জাহাঙ্গীর আলম
দেড় লক্ষাধিক শাখায় এক শ কোটির বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগৃহীত হয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ভারতীয় ব্যাংকগুলোর কাগজপত্রে এমনই চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য-উপাত্ত। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভয়াবহ।
ইচ্ছেমতো শাখা খুলে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে ভারতের ব্যাংকগুলো। নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে সেই টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে কিছু ‘বাজে’ প্রকল্পে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ গেছে এসব প্রকল্পে। এখন দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ঋণের ৬০ শতাংশই গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে। ২০১৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংককে এ খাদ থেকে উদ্ধার করেছে সরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে মন্দঋণ উদ্ধারের রেকর্ড সন্তোষজনক নয়। অবশ্য ২০১৬ সালে দেউলিয়া আইন করার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত মন্দঋণ উদ্ধার করা গেছে। এ আইনে সম্পদ অবসায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। আর এখন তো ঋণগ্রহীতারা মহামারিতে বিপর্যস্ত। এতে খেলাপি আরও বেড়েছে। সামনের মাসগুলোতে মন্দঋণের চিত্রটি ঊর্ধ্বমুখী হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
শুধু ২০০৫ ও ২০০৯ সালের মধ্যেই করদাতাদের ৩৫ বিলিয়ন ডলার এই ঋণগ্রহীতাদের উদ্ধার কর্মসূচিতে ঢেলেছে সরকার। কিন্তু তাতে তেমন ফল হয়নি। গত বছরের জুলাই মাসে ফিচ রেটিংয়ে বলা হয়েছে, ভারতের পতনোন্মুখ ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করতে চাইলে ২০২২ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের তহবিল জোগান দিতে হবে।
এই ঋণের বদনামের বোঝা কমাতে সরকার আবার পুরোনো কৌশলেই পা বাড়াচ্ছে। আবার তথাকথিত মন্দ ব্যাংকের (ব্যাড ব্যাংক) শরণাপন্ন হচ্ছে সরকার। মন্দঋণ ২৭ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিট পরিচ্ছন্ন করার এ উদ্যোগ অর্থনীতিতে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সেটি পরিষ্কার নয়। কারণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাগজে-কলমে আনুমানিক যে ১০০ বিলিয়ন ডলার মন্দঋণের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, উদ্ধার কর্মসূচির এই লক্ষ্য তার চার ভাগের এক ভাগ মাত্র। ঋণের এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংকোচন ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেই শুধু ব্যাহত করবে না, এটি প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ, এতে ঝুঁকি গ্রহণে নারাজ ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করায় বেসরকারি বিনিয়োগে বড় পতন দেখা দিতে পারে।
ভারতে ‘মন্দ ব্যাংক’ বলতে সম্পদ পুনর্গঠন কোম্পানি বোঝানো হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট মূল্য ধরে মন্দঋণের দায় নেয়। এর পর তারা অবসায়ন বা সম্পত্তি বিক্রি করে, যেখানে ঋণদাতাকে ঋণের বিপরীতে শেয়ার দেওয়া হয়। বিভিন্ন কোম্পানির কাছে যে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে, সেখান থেকে টাকা উদ্ধারে এই সম্পদ বিক্রির প্রক্রিয়া কিছুটা সহায়তা করে।
ভারত অবশ্য এই প্রথম এমন মন্দঋণের সমস্যায় পড়েনি। আর এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ‘ব্যাড ব্যাংক’ কর্মসূচিও প্রথম নয়। প্রকৃতপক্ষে ভারতে এই তালিকায় ২৮টি প্রতিষ্ঠান আছে, যার সবগুলোই বেসরকারি। গত দুই দশকে এই পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে। কিন্তু উদ্ধার চেষ্টার ফল খুবই হতাশাজনক।
মন্দঋণ সংকট মোকাবিলায় বর্তমানে সরকার দুটি কোম্পানি গঠন করেছে। এর একটি মন্দঋণের দায় গ্রহণ করবে এবং সেটি হবে রাষ্ট্রায়ত্ত। অন্যটি আংশিক বেসরকারি মালিকানাধীন। এরাই সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রত্যাশিত মূল্য এবং মন্দ ব্যাংকগুলো সম্পদ বিক্রি থেকে যে অর্থ পাবে, এই দুয়ের যে পার্থক্য হবে, সেটি দেবে সরকার।
তবে কাজটা মোটেও সহজ হবে না। প্রথমত, ব্যাংকগুলোকে ভ্যালুয়েশনের ব্যাপারে আগে একমত হতে হবে। ধরা যাক, একটি কোম্পানিতে ২০টি ঋণদাতা রয়েছে। এই সবাইকে অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে। ঋণের বর্তমান মূল্যমান কত, ঋণদাতার কাছে কত টাকার সম্পদ আছে, ঋণ বিক্রি করতে ব্যাংককে রাজি করানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিনিয়োগ ও ঋণমান সংস্থা আইসিআরএর বাণিজ্যিক খাতের রেটিংবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিল গুপ্ত এমনটিই বলছেন। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু উদ্ধার এবং মন্দঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ততটা দক্ষ নয়।
দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় একটি কোম্পানির এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকে। ধুঁকতে থাকা এবং বিলুপ্ত কোম্পানির সম্পদের নিলাম হবে। মূলত জমি, প্ল্যান্ট বা কারখানা এবং মেশিনারি ও কিছু স্ক্র্যাপের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ভারতে মন্দঋণের ৮০ শতাংশই রয়েছে প্রায় আধা ডজন কোম্পানিতে। এগুলোর মধ্যে আছে—লোহা, ইস্পাত, উড়োজাহাজ, খনি, সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠান।
১২টি বৃহৎ খেলাপি কোম্পানি বা তথাকথিত ‘দ্য ডার্টি ডজন’ এক সময় ইস্পাত, বস্ত্র, অবকাঠামো ও জাহাজ নির্মাণ, বিদ্যুৎ বিতরণ, রিয়েল এস্টেট নিয়ে কাজ করত। তাদের কিছু সম্পদ এখন বিক্রি করতে হবে। অর্থনীতির এই মন্দা দশায় এসব সম্পদ বিক্রি করা বেশ কঠিনই হবে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে ভারতকে অবশ্যই ব্যাংকিং খাতকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। বিশ্বের মধ্যে ভারতের ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি নন পারফরমিং লোন (শ্রেণিকৃত ঋণ) রয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে এভাবে ঋণের পাহাড় জমেছে। এই সময়টাতেই প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী ছিল এবং ঋণ নেওয়া সহজ করা হয়েছিল। ২০০৭-০৮-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রবৃদ্ধিতে মন্দার মধ্যে ভারত তুলনামূলক নিরাপদ ছিল। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ আগ্রহতেও সে অর্থে ভাটা পড়েনি।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সি রাঙ্গারাজন বলেন, ভারতের ভালো সময়েই মন্দঋণের বাড়বাড়ন্ত সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিই অর্থনীতিতে একটি অযৌক্তিক উল্লম্ফনের গতিপথ তৈরিতে সহায়তা করেছে। উচ্চ ঋণ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিম্ন মূল্যস্ফীতি এবং তুলনামূলক কম বাজেট ঘাটতির জগাখিচুড়িই ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহিত করেছে। প্যান্ডেমোনিয়াম: দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ব্যাংকিং ট্র্যাজেডি বইয়ের লেখক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটিই বলছেন।
বিবিসির সঙ্গে আলাপে তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অতি আত্মবিশ্বাসী ব্যাংকারেরা বহু ঋণের ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন। ব্যাংকগুলো আসলে আশার ভেলায় ভেসেছে। আগের ঋণের সুদ সংগ্রহের মাধ্যমে তাঁরা কৃত্রিম মুনাফার হিসাব-নিকাশ করে নিশ্চিন্তে বসে ছিলেন। ভারতের অতিলোভী পুঁজিবাদীরা তাঁদের নতুন-পুরাতন প্রকল্পে অর্থ সংস্থান করতে ঋণ ও শেয়ার সংগ্রহে ব্যাংকঋণের দিকে ঝুঁকেছেন। একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা শেয়ারের মাধ্যমে অর্থ সংস্থানের দিকে ঝুঁকে থাকেন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় ব্যাংকিং খাত পদ্ধতিগত সমস্যায় আক্রান্ত। এই ক্ষত সারাতে ‘মন্দ ব্যাংক’ কখনো জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হতে হবে, তাদের কার্যক্রমকে স্বচ্ছ করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঋণদাতাদের আরও দক্ষ ও সজাগ থাকতে হবে। এই সময়ে তাদের ঝুঁকি গ্রহণের অভিলাষকেও সংযত করতে হবে। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও উন্নত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভালো কাজে দিতে পারে। ঋণ হস্তান্তর প্রক্রিয়াও অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। মন্দ ব্যাংকের ধারণা খারাপ না। তবে এর জন্য দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা। ভারত সরকার এই মুহূর্তে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, ঋণের পাহাড় কাটতে, তা কতখানি কাজে আসবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
দেড় লক্ষাধিক শাখায় এক শ কোটির বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগৃহীত হয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ভারতীয় ব্যাংকগুলোর কাগজপত্রে এমনই চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য-উপাত্ত। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভয়াবহ।
ইচ্ছেমতো শাখা খুলে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে ভারতের ব্যাংকগুলো। নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে সেই টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে কিছু ‘বাজে’ প্রকল্পে। গত কয়েক বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ গেছে এসব প্রকল্পে। এখন দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ঋণের ৬০ শতাংশই গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে। ২০১৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংককে এ খাদ থেকে উদ্ধার করেছে সরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে মন্দঋণ উদ্ধারের রেকর্ড সন্তোষজনক নয়। অবশ্য ২০১৬ সালে দেউলিয়া আইন করার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত মন্দঋণ উদ্ধার করা গেছে। এ আইনে সম্পদ অবসায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। আর এখন তো ঋণগ্রহীতারা মহামারিতে বিপর্যস্ত। এতে খেলাপি আরও বেড়েছে। সামনের মাসগুলোতে মন্দঋণের চিত্রটি ঊর্ধ্বমুখী হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
শুধু ২০০৫ ও ২০০৯ সালের মধ্যেই করদাতাদের ৩৫ বিলিয়ন ডলার এই ঋণগ্রহীতাদের উদ্ধার কর্মসূচিতে ঢেলেছে সরকার। কিন্তু তাতে তেমন ফল হয়নি। গত বছরের জুলাই মাসে ফিচ রেটিংয়ে বলা হয়েছে, ভারতের পতনোন্মুখ ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করতে চাইলে ২০২২ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের তহবিল জোগান দিতে হবে।
এই ঋণের বদনামের বোঝা কমাতে সরকার আবার পুরোনো কৌশলেই পা বাড়াচ্ছে। আবার তথাকথিত মন্দ ব্যাংকের (ব্যাড ব্যাংক) শরণাপন্ন হচ্ছে সরকার। মন্দঋণ ২৭ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিট পরিচ্ছন্ন করার এ উদ্যোগ অর্থনীতিতে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সেটি পরিষ্কার নয়। কারণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাগজে-কলমে আনুমানিক যে ১০০ বিলিয়ন ডলার মন্দঋণের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, উদ্ধার কর্মসূচির এই লক্ষ্য তার চার ভাগের এক ভাগ মাত্র। ঋণের এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংকোচন ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেই শুধু ব্যাহত করবে না, এটি প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কারণ, এতে ঝুঁকি গ্রহণে নারাজ ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করায় বেসরকারি বিনিয়োগে বড় পতন দেখা দিতে পারে।
ভারতে ‘মন্দ ব্যাংক’ বলতে সম্পদ পুনর্গঠন কোম্পানি বোঝানো হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট মূল্য ধরে মন্দঋণের দায় নেয়। এর পর তারা অবসায়ন বা সম্পত্তি বিক্রি করে, যেখানে ঋণদাতাকে ঋণের বিপরীতে শেয়ার দেওয়া হয়। বিভিন্ন কোম্পানির কাছে যে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে, সেখান থেকে টাকা উদ্ধারে এই সম্পদ বিক্রির প্রক্রিয়া কিছুটা সহায়তা করে।
ভারত অবশ্য এই প্রথম এমন মন্দঋণের সমস্যায় পড়েনি। আর এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ‘ব্যাড ব্যাংক’ কর্মসূচিও প্রথম নয়। প্রকৃতপক্ষে ভারতে এই তালিকায় ২৮টি প্রতিষ্ঠান আছে, যার সবগুলোই বেসরকারি। গত দুই দশকে এই পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে। কিন্তু উদ্ধার চেষ্টার ফল খুবই হতাশাজনক।
মন্দঋণ সংকট মোকাবিলায় বর্তমানে সরকার দুটি কোম্পানি গঠন করেছে। এর একটি মন্দঋণের দায় গ্রহণ করবে এবং সেটি হবে রাষ্ট্রায়ত্ত। অন্যটি আংশিক বেসরকারি মালিকানাধীন। এরাই সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রত্যাশিত মূল্য এবং মন্দ ব্যাংকগুলো সম্পদ বিক্রি থেকে যে অর্থ পাবে, এই দুয়ের যে পার্থক্য হবে, সেটি দেবে সরকার।
তবে কাজটা মোটেও সহজ হবে না। প্রথমত, ব্যাংকগুলোকে ভ্যালুয়েশনের ব্যাপারে আগে একমত হতে হবে। ধরা যাক, একটি কোম্পানিতে ২০টি ঋণদাতা রয়েছে। এই সবাইকে অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে হবে। ঋণের বর্তমান মূল্যমান কত, ঋণদাতার কাছে কত টাকার সম্পদ আছে, ঋণ বিক্রি করতে ব্যাংককে রাজি করানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিনিয়োগ ও ঋণমান সংস্থা আইসিআরএর বাণিজ্যিক খাতের রেটিংবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিল গুপ্ত এমনটিই বলছেন। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু উদ্ধার এবং মন্দঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ততটা দক্ষ নয়।
দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় একটি কোম্পানির এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকে। ধুঁকতে থাকা এবং বিলুপ্ত কোম্পানির সম্পদের নিলাম হবে। মূলত জমি, প্ল্যান্ট বা কারখানা এবং মেশিনারি ও কিছু স্ক্র্যাপের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ভারতে মন্দঋণের ৮০ শতাংশই রয়েছে প্রায় আধা ডজন কোম্পানিতে। এগুলোর মধ্যে আছে—লোহা, ইস্পাত, উড়োজাহাজ, খনি, সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠান।
১২টি বৃহৎ খেলাপি কোম্পানি বা তথাকথিত ‘দ্য ডার্টি ডজন’ এক সময় ইস্পাত, বস্ত্র, অবকাঠামো ও জাহাজ নির্মাণ, বিদ্যুৎ বিতরণ, রিয়েল এস্টেট নিয়ে কাজ করত। তাদের কিছু সম্পদ এখন বিক্রি করতে হবে। অর্থনীতির এই মন্দা দশায় এসব সম্পদ বিক্রি করা বেশ কঠিনই হবে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে ভারতকে অবশ্যই ব্যাংকিং খাতকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। বিশ্বের মধ্যে ভারতের ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি নন পারফরমিং লোন (শ্রেণিকৃত ঋণ) রয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে এভাবে ঋণের পাহাড় জমেছে। এই সময়টাতেই প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী ছিল এবং ঋণ নেওয়া সহজ করা হয়েছিল। ২০০৭-০৮-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রবৃদ্ধিতে মন্দার মধ্যে ভারত তুলনামূলক নিরাপদ ছিল। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ আগ্রহতেও সে অর্থে ভাটা পড়েনি।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সি রাঙ্গারাজন বলেন, ভারতের ভালো সময়েই মন্দঋণের বাড়বাড়ন্ত সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিই অর্থনীতিতে একটি অযৌক্তিক উল্লম্ফনের গতিপথ তৈরিতে সহায়তা করেছে। উচ্চ ঋণ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিম্ন মূল্যস্ফীতি এবং তুলনামূলক কম বাজেট ঘাটতির জগাখিচুড়িই ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহিত করেছে। প্যান্ডেমোনিয়াম: দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ব্যাংকিং ট্র্যাজেডি বইয়ের লেখক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটিই বলছেন।
বিবিসির সঙ্গে আলাপে তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অতি আত্মবিশ্বাসী ব্যাংকারেরা বহু ঋণের ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন। ব্যাংকগুলো আসলে আশার ভেলায় ভেসেছে। আগের ঋণের সুদ সংগ্রহের মাধ্যমে তাঁরা কৃত্রিম মুনাফার হিসাব-নিকাশ করে নিশ্চিন্তে বসে ছিলেন। ভারতের অতিলোভী পুঁজিবাদীরা তাঁদের নতুন-পুরাতন প্রকল্পে অর্থ সংস্থান করতে ঋণ ও শেয়ার সংগ্রহে ব্যাংকঋণের দিকে ঝুঁকেছেন। একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা শেয়ারের মাধ্যমে অর্থ সংস্থানের দিকে ঝুঁকে থাকেন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় ব্যাংকিং খাত পদ্ধতিগত সমস্যায় আক্রান্ত। এই ক্ষত সারাতে ‘মন্দ ব্যাংক’ কখনো জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হতে হবে, তাদের কার্যক্রমকে স্বচ্ছ করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঋণদাতাদের আরও দক্ষ ও সজাগ থাকতে হবে। এই সময়ে তাদের ঝুঁকি গ্রহণের অভিলাষকেও সংযত করতে হবে। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও উন্নত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভালো কাজে দিতে পারে। ঋণ হস্তান্তর প্রক্রিয়াও অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। মন্দ ব্যাংকের ধারণা খারাপ না। তবে এর জন্য দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা। ভারত সরকার এই মুহূর্তে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, ঋণের পাহাড় কাটতে, তা কতখানি কাজে আসবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
দেশে ডলার রেট বাজারভিত্তিক করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সর্বদা তৎপর বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফরে আসা সংস্থাটির প্রতিনিধিদলের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। তিনি বলেছেন, ‘আমরা খুব কাছ থেকে ডলার রেট মনিটরিং করছি। বর্তমানে ডলারের বাজারে অনেকটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।’
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের ইতিহাসে রেমিট্যান্স আহরণে নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দুই দিন বাকি থাকতেই রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার।
৪ ঘণ্টা আগেজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে সব কর অঞ্চল, কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বন্দরে কোনো রকম আমদানি-রপ্তানি না হওয়ায় হাজার হাজার কনটেইনার ও ট্রাকের জট তৈরি হয়েছে। পণ্যের শুল্কায়ন ও রাজস্ব না হওয়া
৪ ঘণ্টা আগেব্যয়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা শেষ পর্যন্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আইএমএফ যে নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, তার বিপরীতে বাংলাদেশ
৪ ঘণ্টা আগে