Ajker Patrika

ঘুঘুডাঙ্গায় তালপিঠা উৎসবে মুগ্ধ দর্শনার্থী

নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১: ৫৯
ঘুঘুডাঙ্গায় তালপিঠা উৎসবে মুগ্ধ দর্শনার্থী

উৎসব মানে সমস্ত ব্যস্ততা দূরে ফেলে একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠা। কথায় আছে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এখান থেকেই বোঝা যায় বাঙালি কতখানি উৎসবপ্রিয়। আর বরেন্দ্র অঞ্চলের উৎসবে তালপিঠা দিয়ে অতিথি আপ্যায়নে রয়েছে পুরোনো রেওয়াজ। তবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এ ধরনের উৎসব অনেকটা অচেনা। আর তাই নতুন প্রজন্মকে এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নওগাঁর নিয়ামতপুরে গতকাল শুক্রবার শুরু হয় তালপিঠার মেলা বা উৎসব। তাও আবার সারি সারি তালগাছের নিচেই।

নিয়ামতপুরের হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী তাল সড়কে মেলার উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চারপাশে সবুজ ধানখেতের বিস্তার। মাঝে পথের দুই ধারে সারি সারি তালগাছ। গাছের নিচেই বসেছে হরেক রকমের তালপিঠা ও বিভিন্ন পণ্যের দোকান। বাড়তি পাওয়া সংগীতের আসর। গানের সুরে পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা। মেলায় পিঠার সম্ভারও ছিল বৈচিত্র্যময়। এবার ৩০-৩৫ ধরনের তালপিঠা উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে জামাইপিঠা, পাকান, কানমুচুরি, তালক্ষীর, হৃদয়হরণ ইত্যাদি।

এ ছাড়া শখের মিঠাই, জিলাপি, চানাচুর, বাতাসা ও হরেক রকম খাবারের ঘ্রাণে ভারী হয়েছে মেলার প্রান্তর। নাগরদোলা, বেলুন-বন্দুক নিশানায় মেতে ওঠে নানা বয়সী শিশু-কিশোরের দল। মেলা হবে আর চটপটি-ফুচকা হবে না, তা কি হয়? আলু-ডাবলির সঙ্গে তেঁতুলের পানি মেশানো ঝাল-টক চটপটি, সবই ছিল মেলায়।

দর্শনার্থী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘সারি সারি তালগাছের নিচে তালের মিষ্টি রস দিয়ে তৈরি বাহারি পিঠা দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। বিভিন্ন ধরনের পিঠা দেখে এবং তার স্বাদ নিতে পেরে আমরা অনেক খুশি।’

আরেক দর্শনার্থী জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিন সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। তাল দিয়ে যে কত কি তৈরি করা যায় আজ দেখলাম। ব্যস্ততার কারণে এসব পিঠা বাড়িতে তৈরি সম্ভব হয় না। একসঙ্গে এত পিঠা দেখে খুব ভালো লাগল।’

মেলায় পিঠার স্টল দেওয়া মিনা বেগম জানান, তাল দিয়ে তৈরি ৩০ রকমের পিঠা নিয়ে মেলায় এসেছেন। এবারের স্পেশাল তালের রস দিয়ে তৈরি তালের রসগোল্লা। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। কেউ দোকানে বসেই খাচ্ছেন, কেউ আবার পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। দাম ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুশি তিনি।

আয়োজকেরা জানান, মেলায় তালপিঠাসহ বিভিন্ন পণ্যের দুই শতাধিক স্টল বসেছে। চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগতদের জন্য তালতলীতে গড়ে তোলা হয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধা। আরও অন্তত চার দিন এই মেলা চলবে।

শুক্রবার বিকেলে মেলায় এসে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, ‘তালগাছকে কেন্দ্র করে এ রকম আয়োজন আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখবে যুগ যুগ। আয়োজন দেখে আমি মুগ্ধ। তাল দিয়ে তৈরি বাহারি পিঠার স্বাদ নিলাম। এ যেন এক ভিন্ন অনুভূতি।’ 

মেলা দেখতে এবং তালের পিঠা কিনতে তাল সড়কে দর্শনার্থীদের ভিড়নিয়ামতপুরের ইউএনও ইমতিয়াজ মোরশেদ বলেন, ‘মেলাকে প্রাণবন্ত করতে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’ 
 
নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘পিঠা-পুলির হারানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলতেই এই আয়োজন। উৎসবে মানুষের সাড়া পেয়ে আমরা অভিভূত।’ 

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রত্যেক সৃষ্টির আনন্দ আছে। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তালের গাছ রোপণ করেছিলাম। সেই ঘুঘুডাঙ্গার তাল সড়ক এখন দেশে-বিদেশে পরিচিত।

মন্ত্রী আরও বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠাপুলির আয়োজন। আর এই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রতিবছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে পিঠামেলা। ঘুঘুডাঙ্গাকে একটি পরিকল্পিত পর্যটন এলাকা করা হবে।

উল্লেখ্য, তালতলিতে ১৯৮৬ সালে তালগাছ রোপণ করেন তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তাল সড়ক এখন পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালে প্রথমবার তালপিঠার মেলার আয়োজন করা হয় এখানে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত