Ajker Patrika

গলায় ফাঁস নিয়ে রেলিংয়ে ঝুলছিল শিশু 

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২২, ২০: ০৪
গলায় ফাঁস নিয়ে রেলিংয়ে ঝুলছিল শিশু 

পাবনার ঈশ্বরদীতে আল আমিন নামে ১১ বছরের এক শিশুকে গলায় ফাঁস নিয়ে দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার নিউ কলোনি রওজাতুল কোরআন রহমানিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ওই শিশুকে তার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। 

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের দাবি, শিশুটি বলেছে, ‘স্বপ্নে তার মৃত মায়ের ডাকে সাড়া দিতেই সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’ 
 
শিশুটিকে মাদ্রাসাটিতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছিল প্রায় সাত মাস আগে। মাসিক ২ হাজার টাকা খরচের বিনিময়ে মাদ্রাসার আবাসিক শাখায় লেখাপড়া করত সে। ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। 

উদ্ধারের পর শিশুটির দেওয়া ভাষ্যের বরাত দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সাহরি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে ওই শিক্ষার্থী। পরে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে সে তার বিছানাপত্র বাঁধার দড়ি দোতলায় স্টিলের রেলিংয়ের সঙ্গে বেঁধে গলায় ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী এলাকার এক ব্যক্তি তাঁর কর্মস্থল রূপপুরে যাচ্ছিলেন। তিনি ওই শিশুকে মাদ্রাসার রেলিংয়ের সঙ্গে দড়িতে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলে ছটফট করতে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। চিৎকার শুনে পাশের এক নারী দোকানদারসহ নিকটবর্তী তিন-চারজন ছুটে এসে মাদ্রাসার সীমানাপ্রাচীরের ওপর দাঁড়িয়ে ঝুলন্ত শিশুটিকে দড়ি কেটে উদ্ধার করেন। মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও অন্য শিক্ষার্থীদের সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিল। 

উদ্ধারের পর অসুস্থ শিশুটির মাথায় পানি দেওয়ার সময় উপস্থিত সবার চিৎকারে ঘুম ভাঙে মাদ্রাসার শিক্ষকদের। তাঁরা তখন সেখানে আসেন। এ সময় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশুটি ভয়ে কোনো কথা বলতে পারছিল না। শুধু ভয়ে কাতর চোখে সে শিক্ষকদের দিকে তাকাচ্ছিল। 

এদিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে নাটোর থেকে মোবাইলে ডেকে আনেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশসহ কাউকেই জানানো হয়নি। এমনকি ছাত্রটিকে কোনো প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলেও জানায় এলাকাবাসী। পরে ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে ডেকে এনে তাঁর হাতে আল আমিনকে তুলে দেওয়া হয়। 

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করি না। অথচ কেউ কেউ এসব বলার চেষ্টা করছে যে আমাদের অত্যাচারে ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ওই শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ার পর তার আত্মহত্যার কারণ জানতে চাওয়ায় সে বলেছে, ‘‘আমি আমার মৃত মাকে স্বপ্নে দেখেছি। মা আমাকে তাঁর কাছে ডাকছে। তাই আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছি”।’ 

গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, ‘তার বাবা গত তিন মাস মাদ্রাসায় কোনো খবর নেন না। এর কারণেও সে এমনটা করতে পারে।’ 

শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে কেন নেওয়া হয়নি এবং পুলিশকে জানানো হয়নি কেন, সে বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আসলেই জানানো উচিত ছিল। আমার ভুল হয়ে গেছে।’ 

ছেলের সঙ্গে টানা তিন মাস যোগাযোগ না করা প্রসঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বাবা জানান, ‘আমি নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে চাকরি করি। জমিতে চৈতালি থাকার কারণে মাসখানেক আমি ছেলেকে দেখতে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ হুজুরের মোবাইলে ফোন করি। কিন্তু হুজুর ইদানীং আমার ফোন ধরেন না। তাই ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি কয়েক দিন।’ 

আল আমিনের বাবা আরও বলেন, ‘আমি যেতে না পারলেও ভাতিজাকে দিয়ে আমার ছেলের মাসিক খরচের টাকা পাঠানোসহ তাঁর মাধ্যমে বাড়িতেও নিয়ে গেছি বেড়িয়ে আসার জন্য। সুতরাং আমি যোগাযোগ রাখি না এমন অভিযোগ মিথ্যা।’ 

ঈশ্বরদী থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরপরই আমি খোঁজখবর নিয়েছি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তো বিষয়টি সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, দেখতেও খারাপ: ট্রাম্প

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত