৪৩ বিমা কোম্পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দেশের বিমা কোম্পানিগুলো সময়মতো গ্রাহকের বিমা দাবি শোধ করতে না পারলেও খরচের বেলায় কার্পণ্য করে না। তাই খরচে লাগাম টানতে বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারণ করে দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ); কিন্তু তা-ও মানছে তারা। ২০২৪ সালে ৪২ বিমা কোম্পানি অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেছে, যার পরিমাণ ৮৩৩ কোটি টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বড় অংশই লোপাট হয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ ২০ জীবনবিমা কোম্পানি ১৫৯ কোটি এবং ২২টি সাধারণ বিমা কোম্পানি ৬৭৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। কমিশন প্রদান, উন্নয়ন সভা, বাড়িভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিজ্ঞাপন খরচ, কর্মকর্তাদের দেশ-বিদেশে ভ্রমণ, গাড়ি কেনা ও মেরামত, জ্বালানি, আপ্যায়ন, ড্রাইভার খরচসহ বিভিন্ন খাতে এ ব্যয় দেখানো হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলেমিশে লাগামহীন ব্যয় দেখিয়ে প্রিমিয়ামের অর্থ লোপাট করেন। বেশ কয়েকটি বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) অতিরিক্ত খরচের কথা স্বীকারও করেছেন। তবে তাঁদের দাবি, এ খরচ লোপাট নয়, প্রয়োজনের তাগিদেই কিছু অর্থ বেশি খরচ হয়েছে।
আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা খাতে ৪৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করেছে।
জানতে চাইলে কোম্পানির সিইও কামরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কোম্পানিটিতে জয়েন করেছি কয়েক দিন হলো, তবে শুনেছি এখানে আগে অনিয়ম হয়েছে।’
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশন। কোম্পানিটি ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা সীমার অতিরিক্ত খরচ করেছে। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স ১৫ কোটি ৭৫৫ লাখ, এনআরবি ইসলামিক লাইফ ১১ কোটি ৪২ লাখ এবং সানলাইফ ইনস্যুরেন্স ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে।
অন্যদিকে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি ২০২৪ সালের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ১১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানির সিইও জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারনির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছি, যা দেখিয়েছি তা-ই সঠিক। খরচ এর চেয়ে কমানো অসম্ভব ব্যাপার।’ অন্য কোম্পানিগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাঁরা করেছেন তাঁরাই জানেন।
সীমার অতিরিক্ত খরচ করা নন-লাইফ কোম্পানির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কেন্টাইল ইসলামী ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটি গত বছর ৯৩ কোটি ৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স ৯১ কোটি ৫৩ লাখ, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স ৬৩ কোটি ৬৯ লাখ এবং দেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স ৪৩ কোটি ১ লাখ টাকা বাড়তি ব্যয় করে তালিকায় পর্যায়ক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
অতিরিক্ত খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক সিইও এবং বিমা বিশেষজ্ঞ এস এম জিয়াউল হক বলেন, ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার কারণে বিমা কোম্পানিতে এই অনিয়ম হচ্ছে।
প্রায় একই মতামত প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে, নিজের স্বার্থেই কোম্পানিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে।
পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্সের সিইও সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন, কোম্পানিতে অডিট সিস্টেম থাকা দরকার, নিয়মিত অডিট হলে এই অবস্থা হতো না।
বিমা আইন, ২০১০ এবং বিমা বিধিমালা অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ৩৬ জীবনবিমা কোম্পানি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারত। অথচ কোম্পানিগুলো ব্যয় দেখিয়েছে ৩ হাজার ৮৫২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৫২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বেশি খরচ করেছে। তবে একই সময়ে ১৬ কোম্পানি নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে ১৬৬ কোটি টাকা কম খরচ করেছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল লাইফ একাই ৯০ কোটি টাকা খরচ কম করেছে।
জীবনবিমা কোম্পানির মধ্যে ২০২৪ সালে হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা অনুমোদনহীন ব্যয় করেছে। একইভাবে চার্টার্ড লাইফ ৬ কোটি ৮৭ লাখ, সানফ্লাওয়ার লাইফ ৬ কোটি ১১ লাখ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ৫ কোটি ৫৯ লাখ, গোল্ডেন লাইফ ৪ কোটি ৩৮ লাখ, জেনিথ ৪ কোটি ৩৩ লাখ, যমুনা লাইফ ৪ কোটি ২ লাখ, সান্তা লাইফ ৩ কোটি ৭০ লাখ, ডায়মন্ড লাইফ ৩ কোটি ২৬ লাখ, মেঘনা লাইফ ৩ কোটি ২৫ লাখ, স্বদেশ লাইফ ২ কোটি ৬৫ লাখ, লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ ২ কোটি ২০ লাখ, বায়রা লাইফ ১ কোটি ১৫ লাখ, বেস্ট লাইফ ১ কোটি ৯ লাখ এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স ১ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করে।
২০২৪ সালে ৪৬ সাধারণ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ১ হাজার ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ২৩ টাকা। এই সময়ে তারা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে ১ হাজার ৩১১ কোটি ১৯ লাখ ১১ হাজার ২৩৮ টাকা। অর্থাৎ সার্বিকভাবে ২৬৫ কোটি টাকা কম হয়েছে। ২৪টি কোম্পানি ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম করেছে।
অন্যদিকে একই খাতের ২২টি কোম্পানি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে লুটপাট করেছে। এসব কোম্পানির মধ্যে অগ্রণী ইনস্যুরেন্স ৩ কোটি ৩৭ শতাংশ, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল দশমিক ৮৭ শতাংশ, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ৯১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বাংলাদেশ জেনারেল ৩৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, দেশ জেনারেল ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ, ঢাকা ইনস্যুরেন্স ২০ দশমিক ২৬ শতাংশ, এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স ১১৫ শতাংশ, ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ ৩৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স ৬৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ইসলামী ৯৩ দশমিক ৮ শতাংশ, নিটল ইনস্যুরেন্স ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, পিপলস্ ইনস্যুরেন্স ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রাইম ইনস্যুরেন্স ১ দশমিক ৪২ শতাংশ, প্রভাতি ইনস্যুরেন্স ২ দশমিক ৬ শতাংশ, রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ, রূপালী ইনস্যুরেন্স ১ দশমিক ৬১ শতাংশ, সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স দশমিক ৬৬ শতাংশ, সাউথ এশিয়া ইনস্যুরেন্স দশমিক ৮৯ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইনস্যুরেন্স ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, তাকাফুল ইসলামী ইনস্যুরেন্স ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।
বিমা খাতের স্বার্থেই বিমা কোম্পানিকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন বিমা মালিক ও সিইওদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এ এস এম নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, বিমা কোম্পানি দাবি পূরণের মাধ্যমে বিমা খাতের ভাবমূর্তি বাড়াতে হবে। এতে কম খরচে ব্যবসা বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম জাহীদ বলেছেন, বিমা খাতে তিনটি বড় সংকট দেখা দিয়েছে—কোম্পানিগুলোর নৈতিক বিপত্তি, তথ্যের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা। অনেক বিমা কোম্পানি অযথা ব্যয় করে গ্রাহকের অর্থ লুটপাট করছে। এ অবস্থায় আইডিআরএর কঠোর নজরদারি ও সীমা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আগেভাগে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ঝুঁকি কমাতে গিয়ে গ্রাহকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে গ্রাহকের আস্থা ভেঙে পড়বে, যা বিমা খাতের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
আইডিআরএর মিডিয়া ও যোগাযোগ পরামর্শক (মুখপাত্র) সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করায় ২০২৩ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়েছে। ২০২৪ সালেও যারা আইন লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের বিমা কোম্পানিগুলো সময়মতো গ্রাহকের বিমা দাবি শোধ করতে না পারলেও খরচের বেলায় কার্পণ্য করে না। তাই খরচে লাগাম টানতে বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারণ করে দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ); কিন্তু তা-ও মানছে তারা। ২০২৪ সালে ৪২ বিমা কোম্পানি অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেছে, যার পরিমাণ ৮৩৩ কোটি টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বড় অংশই লোপাট হয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ ২০ জীবনবিমা কোম্পানি ১৫৯ কোটি এবং ২২টি সাধারণ বিমা কোম্পানি ৬৭৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। কমিশন প্রদান, উন্নয়ন সভা, বাড়িভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিজ্ঞাপন খরচ, কর্মকর্তাদের দেশ-বিদেশে ভ্রমণ, গাড়ি কেনা ও মেরামত, জ্বালানি, আপ্যায়ন, ড্রাইভার খরচসহ বিভিন্ন খাতে এ ব্যয় দেখানো হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলেমিশে লাগামহীন ব্যয় দেখিয়ে প্রিমিয়ামের অর্থ লোপাট করেন। বেশ কয়েকটি বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) অতিরিক্ত খরচের কথা স্বীকারও করেছেন। তবে তাঁদের দাবি, এ খরচ লোপাট নয়, প্রয়োজনের তাগিদেই কিছু অর্থ বেশি খরচ হয়েছে।
আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা খাতে ৪৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করেছে।
জানতে চাইলে কোম্পানির সিইও কামরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কোম্পানিটিতে জয়েন করেছি কয়েক দিন হলো, তবে শুনেছি এখানে আগে অনিয়ম হয়েছে।’
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশন। কোম্পানিটি ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা সীমার অতিরিক্ত খরচ করেছে। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স ১৫ কোটি ৭৫৫ লাখ, এনআরবি ইসলামিক লাইফ ১১ কোটি ৪২ লাখ এবং সানলাইফ ইনস্যুরেন্স ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে।
অন্যদিকে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি ২০২৪ সালের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ১১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানির সিইও জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারনির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছি, যা দেখিয়েছি তা-ই সঠিক। খরচ এর চেয়ে কমানো অসম্ভব ব্যাপার।’ অন্য কোম্পানিগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাঁরা করেছেন তাঁরাই জানেন।
সীমার অতিরিক্ত খরচ করা নন-লাইফ কোম্পানির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কেন্টাইল ইসলামী ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটি গত বছর ৯৩ কোটি ৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স ৯১ কোটি ৫৩ লাখ, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স ৬৩ কোটি ৬৯ লাখ এবং দেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স ৪৩ কোটি ১ লাখ টাকা বাড়তি ব্যয় করে তালিকায় পর্যায়ক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
অতিরিক্ত খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক সিইও এবং বিমা বিশেষজ্ঞ এস এম জিয়াউল হক বলেন, ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার কারণে বিমা কোম্পানিতে এই অনিয়ম হচ্ছে।
প্রায় একই মতামত প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে, নিজের স্বার্থেই কোম্পানিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে।
পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্সের সিইও সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন, কোম্পানিতে অডিট সিস্টেম থাকা দরকার, নিয়মিত অডিট হলে এই অবস্থা হতো না।
বিমা আইন, ২০১০ এবং বিমা বিধিমালা অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ৩৬ জীবনবিমা কোম্পানি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারত। অথচ কোম্পানিগুলো ব্যয় দেখিয়েছে ৩ হাজার ৮৫২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৫২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বেশি খরচ করেছে। তবে একই সময়ে ১৬ কোম্পানি নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে ১৬৬ কোটি টাকা কম খরচ করেছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল লাইফ একাই ৯০ কোটি টাকা খরচ কম করেছে।
জীবনবিমা কোম্পানির মধ্যে ২০২৪ সালে হোমল্যান্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা অনুমোদনহীন ব্যয় করেছে। একইভাবে চার্টার্ড লাইফ ৬ কোটি ৮৭ লাখ, সানফ্লাওয়ার লাইফ ৬ কোটি ১১ লাখ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ৫ কোটি ৫৯ লাখ, গোল্ডেন লাইফ ৪ কোটি ৩৮ লাখ, জেনিথ ৪ কোটি ৩৩ লাখ, যমুনা লাইফ ৪ কোটি ২ লাখ, সান্তা লাইফ ৩ কোটি ৭০ লাখ, ডায়মন্ড লাইফ ৩ কোটি ২৬ লাখ, মেঘনা লাইফ ৩ কোটি ২৫ লাখ, স্বদেশ লাইফ ২ কোটি ৬৫ লাখ, লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ ২ কোটি ২০ লাখ, বায়রা লাইফ ১ কোটি ১৫ লাখ, বেস্ট লাইফ ১ কোটি ৯ লাখ এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স ১ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করে।
২০২৪ সালে ৪৬ সাধারণ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ১ হাজার ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ২৩ টাকা। এই সময়ে তারা ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে ১ হাজার ৩১১ কোটি ১৯ লাখ ১১ হাজার ২৩৮ টাকা। অর্থাৎ সার্বিকভাবে ২৬৫ কোটি টাকা কম হয়েছে। ২৪টি কোম্পানি ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম করেছে।
অন্যদিকে একই খাতের ২২টি কোম্পানি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে লুটপাট করেছে। এসব কোম্পানির মধ্যে অগ্রণী ইনস্যুরেন্স ৩ কোটি ৩৭ শতাংশ, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল দশমিক ৮৭ শতাংশ, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ৯১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বাংলাদেশ জেনারেল ৩৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, দেশ জেনারেল ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ, ঢাকা ইনস্যুরেন্স ২০ দশমিক ২৬ শতাংশ, এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স ১১৫ শতাংশ, ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ ৩৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স ৬৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ইসলামী ৯৩ দশমিক ৮ শতাংশ, নিটল ইনস্যুরেন্স ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, পিপলস্ ইনস্যুরেন্স ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রাইম ইনস্যুরেন্স ১ দশমিক ৪২ শতাংশ, প্রভাতি ইনস্যুরেন্স ২ দশমিক ৬ শতাংশ, রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ, রূপালী ইনস্যুরেন্স ১ দশমিক ৬১ শতাংশ, সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্স দশমিক ৬৬ শতাংশ, সাউথ এশিয়া ইনস্যুরেন্স দশমিক ৮৯ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইনস্যুরেন্স ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, তাকাফুল ইসলামী ইনস্যুরেন্স ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।
বিমা খাতের স্বার্থেই বিমা কোম্পানিকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন বিমা মালিক ও সিইওদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এ এস এম নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, বিমা কোম্পানি দাবি পূরণের মাধ্যমে বিমা খাতের ভাবমূর্তি বাড়াতে হবে। এতে কম খরচে ব্যবসা বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম জাহীদ বলেছেন, বিমা খাতে তিনটি বড় সংকট দেখা দিয়েছে—কোম্পানিগুলোর নৈতিক বিপত্তি, তথ্যের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা। অনেক বিমা কোম্পানি অযথা ব্যয় করে গ্রাহকের অর্থ লুটপাট করছে। এ অবস্থায় আইডিআরএর কঠোর নজরদারি ও সীমা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আগেভাগে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ঝুঁকি কমাতে গিয়ে গ্রাহকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে গ্রাহকের আস্থা ভেঙে পড়বে, যা বিমা খাতের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
আইডিআরএর মিডিয়া ও যোগাযোগ পরামর্শক (মুখপাত্র) সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করায় ২০২৩ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়েছে। ২০২৪ সালেও যারা আইন লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের আর্থিক খাতে বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বহুদিনের সমস্যাগ্রস্ত ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগেরেমিট্যান্সের জোয়ার ও রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি বৈদেশিক লেনদেনের সামগ্রিক চিত্রে স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
৫ ঘণ্টা আগেযমুনা সেতুর বর্তমান রেললাইনের ডেক সংস্কার ও একটি নতুন অ্যানেক্স সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও আইইউটি-ডেভকন জেভির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তির ফলে যমুনা সেতুর ওপরকার যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৮ ঘণ্টা আগেগ্রাহককেন্দ্রিক স্মার্ট ব্যাংকিং সেবা আরও সহজলভ্য করতে এনআরবি ব্যাংক পিএলসি নতুন দুটি উদ্ভাবনী পণ্য বাজারে এনেছে। ‘এনআরবি প্রতিদিন’ ও ‘অটো ফিক্সড লোন’ নামের এই সেবাগুলো আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।
৯ ঘণ্টা আগে