Ajker Patrika

বাকৃবিতে ১৩ ভেড়া চুরি: ৪ দিনেও উদ্ধার হয়নি, বন্ধ গবেষণা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের খামারে অবশিষ্ট ভেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের খামারে অবশিষ্ট ভেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষণা প্রকল্পের খামার থেকে চুরি হওয়া ‘দরপার’ ও ‘গাড়ল’ জাতের ১৩টি ভেড়া চার দিনেও উদ্ধার হয়নি।

এর আগে গত ১ আগস্ট প্রকল্পটির ৪১টি ভেড়ার মধ্যে ২২টি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। ফলে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে মাত্র ছয়টি ভেড়া অবশিষ্ট রয়েছে। একের পর এক দুর্ঘটনায় থমকে গেছে ভেড়া গবেষণা। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন গবেষণার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গেটের পাশের খামার থেকে গবেষণা প্রকল্পের দরপার ও গাড়ল জাতের ১৩টি ভেড়া চুরি হয়। দরপার হলো দক্ষিণ আফ্রিকার মাংস উৎপাদনকারী একধরনের উন্নতজাতের ভেড়া। চুরি হওয়া ভেড়াগুলোর ওজন ৪৩ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত ছিল। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে মাত্র ছয়টি ভেড়া অবশিষ্ট রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘দরপার ও গাড়ল জাতের ভেড়া চুরি হওয়ার কারণে গবেষণা বন্ধ রয়েছে। ৯ জন শিক্ষার্থীর গবেষণা শেষ পর্যায়ে ছিল। তাদের মধ্যে আমিও একজন। এমন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ভেড়ার সিমেন সংগ্রহ করা হতো।’

রাকিবুল হাসান আরও বলেন, ‘বিগত অর্থবছরে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা উপজেলার ২০০ খামারিকে এ উন্নত জাতের ভেড়ার সিমেন বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছিল। জাত ভালো হওয়ায় দিন দিন চাহিদাও বাড়ছিল। আমরা চাই, দেশ ও আমাদের গবেষণার জন্য ভেড়াগুলো পুলিশ দ্রুত উদ্ধার করে দিক।’

গবেষণায় যুক্ত সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের অধ্যাপক ফরিদা ইয়াসমিন বারি বলেন, ভেড়া নিয়ে তিনটি প্রজনন প্রকল্প ও দুটি গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল। ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া ও চুরি হওয়া ভেড়াগুলো তৃতীয় প্রজন্মের ভেড়া। ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা নষ্ট থাকার কারণে চোরদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

ফরিদা ইয়াসমিন বারি আরও বলেন, ‘বহু পরিশ্রমে আমি এই “নিউক্লিয়ার স্লট” গড়ে তুলেছিলাম, যার জন্য আমি গোল্ড মেডেল অর্জন করেছিলাম। ২০১১ সাল থেকে গবেষণা চলমান থাকায় এসব ভেড়া থেকে সিমেন সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। চুরির পর শুধু আমার ব্যক্তিগত গবেষণা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণারও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আমিও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। কোনোভাবেই এ ক্ষতি মেনে নিতে পারছি না।’

সার্জারি ও অবস্টেট্রিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘অধ্যাপক ফরিদা ইয়াসমিন বারির গবেষণা প্রকল্পের ১৯টি ভেড়ার মধ্যে ১৩টি চুরি হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। ঘটনাস্থলে নিরাপত্তাকর্মী না থাকার কারণে এমনটি হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। আশা করছি, পুলিশ প্রশাসন দ্রুত ভেড়াগুলো উদ্ধারে পদক্ষেপ নেবে।’

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেড়া গবেষণা প্রকল্পের খামার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেড়া গবেষণা প্রকল্পের খামার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. নজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার বিকেলে খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মী সালাম ও রায়হান খামারটি খোলা রেখে চলে যান। তারপর ভেড়াগুলো চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে গত শুক্রবার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছি। পুলিশ বলছে, তারা ভেড়াগুলো দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মীর একজন আব্দুস সালামকে মোবাইল ফোনে কল দিলে ‘খামারে আসেন’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর তাঁকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গবেষণা প্রকল্পের উন্নত জাতের ভেড়া চুরির ঘটনায় সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। ভেড়ার বৈশিষ্ট্য হলো–পরিচিত মানুষের ডাকে তার পেছনে দল বেঁধে চলে যাওয়া। এতে বোঝা যায়, কোনো পরিচিত মানুষই চুরির সঙ্গে জড়িত। আমরা জড়িত ব্যক্তিদের মোটামুটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন ভেড়াগুলো উদ্ধারে অভিযান চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত