গ্রাহকসেবায় পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

গ্রাহকবান্ধব সেবায় এখনো পিছিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো, যার মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে সোনালী ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রাহকসেবায় পিছিয়ে থাকার নেতৃত্ব দিচ্ছে খোদ সোনালী ব্যাংক। গ্রাহকদের সেবা দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আরও কাজ করতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান এবং দেশের প্রথম অর্থসচিব মতিউল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘হলমার্কের পর সোনালী ব্যাংকের যে ঋণভীতি আছে, তা কাটাতে হবে। সঠিকভাবে ঋণ দিতে হবে, আবার ঋণ আদায়ও করতে হবে। ঋণ প্রক্রিয়ায় এখনো ঘাটতি রয়েছে সোনালীর।’

তিনি আরও বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকে এখনো লোকসানি শাখা রয়েছে। এই ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমে এখন ১৬টিতে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করব এটা দ্রুত শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো দিনে দিনে ভালো করছে। তাদের মূলধনের সংকট কমে এসেছে ও মুনাফা অর্জন করছে। মূলধনের ঘাটতি পূরণে অথবা সংকট উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থসহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছরে শর্টফল ঘাটতি কাটাতে সরকারের তহবিল থেকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি।’

ব্যাংকের আগামী দিনে ভূমিকার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০৩০ সালে দেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা লাগবে। সবার সহযোগিতায় এ দেশ উন্নত হবে। বিশেষ করে বড় ব্যাংক হিসেবে সোনালী ব্যাংককে জনগণের আস্থার জায়গাটি ধরে রাখতে হবে।’

ব্যাংকগুলোর অবস্থার উন্নতি এবং সুদের হার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার কয়েক বছর আগে ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, তা কমিয়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশে আনা হয়েছে। বর্তমানে ঋণস্থিতি ১২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। কৃষিঋণ চার গুণ বেড়েছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়েছে ১১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষ।’ 
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তথা আমেরিকা, ইউরোপের মতো দেশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার গত ৫০ বছরে কোনো ব্যাংক ব্যর্থতার দায় নিয়ে বন্ধ হয়নি। আর মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগোপযোগী নীতিগত ও আর্থিক সার্বিক সহযোগিতা থাকায় সামনের দিনেও এমনটা হবে না।’

সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রমের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনা কমিশনে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকায় এলসি খোলে, এর ফলে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংক রাষ্ট্রের গুরুত্ববহ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।’ 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সরকারি ব্যাংক অনেক কাজ করলেও বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় প্রচার-প্রসার কম। ব্যাংকগুলোকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রাহকসেবা বাড়াতে সংস্কার করতে হবে।’