে চলে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক সঞ্জিত দাস বলেন, দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়িটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায়। দর্শনীয় এই স্থানটির সংস্কারকাজ শেষ হলে আশা করি এটি দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফারুক মিয়া বলেন, হরিপুর রাজবাড়ী আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংস্কারকাজ শুরু করে বরাদ্দের কারণে তা আবার বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর সংস্কারকাজ চলমান আছে। সময়, অর্থ, সুযোগ ও পর্যাপ্ত বরাদ্দের কারণে সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে হরিপুর রাজবাড়ীর সংস্কারকাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত