Ajker Patrika

এক প্রকল্পে ১০ বছর

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ১৬
এক প্রকল্পে ১০ বছর

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনটি পুনরায় চালুর লক্ষ্যে এক দশক আগে ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য ২০১১ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। এখনো শুরু হয়নি মূল রেললাইনের কাজ।

নানা জটিলতায় ছয় মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ আছে প্রকল্পের কাজ। এ অবস্থায় আগামী বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের। ফলে আবারও বাড়তে পারে প্রকল্পের মেয়াদ। সেই সঙ্গে বাড়বে ব্যয়ও।

১০ বছরেও প্রকল্পটি শেষ না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি কারণ হচ্ছে—শুরুতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও পরে ভারতের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত এবং রেলপথটি প্রথমে মিটার গেজ করার কথা থাকলেও পরে ডুয়েল গেজে করার সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া পরামর্শক নিয়োগ, দরপত্র প্রক্রিয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, ঋণচুক্তি ও ঋণ ছাড়সহ বিভিন্ন জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে এত সময় গড়িয়েছে।

বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. সুলতান আলী আজকের পত্রিকাকে জানান, ঋণের অর্থ পেতে দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা ও বর্ষার কারণেও কাজ বন্ধ ছিল। তবে চলতি মাসেই আবার কাজ শুরু হবে। ভারত থেকে প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ মালামাল আসার কথা থাকলেও সেগুলো ঠিকমতো আসেনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে ১৮৯৬ সালে চালু হয় কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনটি। এটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় চালু থাকা এই রেলপথ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায়, একসময় ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০০২ সালের ৭ জুলাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার মানুষ। রেলপথটির সংস্কার করে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালন করে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বিদ্যমান মিটার গেজ লাইন সংস্কারের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। ২০১১ সালে মিটার গেজ লাইনটি পুনর্নির্মাণ করার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ২০১৫ সালে এই  উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিবর্তন করে লাইনটি ডুয়েল গেজে অন্তর্ভুক্ত করে আবারও অনুমোদন করা হয়। ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৮ সালের আগস্টে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দুই বছর মেয়াদে ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনে বর্তমানে কোথাও কোনো কাজ হচ্ছে না। পুরো কাজ বন্ধ আছে। কোটি কোটি টাকা মূল্যের নির্মাণসামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের ছয় মাস ধরে বেতনও বন্ধ। এর আগে কিছু পুরোনো ব্রিজ ভেঙে নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হলেও পুরো কাজ শেষ হয়নি। পুরোনো লাইনের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা সরানো হয়েছে।

বর্তমানে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রকল্প এলাকায় এখনো কিছু গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর কাজ বাকি আছে। নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে পরামর্শক নিয়োগ নিয়েও। মেয়াদ শেষ হলেও এখনো নতুন করে পরামর্শক নিয়োগ হয়নি। ডিপিপিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি অর্থ লাগছে। ফলে এই কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এ কাজে আরও ১ কোটি টাকা বেশি লাগবে। সে ক্ষেত্রে ব্যয়ও বাড়বে।

২০১১ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছিল ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিচ্ছে সরকার। ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে ভারতীয় নির্মাণপ্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানি।

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৫১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রেললাইন হবে। এ সেকশনে গার্ডার ব্রিজ ১৭টি ও কালভার্ট ৪২টি পুনর্নির্মাণ করা হবে। থাকবে আধুনিক সিগন্যালব্যবস্থা। একই সঙ্গে ৬টি স্টেশন ভবন এবং প্ল্যাটফর্ম পুনর্নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমানে ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বেড়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন প্রকল্পটি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা। বিশ্বের কোথাও প্রকল্প নিয়ে এমনটি হয় না। কেন প্রকল্পগুলো ঝুলে যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ে হচ্ছে না, তার জন্য কোনো জবাবদিহি করতে হয় না কাউকে। এ কারণে এমনটি হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত