Ajker Patrika

সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকের ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ, কর্মকর্তা বরখাস্ত 

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪৯
সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকের ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ, কর্মকর্তা বরখাস্ত 

শেরপুরের নকলায় সোনালী ব্যাংকের এক গ্রাহকের আট লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুলবুল আহমেদ নামের ওই ব্যক্তি নকলা শাখায় অফিসার (ক্যাশ) পদে কর্মরত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার কথা বলে দুই গ্রাহকের কাছ থেকে ভুয়া জমা রসিদের মাধ্যমে ১১ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিষয়টি ধরা পড়লে এক গ্রাহকের তিন লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

গত ২৩ নভেম্বর সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শ্যামল কুমার মণ্ডল স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান।

বুলবুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামে। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ে তাঁকে সংযুক্তি করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্র জানায়, নকলা পৌরসভার মনির হোসেন মিন্টুর মেয়ে মনিরা আক্তার (২০) পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য গত ৩ অক্টোবর সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। ওই সময় তাঁর পরিচয় হয় ব্যাংক কর্মকর্তা বুলবুলের সঙ্গে। বুলবুল নানা কৌশলে তাঁর কাছ থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য ভুয়া স্বাক্ষরযুক্ত ভুয়া জমা রসিদের মাধ্যমে ৩ কিস্তিতে মোট ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

মনিরা ব্যাংকে অনেক ঘোরাঘুরি করেও সঞ্চয়পত্রের কোনো ডকুমেন্ট হাতে পাননি। বুলবুল মনিরাকে জানান, অনলাইনে সার্ভার সমস্যার কারণে ডকুমেন্ট বের করতে পারছেন না। পরে মনিরা তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সেখানে কোনো টাকা জমা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি (মনিরা) শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অপরদিকে সোনালী ব্যাংক নকলা শাখার গ্রাহক তাছলিমা বেগম পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য গত ১৩ নভেম্বর সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখায় যান। ওই সময় ব্যাংক কর্মকর্তা বুলবুল সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য তাছলিমার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ৩ লাখ টাকা নেন এবং তাঁকে ভুয়া স্বাক্ষরযুক্ত একটি ভুয়া জমা রসিদ দিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন।

বিষয়টি সন্দেহ হলে তাছলিমা ঘটনাটি শাখা ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমানকে জানান। ব্যবস্থাপক টাকা জমার রসিদটি ভুয়া দেখে ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীর মাধ্যমে বুলবুলকে আটক করেন এবং তাঁর কাছে থাকা ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করে বিষয়টি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডিজিএমকে জানান। ডিজিএম তৎক্ষণাৎ নকলা শাখায় এসে উদ্ধারকৃত ৩ লাখ টাকা তাছলিমাকে ফেরত দেন এবং ঘটনাটি ধামচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

এ ছাড়া ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন ও এফডিআর করে দেওয়ার কথা বলে বুলবুল ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুলবুল ২০২০ সালে অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রৌমারী শাখায় চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরির শুরুতেই তিনি অনলাইন জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। রৌমারী শাখায় তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাঁকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজিবপুর শাখায় বদলি করা হয়। সেখানেও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁকে বদলি করা হয় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখায়।

বুলবুলের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নকলা শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ নিয়ে অনেকেই শাখায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা বিষয়টি দেখভাল করছেন।’

অভিযোগকারী ব্যাংক গ্রাহক মনিরা আক্তার বলেন, ‘আমি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার দাদার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও আমার বাবার কষ্টার্জিত ৮ লাখ টাকা হারিয়ে আমার পরিবার এখন দিশেহারা। আমি ন্যায়বিচার চাই।’

নকলা উত্তর বাজারের বিকাশ ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন (৪০) বলেন, ‘স্ত্রীর নামে সোনালী ব্যাংক নকলা শাখায় কনজুমার ঋণ করতে গিয়ে পরিচয় হয় বুলবুলের সঙ্গে। ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি আমার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।’

নকলা পৌরসভার ধুকুরিয়া মহল্লার বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হযরত আলী (৬২) বলেন, ‘কিছুদিন আগে বুলবুল আমাকে ঋণ করে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৬৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি আমি শাখা ব্যবস্থাপককে জানিয়েছি।’

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বরখাস্ত হওয়া সোনালী ব্যাংক নকলা শাখার কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ সোনালী ব্যাংক রৌমারী ও রাজিবপুর শাখায় কর্মকালীন সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারি করেছেন। তখন যদি সোনালী ব্যাংক শেরপুরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শ্যামল কুমার মণ্ডল তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে পরবর্তীতে তিনি (বুলবুল) এসব অপকর্ম করতে সাহস করতেন না।

এ বিষয়ে জানতে বুলবুল আহমেদেকে মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শেরপুরের ডিজিএম শ্যামল কুমার মণ্ডলকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত