Ajker Patrika

উপহারের ঘরের কাজ শেষ না হতেই ধসে পড়ছে গাঁথুনি, পলেস্তারা

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪, ১০: ১১
উপহারের ঘরের কাজ শেষ না হতেই ধসে পড়ছে গাঁথুনি, পলেস্তারা

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য চতুর্থ ধাপে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নকশা অনুযায়ী কাজ না করে খেয়ালখুশিমতো কাজ করছেন শ্রমিকেরা। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ঠিকমতো পানি না দেওয়ায় নির্মাণকাজ শেষ না হতেই ধসে পড়ছে ইটের গাঁথুনি ও পলেস্তারা। প্রতিবাদ করলে স্থানীয় চৌকিদার ও এক মিস্ত্রি মামলার ভয় দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনওর মাধ্যমে উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া এলাকায় ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ২১০টি মুজিব শতবর্ষের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২ শতাংশ জমির ওপর ২টি সেমিপাকা ঘর, ১টি রান্নাঘর ও ১টি টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এতে ২১০টি পরিবারের ঘর নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নকশা অনুযায়ী কাজ না করে খেয়ালখুশিমতো কাজ করছেন শ্রমিকেরা। নকশা অনুযায়ী প্রতিটি বিল্ডিংয়ের গ্রেট বিমের উচ্চতা হওয়ার কথা ‍৯ ইঞ্চি, কিন্তু বাস্তবে দিচ্ছে ৭ ইঞ্চি। বিল্ডিংয়ের প্রতিটি কলাম ও লিন্টেলে স্টিরাপ ৬ ইঞ্চি পরপর দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ ইঞ্চি পরপর। এ ছাড়া বিল্ডিংয়ের ওপরে লিন্টেলের কর্নারগুলোতে রড না দিয়ে ফাঁকা রেখে দেওয়া হয়েছে। নকশা অনুযায়ী প্রতিটি লিন্টেলের ঢালাইয়ের উচ্চতা হওয়ার কথা ৬ ইঞ্চি, কিন্তু বাস্তবে দিচ্ছে ৪ ইঞ্চি। এদিকে নিম্নমানের বালু ব্যবহার এবং বিল্ডিংয়ে ঠিকমতো পানি না দেওয়ায় নির্মাণ শেষ না হতেই ধসে পড়ছে ইটের গাঁথুনি ও পলেস্তারা।

এ সময় নির্মাণকাজে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রি জিয়ারুল ইসলামের কাছে বিল্ডিংয়ের কলাম ও লিন্টেলে স্টিরাপ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রিংগুলো এখানে রেখে গেছিলাম, এখানকার ছোট বাচ্চারা কোথায় জানি চুরি করে বালুর মধ্যে পুঁতে রাখছে, তাই কম করে দিচ্ছি।’ কিন্তু কার অনুমতিতে এ ধরনের নিম্নমানের কাজ করছেন, এ বিষয়ে কিছু বলেননি তাঁরা। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে সেখান থেকে সটকে পড়েন।

মিজানুর রহমান, এরশাদ উদ্দিনসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা শ্রমিকদের সামনেই প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে এখানকার চৌকিদার সোনা মিয়া এবং মিস্ত্রি সুরুজ মিয়া আমাদের মামলার ভয় দেখায়। সরকারি কাজে বাধা দিলে নাকি আমাদের জেলে ঢুকায় দিবে। এ জন্য আমরা আর কিছু বলি না। একটা বিল্ডিংয়ের কাজও ঠিকমতো হয়নি। সরকার ঘর তৈরির টাকা দিছে, যেভাবে পারছে সেই মনগড়া কাজ করে যাচ্ছে তারা। এভাবে কাজ হলে এগুলো বেশি দিন যাইবে না। ঝড় এলে বিল্ডিং ভাঙ্গি চাপা পড়ি মরা লাগবে।’

জানতে চাইলে নির্মাণসামগ্রী দেখভালের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ সোনা মিয়া বলেন, ‘আমি কেন কাউকে হুমকি দিতে যাব! আমি যে হুমকি দিছি এ কথা কারা বলেছেন, একটু তাদের দেখায় দেন তো।’ অভিযুক্ত রাজমিস্ত্রি সুরুজ মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনিও বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আমার ভাগের ৫২টি ঘর সুন্দরভাবে তৈরি করেছি। আমাকে কেউ কিছু বলেনি, আর আমিও কাউকে কোনো হুমকি দিইনি।’

ঘর তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিম বলেন, ‘আমাদের কোনো ধরনের কারচুপি করার সুযোগ নেই। আপনি যেহেতু বলছেন, আমি ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখব।’

এ বিষয়ে উপজেলা ইউএনও নাহিদ তামান্না বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ আমি নিজে সপ্তাহে দুই দিন পরিদর্শন করি। এ ছাড়া ১০ দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে মনিটরিং অফিসার এসে ওই জায়গার নির্মিত ঘরগুলো পরিদর্শন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরগুলো খুবই কঠোরভাবে মনিটর করা হয় এবং সচিত্র প্রতিবেদন রাখা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর আবার পরিদর্শন করেছি। ১০/১৫টি ঘরে কিছুটা সমস্যা দেখে গেছে। যেন গুণগত মান সঠিক থাকে, এ ব্যাপারে মিস্ত্রিদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত