Ajker Patrika

বর্জ্যে আবদ্ধ পচানালা খাল, স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি কৃষিজমিতে সেচসুবিধা নিয়ে দুশ্চিন্তা

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
বর্জ্যে আবদ্ধ পচানালা খাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
বর্জ্যে আবদ্ধ পচানালা খাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর সৈয়দপুরের পচানালা খাল বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ্যে দূষিত ও আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে একদিকে যেমন দূষিত পানিতে মশার বংশ বিস্তারসহ বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রায় ৫০০ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, শহরের উত্তর অংশ উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কয়া বিল থেকে পচানালার উৎপত্তি। এরপর সৈয়দপুর পৌর এলাকার ভেতর দিয়ে দক্ষিণে ২২ কিলোমিটার ঘুরে তা গিয়ে মিলেছে রংপুরের বদরগঞ্জের বারাতি নদীতে। খালটি ১০ ফুট গভীর ৮ ফুট চওড়া। ১৮২২ সালে তৎকালীন জমিদার পচা সরকার এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে এই খাল খনন করেন। সৈয়দপুর পৌর এলাকার কিছু কৃষিজমি, বোতলাগাড়ি, কামারপুকুর ও বাঙালিপুর ইউনিয়নের সন্নিবেশিত এলাকার ৫০০ হেক্টর জমি পচানালার মাধ্যমে সেচসুবিধা পেয়ে থাকে।

পাউবো আরও জানায়, পৌরসভার সব নালা নর্দমার নোংরা পানি পচানালার খালে ফেলা হচ্ছে। ফলে দূষিত হয়ে পড়ছে খালের পানি। মরে যাচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণী।

গত মঙ্গলবার সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে জমিদার পচানালা সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খালের ময়লা আবর্জনা জমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার পানির রং কালো হয়ে গেছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ দুর্গন্ধে আশপাশের এলাকার লোকজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এতে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার নালা-নর্দমার পানি ও পয়োবর্জ্য এ খালের বিভিন্ন স্থানে ফেলা হচ্ছে। সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে বিসিক শিল্পনগর এলাকায় সেতুর নিচে দুই ধারে প্রধান নালা। এর সংযোগ গিয়ে ঠেকেছে পচানালায়। মিল ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য সেখানে গিয়ে মিশছে। উপজেলা সড়কের পঁচানালা সেতুর নিচে শহরের বড় নর্দমা থেকে অব্যাহত নোংরা মিশছে খালের পানিতে।

আজিজার রহমান নামের এক কৃষক বলেন, তাঁদের পচানালার পানিই সেচকাজে ব্যবহারের একমাত্র ভরসা। কিন্তু পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। পুরো পানি কালো হয়ে পড়েছে। এ পানি আর খেতে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

মো. রাসেল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই খালের পাশেই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানির দুর্গন্ধে স্কুলে যাতায়াত পথে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, পচানালার পানি সেচকাজে ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াসিম বারী জয় বলেন, প্রবাহহীন দূষিত পানিতে সাধারণত মশা ও রোগজীবাণু বংশবিস্তার করে থাকে। আর এসব মশার কামড় ও রোগজীবাণুর কারণে শিশু ও বড়রা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, পচানালার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি এনে পচানালার পানি শোধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। কয়েকবার সৈয়দপুর পৌরসভাকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, পচানালায় যেন নোংরা পানি ফেলা না হয়। কিন্তু তাতে পৌরসভা কর্ণপাত করছে না।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সৈয়দপুর পৌর প্রশাসক নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত