Ajker Patrika

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০০ নিরাপত্তাকর্মী, তবু অনিরাপদ ক্যাম্পাস

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২: ৪৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০০ নিরাপত্তাকর্মী, তবু অনিরাপদ ক্যাম্পাস

চুরি, ছিনতাই, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। শিক্ষা ও গবেষণার স্বার্থে নিরিবিলি পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি থাকলেও অপরাধী, ভবঘুরে ও ভাসমান লোকজনের অবাধ বিচরণে দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে ঢাবি ক্যাম্পাস। অথচ হল, আবাসিক এলাকাসহ পুরো ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৭০০ নিরাপত্তাপ্রহরী নিয়োজিত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

এত নিরাপত্তাকর্মী থাকার পরও প্রতিনিয়ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে ক্যাম্পাসে। সর্বশেষ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের বাসভবন এলাকা এবং টিএসসি থেকে দুই নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপাচার্যের বাসভবন এলাকায় নবজাতক ফেলে যাওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করলেও অন্য নবজাতক ফেলে যাওয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায়নি। প্রক্টর অফিস এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর থেকে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২১টি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ৪টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের সামনের এলাকা, কলাভবন, টিএসসিসহ বিভিন্ন জায়গায় সে সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ও উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায়ও কাউকে আটক করতে পারেনি প্রশাসন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রক্টর অফিসের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে যত্রতত্র পার্কিং হয়, নবজাতকের লাশ ফেলে যায়, ককটেল বিস্ফোরণ হয়—এ নিয়ে কাউকে আটক করা যায়নি। তবে উপাচার্যের বাসভবনে নবজাতক ফেলে যাওয়া ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এভাবে প্রতিটি ঘটনাকে গুরুত্ব দিলে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তাপ্রহরীদের পোশাকের (ইউনিফর্ম) জন্য বছরে ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই টাকা দিয়ে তারা নিরাপত্তাকর্মীর জন্য নির্ধারিত পোশাক কিনবে।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাড়া অন্য কোনো হল, আবাসিক এলাকা ও একাডেমিক ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা সেই নির্দিষ্ট পোশাক পরেন না।

এ নিয়ে জানতে চাইলে কলাভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পোশাক পরলে একটু কেমন কেমন লাগে। তাই পরা হয় না। নিজেকে খুবই ছোট মনে হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার নিরাপত্তাকর্মীরা এস্টেট অফিসের অধীনে। এস্টেট অফিসের অধীনে নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে ১৩৬ জন। নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের দেখভাল করার কথা সিকিউরিটি অফিসার ও সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসারের। এ দুটি পদ বেশ কয়েক বছর যাবৎ খালি পড়ে আছে। লোকবল না থাকায় এস্টেট অফিসের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী এস্টেট ম্যানেজার মো. আলী আশরাফ। নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা শুধু আবাসিক এলাকাগুলো দেখি। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

কয়েক দিন আগে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী টিউশনে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে চারুকলা অনুষদের সামনে গেলে এক ভবঘুরে তাঁর হাতে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খাঁমচি দেয়। এতে সেই শিক্ষার্থী প্রচণ্ড ভয় পান। আজকের পত্রিকাকে ওই শিক্ষার্থী বলেন, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এভাবে চলতে থাকলে কোনো মা-বাবা তাঁর সন্তানকে এখানে পড়াতে পাঠাবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা, অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, ভাসমান লোকদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও বহিরাগতদের প্রবেশ ও ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে তিন শিফটে ছয়-সাতজন করে দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা। তারপরেও এসব ঠেকাতে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ঠেকাতে শাহবাগ, নীলক্ষেত (গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণ গেট), শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে ও দোয়েল চত্বর থেকে ক্যাম্পাস অভিমুখে পাঁচটি সিকিউরিটি সার্ভিল্যান্স (নিরাপত্তাচৌকি) বসিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের ১৬ জুন সেই নিরাপত্তাচৌকিগুলোর উদ্বোধন হলেও রাসেল টাওয়ারের সামনে ও দোয়েল চত্বর এলাকায় নিরাপত্তাপ্রহরী বসাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তাচৌকিতে যারা অবস্থান করবে, তাদের কাজ কী, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো নীতিমালা নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের কাজ কী হবে, তা নিয়ে নীতিমালা তৈরি করা হবে। আমরা এটা নিয়ে ভাবছি, পাশাপাশি দুটি চৌকিতে লোক বসানোর কাজও চলমান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত