Ajker Patrika

রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ নারী মেম্বারের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর দুর্গাপুরে রাস্তা নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর দুর্গাপুরে রাস্তা নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় প্রায় সাত লাখ টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য (মেম্বার) রুপালী খাতুন। তিনিই রাস্তা নির্মাণকাজে হরিলুট শুরু করেছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

আজ সোমবার সকালে উপজেলার দাউকান্দী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে রাস্তায় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নূর-এ-শেফা জানান, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তিনিও অভিযোগ পেয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শনের পর দুপুরে পিআইও জানান, রাস্তার জন্য বিছানো সব ইট তুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই অনিয়মের জন্য সংরক্ষিত নারী সদস্য রুপালী খাতুনকে শোকজ করা হচ্ছে। চিঠি প্রস্তুত হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যে চিঠি পাঠানো হবে।

পিআইওর কার্যালয় জানিয়েছে, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় জয়নগর ইউনিয়নের দাউকান্দী গ্রামে মিনুর বাড়ি থেকে আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত ৬০০ ফুট রাস্তা নির্মাণের জন্য ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের চলাচলের ওই কাঁচা রাস্তাটিতে ইট বিছানোর পর ঢালাই করা হবে। প্রকল্পের সভাপতি ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সংরক্ষিত নারী সদস্য রুপালী খাতুন। তিনিই কাজটি করছেন।

গতকাল রোববার স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, রাস্তার কাজটি করতে ১ নম্বর ইটের বদলে কম দামে কেনা ২ ও ৩ নম্বর ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা কিছু ছবিও পাঠান। আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশে ইট বিছানো হয়ে গেছে। বালু দিয়ে ইট ঢেকেও দেওয়া হয়েছে। পুরো রাস্তাই করা হচ্ছে ২ ও ৩ নম্বর ইট দিয়ে। এগুলো কত নম্বর ইট—এমন প্রশ্নে শ্রমিকেরা হেসে ওঠেন। তাঁরা বলেন, ‘এটা মহিলা মেম্বার বলতে পারবেন।’

একটি ভ্যানে করে ইটগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হচ্ছিল। এক শ্রমিক জানান, ১, ২, ৩ নম্বর ইটের সবই আছে। কথা বলার সময়ই ছুটে আসেন রুপালী খাতুন। তিনি বলেন, ভাটা থেকে দু-একটা ২ ও ৩ নম্বর ইট চলে এসেছে।

পরে পুরো রাস্তায়ই একই ইট দেখা গেলে রুপালী খাতুন বলেন, এই ইট অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। ভুল করে ইটভাটার ম্যানেজার এখানে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি শ্রমিকদের বলতে থাকেন, ‘এই, সব ইট তুলে ফেলো। সব ইট আবার ভাটায় ফেরত পাঠাতে হবে।’

কিছুক্ষণ পর ইটভাটার মালিক মোখলেসুর রহমান এই প্রতিবেদককে ফোন করেন। তিনি জানতে চান, কে প্রকল্প এলাকায় সাংবাদিক নিয়ে গেছেন। তা না জানানো হলে মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমি ১ নম্বর ইটই দিতে চেয়েছিলাম। মহিলা মেম্বার জোর করে ২ নম্বর ইট নিয়ে গেছেন।’ পরে তিনি দাবি করেন, ‘রুপালী আপা ভালো মানুষ। ২ নম্বর ইট ভুল করে গেছে।’

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বরাবরই নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সংরক্ষিত নারী সদস্য রুপালী খাতুন। আর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকেই নানা অভিযোগ থাকায় সংরক্ষিত নারী আসনের ইউপি সদস্য রুপালী খাতুনকে প্রকল্প দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রায় সাত লাখ টাকার এই প্রকল্প বাগিয়ে নেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার থেকে কাজটি শুরু হয়েছিল। এরপর গতকাল স্থানীয় বাসিন্দারা ফোন করে কাজের ব্যাপারে অভিযোগ জানান। পরে সেদিনই তাঁকে কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কাজ বন্ধ না করে তিনি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন।

পিআইও নূর-এ-শেফা দুপুরে বলেন, ‘রাস্তায় ২ নম্বর ইট ব্যবহার হচ্ছিল। আমি সব ইট তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। এই অনিয়ম করার জন্য রুপালী খাতুনকে শোকজ করছি। চিঠি প্রস্তুত হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যে তিনি চিঠি পেয়ে যাবেন।’

পরে রুপালী খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসেছিলেন। তিনি যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই কাজ হবে।’ একই কথা বলেছেন জয়নগর ইউপির প্রশাসক ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আ ন ম রাকিবুল ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। সব ইট তুলে ফেলে ১ নম্বর ইট দিয়েই কাজ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত