Ajker Patrika

‘পত্রিকায় লিখে দিয়েন, শেখ হাসিনা যেন আমাদের কষ্টের কথাগুলো জানেন’

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২: ৩৪
‘পত্রিকায় লিখে দিয়েন, শেখ হাসিনা যেন আমাদের কষ্টের কথাগুলো জানেন’

গঙ্গাচড়া উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আলমবিদিতর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ৯টি গ্রামের চারটি হলো ডাংগী পাইকান, সয়রাবাড়ী, নগর বরাইবাড়ী ও কুটিরপাড়া। ওই চার গ্রামে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের ১০ কিলোমিটার দূরত্বের উপজেলা সদরে আসতে ৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়।

উপজেলায় আসতে হলে আরেক ইউনিয়ন বেতগাড়ীর বেতগাড়ী বাজার ও বড়বিল ইউনিয়নের পাকুড়িয়া শরিফ হয়ে আসতে হয়। এর একমাত্র কারণ তিস্তার শাখা নদ ঘাগট। এই নদ ডাংগী পাইকানসহ আশপাশের প্রায় চার গ্রামের মানুষের পথের দূরত্ব বাড়িয়েছে। 

পৌষের শুরুতে ঘাগট নদে পানি কমে এলে নদের ওপরে স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করে। নদে পানি বাড়লে আবার শুরু হয় দুর্দশা।

গ্রামটিতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এই গ্রামের মানুষের একমাত্র দাবি ছিল ঘাগট নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ। নির্বাচনের সময় অনেক মেম্বার, চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্যরা কথা দিলেও নির্বাচন শেষে জনপ্রতিনিধিরা আর  কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না। 

পাইকান কুটিপাড়ার ঘাগট নদের ওপর বাঁশের সাঁকোর ছবি তোলার সময় তাসলিমা আক্তার নামে এক মাদ্রাসাছাত্রী আজকের পত্রিকার সাংবাদিকের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘স্যার, আপনি কি সাংবাদিক?’ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘স্যার, আপনি ভালো করে আপনার পত্রিকায় লিখে দিয়েন তো, আমাদের এই এলাকার আমাদের কষ্টের কথা। আমরা কীভাবে কষ্ট করে স্কুল যাই, শেখ হাসিনা আপা যেন আমাদের কষ্টের কথাগুলো জানেন। আমাদের কষ্টের কথা শুনে যেন আমাদের ওপর দয়া করে এই এলাকায় নদীর ওপর একটি সেতু বানিয়ে দেন।’

এ সময় কথা হয় সয়রাবাড়ী গ্রামের সফিয়ার রহমানের (৪৭) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্যার, কী আর কমো হামার কষ্টের কথা, কত চেয়াম্যান-এমপি চলি গেইছে, হামার কষ্টের কথা শুনছে, কিন্তু কাও হামার কষ্ট লাগভ করি আর যায় নাই। এখন তো আর বর্ষাকাল নো আয়, বর্ষাকাল হইলে দেখ নেন হয় কত কষ্ট করি চলাচল করা লাগে। বর্ষাকালে ৩০ কিলোমিটার দূর দিয়া আসা লাগে। যদি একটা মানুষ হঠাৎ করি অসুস্থ হয়, তায়ও কোনো উপায় নাই যে তারাতারি করি দাক্তরের (ডাক্তার) কাছত ধরি আসমো। হামারগুলা গরিব মানুষ যে এত কষ্ট করি আবাদ করি, সেই ফসলও যদি বিক্রি করিবার যাই, তায়ও ৩০ কিলোমিটার দূর দিয়া ধরি আসিবার লাগে বাজারত। ফসল বিক্রি করি কিসের দুই টাকা পামো, তার গাড়িভাড়া দিতে অর্ধেক টাকা চলি যায়। ব্রিজখানের দাবিতে কতবার যে ইউএনও অফিস গেছিনো, তবু কোনো কাজ হয় নাই। ইউএনও অফিসের লোকজন কয় খালি হইবে হইবে। কিন্তু আর ব্রিজ হয় না।’

এ বিষয়ে আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেকবার উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে লোক এসে মাটি পরীক্ষা করে গেছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করা বন্ধ করে দিছি।’ 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, ‘গ্রামের লোকজনের কথা চিন্তা করে আমি কয়েকবার বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে পাইকান, কুটিরপাড়া এলাকায় ঘাগট নদের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। এমনকি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে লোক নিয়ে গিয়ে সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। তাঁরা বলছেন সবকিছু রেডি আছে, বাজেট এলে কাজ শুরু হবে।’ 

এ বিষয় উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান, কুটিরপাড়া এলাকার ঘাগট নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। নির্দেশনা এলেই কাজ শুরু হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত