Ajker Patrika

টানাপোড়েনের মধ্যে ভারত থেকে ১১০০ কোটি টাকার ডিজেল কিনছে বাংলাদেশ

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩১
টানাপোড়েনের মধ্যে ভারত থেকে ১১০০ কোটি টাকার ডিজেল কিনছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শীতল হয়েছে। তবে এরই মধ্যে ভারত থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিচালনা পর্ষদের হাজারতম সভায় ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে খরচ হবে ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই ডিজেল আমদানি করা হবে।

চলতি বছর বিপিসির পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা ৭৪ লাখ টন। এর মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল, যার ৮০ শতাংশই সরাসরি আমদানি করা হয়। বাকিটা স্থানীয় পরিশোধনাগার থেকে পাওয়া যায়।

ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে নিয়মিত পরিশোধিত জ্বালানি তেল আনে বিপিসি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ট্রেনে আসছে এই তেল। এই রিফাইনারি থেকে তেল আনার পরিমাণ বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন। এই পাইপলাইন দিয়ে নুমালিগড় থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে জ্বালানি তেল আসছে। গত বছর ভারত থেকে ৭০ হাজার ৫৫ টন ডিজেল আমদানি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমদানির পথ খুলতেই কারসাজিতে মূল্যবৃদ্ধি

  • দেশে মজুত পর্যাপ্ত, আসছে নতুন পেঁয়াজও
  • অভিযানের প্রভাবে পাইকারিতে দাম কিছুটা কমেছে
  • কিছু আমদানির সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের
  • পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল আগেই: অর্থনীতিবিদ
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ বলছে, কারসাজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশে কৃষিপণ্যটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে প্রতিবেশী ভারতে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোর ওপারে কাছাকাছি প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ জমা করা হয়েছে। এই পেঁয়াজ আমদানি করে মোটা মুনাফা বাগাতে একটি পক্ষ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ট্যারিফ কমিশন কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি স্বীকার করলেও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমানোর যুক্তি দিয়ে ‘স্বল্প পরিসরে’ আমদানির সুপারিশ করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে বর্তমানে আগের মৌসুমের সাড়ে ৩ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে চলতি মাসেই নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসার বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি মাসে ১ লাখ টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। আগামী মাসে আসবে এ জাতেরই আরও ২ লাখ ৫ হাজার টন। এমন পরিস্থিতিতে আমদানির পথ খুলে দেওয়া হলে নতুন পেঁয়াজ নিয়ে কৃষক লোকসানে পড়বেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমে কেজিপ্রতি ৮ রুপিতে (প্রায় ১২ টাকা) নেমেছে। এখন আমদানির অনুমোদন দিলে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের লাভ হবে। ক্ষতি হবে আমাদের কৃষকের। ভারতের ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য দেশের কৃষকের ক্ষতি করতে পারি না। এ কারণে বাণিজ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ যৌথ কমিটির গত সপ্তাহের বৈঠকে আপাতত পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কয়েকটি টিম ফরিদপুর, পাবনাসহ পেঁয়াজের উৎপাদন অঞ্চলগুলোতে অভিযান শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার থেকে এই অভিযান শুরুর পর পাইকারি পর্যায়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মণপ্রতি দাম ২৫০ টাকার বেশি কমেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজের মজুত পর্যাপ্ত। তারপরও দাম বেড়েছে কারসাজিতে। মনিটরিং টিমগুলো পেঁয়াজের উৎস বাজারগুলোতে কাজ শুরু করেছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে দাম কমেছে। খুচরায় কেন কমেনি, সেটাও আমরা দেখছি। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করব।’

বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘এখন আমদানির অনুমোদন দিলে আমাদের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এটা আমরা করতে পারি না।’

দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৭ লাখ টন। গত মৌসুমে উৎপাদিত হয়েছিল ৩৮ লাখ টনের কিছু বেশি। তবে উৎপাদন-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে প্রতিবছর উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশের বেশি নষ্ট হয়ে যায়। এতে মৌসুম শেষে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয় এবং দামের ভারসাম্য রাখতে হয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার রাজধানীর বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৭০-৮০ টাকা।

পেঁয়াজের এমন চড়া দামের পেছনের কারণ হিসেবে সরকারের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) কৃত্রিম সংকটের কথা বলছে। তবে একই সঙ্গে দাম কমাতে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ‘স্বল্প পরিসরে’ আমদানির সুপারিশও করেছে। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে কমিশন বলেছে, পেঁয়াজের বাড়তি দামের সুবিধা কৃষক পাচ্ছেন না। বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীরাই এর সুযোগ নিচ্ছেন। আমদানির সুযোগ দিলে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে। তাতে ভোক্তারা যৌক্তিক দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৫০ টাকা আর পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৯০ টাকা পেরোলে আমদানির অনুমতিসহ শুল্কছাড় দেওয়ার সুপারিশ করেছিল ট্যারিফ কমিশন।

চিঠিতে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেছেন, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কিছু মধ‍্যস্বত্বভোগী বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এই সময়ে ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা, কিন্তু তা বেড়ে এখন ১২০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মতে, প্রতিবছর এই সময়টাতে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে। তাই আমদানি করতে হলে পরিকল্পনা আরও আগেই করার প্রয়োজন ছিল। তাহলেই দাম এই পর্যায়ে আসত না।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত মজুত আছে বললেও আমাদের বাজারের চিত্র ভিন্ন। দাম কমাতে কিছু পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেয়ারবাজারে মুনাফা লাভের সঠিক কৌশল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেয়ারবাজারে মুনাফা লাভের সঠিক কৌশল

শেয়ারবাজারে মুনাফা করতে হলে জানতে হবে কিছু মৌলিক দিক। এখানে সাফল্যের আসল চাবিকাঠি হলো জ্ঞান, ধৈর্য ও শৃঙ্খলা। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে সময়ের সঙ্গে বাজার হয়ে উঠতে পারে বড় অর্থ আয়ের অসাধারণ ক্ষেত্র।

  • ব্যবসার মৌলভিত্তি: যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, প্রথমেই তার আয়-ব্যয়, ঋণের পরিমাণ, বাজারে সুনাম এবং টিকে থাকার সামর্থ্য যাচাই করুন। বার্ষিক বা ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন ও লভ্যাংশের ইতিহাস দেখে নিন।
  • মৌলিক ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ: মৌলিক বিশ্লেষণে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বোঝা যায়, আর প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দামের ধারা ধরা পড়ে। দুটোই জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
  • খাতভেদে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা ভিন্ন: যেমন ব্যাংক, বিমা, বিদ্যুৎ, ওষুধ, টেলিকম বা টেক্সটাইল—প্রতিটি খাতের সম্ভাবনা আলাদা। শুধু সময় বুঝে ভালো খাত বেছে নেওয়া দরকার।
  • বিনিয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি: ধৈর্য নিয়ে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন, দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় নয়। সব টাকা এক জায়গায় না রেখে বিভিন্ন মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ক্ষতির ঝুঁকি কমে।
  • লাভ ও ঝুঁকি সচেতনতা: নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি ভালো, তবে শুধু বেশি লভ্যাংশ দেখে নয়, মৌলিক অবস্থা দেখুন। লাভের আশা বাস্তবসম্মত রাখুন, বছরে ১৫-৩০ শতাংশ রিটার্নই যথেষ্ট। ধার করে বিনিয়োগ নয়, ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে নির্দিষ্ট সীমায় বিক্রি করুন।
  • অর্থনৈতিক প্রভাব: কোম্পানির মূল্যায়ন বোঝার জন্য পিই ও পিবি অনুপাত, ইপিএস, এনএভি ইত্যাদি দেখে শেয়ার ভালো নাকি দুর্বল, বোঝা যায়। একই সঙ্গে অর্থনীতি, রাজস্ব নীতি ও সুদের হার পর্যবেক্ষণ করুন; এগুলোর গতিবিধি বাজারে বড় প্রভাব ফেলে।
  • গুজবে বিনিয়োগ নয়: গুজব বা শোনা কথায় নয়, তথ্য-যুক্তিতে সিদ্ধান্ত নিন। লোভ ও ভয় নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্য রাখুন; বিনিয়োগে মানসিক স্থিরতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • নতুনদের জন্য পরামর্শ: নতুন বিনিয়োগকারীরা ছোট অঙ্কে শুরু করুন, কয়েকটি ভালো কোম্পানি বেছে নিন, নিয়মিত শিখুন ও ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়ান। মনে রাখবেন, শেয়ারবাজারে সফলতার মূলমন্ত্র হলো জ্ঞান, ধৈর্য ও শৃঙ্খলা।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ২২
মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পাঁচ ইসলামী ধারার দুর্বল ব্যাংকের শেয়ার সম্প্রতি ‘শূন্য’ ঘোষণা করা হয়—এতে এক ঝটকায় ৬,০০০ কোটি টাকার সম্পদ মুহূর্তে উধাও হয়ে গেছে। ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে পাঁচ ব্যাংকের মোট ৫৮১ কোটি ৯৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৫৯টি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫,৮১৯ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশই ক্ষতি হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের—তাঁদের হাতে থাকা ২১৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪টি শেয়ারের বিনিয়োগমূল্য ২,২০০ কোটি টাকা, যা মুহূর্তেই পোর্টফোলিও থেকে মুছে গেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২২৪ কোটি ৪০ লাখ ৩৭ হাজার, যার বাজারমূল্য ২,২০৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ছিল ১৪৩ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার, যার মূল্যমান দাঁড়াচ্ছিল ১,৩৯০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে থাকা ১১৪ লাখ ৬৯ হাজার শেয়ারের দামও ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এই বিশাল বিনিয়োগ আর্থিক মূল্যহীন হয়ে গেছে।

এসব ব্যাংকের মালিক, পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু এ সংকট কোনো একদিনের ফল নয়; এটি বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি, পরিচালকদের অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির ফলাফল। তবু এ দায়ভার এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাঁধে চাপানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীর ঘাড়ে পড়েছে নিঃস্বতার ভার—এটি শুধু কোনো একক বিনিয়োগকারীর ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়। শেয়ারবাজারে আস্থা দুলবে, বিনিয়োগের প্রবাহ স্থবির হবে, আর আর্থিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে কাঁপন ছড়িয়ে পড়বে। নিঃস্বতা, ক্ষতির তীব্রতা এবং অর্থের হঠাৎ উধাও—সব একসঙ্গে ভেসে উঠছে। অর্থনীতির ভবিষ্যতের ওপর এ প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, আর বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে যাবে।

ইতিমধ্যে পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো হলো : ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। বিনিয়োগকারী মো. মহসিন বলেন, ‘একীভূত হওয়া ব্যাংকে বিনিয়োগকারীর শেয়ার ফিরিয়ে দিতে হবে। লুটের দায় কেন সাধারণ মানুষকে নিতে হবে?’

5 bank

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ মনে করেন, ‘যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায়ভার এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীর ওপর চাপানো হচ্ছে। এটি আর্থিক অন্যায়ের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। গভর্নরের ভাষ্য, ‘পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য নেতিবাচক ৩০০-৪০০ শতাংশ। এখন তা আদায় করা উচিত। তবে তা না করে শূন্যের নিচের শেয়ারগুলোর মূল্য জিরো হিসেবে ধরা হবে।’

আইন ও বাস্তবতার মধ্যে ছেদও চোখে পড়ে। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও হিসাববিদ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, কোম্পানি অবসায়ন বা মার্জনের পর সম্পদ বিক্রি করে দায়দেনা শোধের পর যদি কিছু থাকে, শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন। এখানে তো কিছুই নেই।’ তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার চাইলে সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য কিছু করতে পারে।

অর্থনৈতিক চিত্র ভয়াবহ

পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বড় শিল্পগোষ্ঠীর লুট ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) প্রতিবেদনে মোট আমানত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ কোটি, মোট ঋণ ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮৪ কোটি, খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা—গড় খেলাপি ৭৭ শতাংশ উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ।

শেয়ার বিন্যাসও হতাশাজনক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার ৭৮ কোটি ৫৮ লাখ, মূল্য ৭৮৫ কোটি; সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে সাধারণের শেয়ার ২১ কোটি, দাম ২১৪ কোটি; এক্সিম ব্যাংকে ৫৬ কোটি ৯০ লাখ, দাম ৫৬৯ কোটি; গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩০ কোটি ৮৯ লাখ, দাম ৩০৮ কোটি; ইউনিয়ন ব্যাংকে ৩৩ কোটি ২ লাখ, দাম ৩৩০ কোটি টাকা। গত দুই বছরে শেয়ারের দর ১০-১৩ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে, ফলে ক্ষতি আরও গভীর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১০ বিলিয়ন ডলারে মেটসেরা অধিগ্রহণের পথে ফাইজার

এএফপি, সানফ্রান্সিসকো
১০ বিলিয়ন ডলারে মেটসেরা অধিগ্রহণের পথে ফাইজার

তীব্র দর-কষাকষির পর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠান ফাইজার প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে বায়োটেক স্টার্টআপ মেটসেরা অধিগ্রহণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। স্থূলতা চিকিৎসায় বিশেষায়িত মেটসেরা ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও ডেনমার্কের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি নভো নরডিস্কের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র দর-কষাকষি চলছিল। অবশেষে গতকাল শনিবার নভো নরডিস্ক প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। নভো নরডিস্ক বর্তমানে ওজন কমানোর জনপ্রিয় ওষুধ উইগোভি এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ ওজেম্পিক তৈরি করে।

গত শুক্রবার মেটসেরা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ফাইজার শেয়ারপ্রতি ৮৬ দশমিক ২৫ ডলার পর্যন্ত মূল্যে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে, যা মোট প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সমান। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, তারা সর্বসম্মতিক্রমে ফাইজারের প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করেছে এবং আশা করছে, ১৩ নভেম্বরের শেয়ারহোল্ডার সভা শেষে চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হবে।

ফাইজারের সর্বশেষ প্রস্তাব সেপ্টেম্বরে করা তাদের প্রাথমিক প্রস্তাবের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেই প্রস্তাবের পরই নভো নরডিস্ক পাল্টা প্রস্তাব দেয়, যা দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একধরনের ‘দর যুদ্ধ’ সৃষ্টি করে।

তবে শনিবার নভো নরডিস্ক জানায়, তারা মেটসেরার জন্য আর নতুন কোনো প্রস্তাব দেবে না। কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে বলে, তারা তাদের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য ব্যবসায়িক অধিগ্রহণের সুযোগগুলো খুঁজবে।

এদিকে নভো নরডিস্কের প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মেটসেরা জানায়, এফটিসি কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য প্রতিযোগিতাবিরোধী (অ্যান্টিট্রাস্ট) আইনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ফলে পরিচালনা পর্ষদ মনে করে, নভো নরডিস্কের প্রস্তাব ‘অগ্রহণযোগ্যভাবে বেশি আইনি ও নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি’ তৈরি করছে, যেখানে ফাইজারের প্রস্তাবে সেই ঝুঁকি অনেক কম।

তবে নভো নরডিস্ক দাবি করেছে, তাদের প্রস্তাব সম্পূর্ণভাবে অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে এক বিলিয়নের বেশি মানুষ স্থূলতায় ভুগছিল এবং ৮০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল।

চুক্তিটি সম্পন্ন হলে স্থূলতা চিকিৎসা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক বাজারে ফাইজার নতুন এক শক্তিশালী অবস্থান পাবে; যেখানে এরই মধ্যে নভো নরডিস্ক আধিপত্য বিস্তার করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত