Ajker Patrika

বাগেরহাটে বিলুপ্তপ্রায় রাজকাঁকড়া

এস এস শোহান, বাগেরহাট
বাগেরহাটে বিলুপ্তপ্রায় রাজকাঁকড়া

‘অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে, কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।’ লিমুনাস নামক জলজ প্রাণীর ক্ষেত্রে সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এ কথাটি বলাই যেতে পারে। কেননা ডাইনোসরের মতো অতিকায় প্রাণীর আগে পৃথিবীতে বিচরণ করে এখনো টিকে আছে লিমুনাস। বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো বিস্ময় হয়ে আছে রহস্যেঘেরা এ প্রাণীটি। তবে এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।

বাগেরহাটের রামপালে জলজ প্রাণী লিমুনাস বা রাজকাঁকড়া পাওয়া গেছে। উপজেলার কালীগঞ্জ গ্রামের আমানুল্লাহর মাছের ঘেরে গত ৩১ জুলাই কাঁকড়াটি পাওয়া যায়। তখন থেকেই এটি মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিল। গত ১০ আগস্ট রাজ কাঁকড়াটি মারা যায়। মৃত কাঁকড়াটি এখন ফরমালিন দিয়ে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। এটি জোয়ারের পানিতে সাগর থেকে ভেসে এসেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অশ্ব ক্ষুরের ন্যায় দেখতে উপবৃত্তাকার জলজ প্রাণীটির ইংরেজি নাম Mangrove Horseshoe crab. বৈজ্ঞানিক নাম Carcinoscorpius rotundicauda. কাঁকড়া বলা হলেও প্রজাতিগত দিক থেকে মাকড়সার সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে এর। এরা লিমুলিডি গোত্রের অন্তর্গত সামুদ্রিক সন্ধিপদী প্রাণী। প্রধানত অগভীর সমুদ্র ও নরম বালি বা কাদা সমৃদ্ধ সমুদ্রতলে বাস করে। কালেভদ্রে যৌনসঙ্গমের জন্য ডাঙায় আসতে দেখা যায়। জন্মের সময় ৭-৮ সেন্টিমিটার এই প্রাণীটি প্রায় ৮ বছর কাদামাটি বা নরম বালুর নিচে থাকে। ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে তারা অগভীর সমুদ্রে চলে যায়। পরিপক্ব অবস্থায় এটি ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর মাথায় একটি শুঁড়ের মতো রয়েছে। খোলস বেশ শক্ত।

রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত মহামূল্যবান। রক্তের অসাধারণ ক্ষমতা বলে এরা যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে এদের গুরুত্ব অপরিসীম। এদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়। কারণ ৪৪ কোটি ৫০ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল। ডাইনোসরের চেয়েও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল এই লিমুলাস। এখনো টিকে আছে। তবে গভীর সমুদ্রে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ‘রাজকাঁকড়া সাধারণত আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। কালেভদ্রে যৌনসঙ্গমের জন্য সমুদ্র থেকে এদের ডাঙায় আসতে দেখা যায়। কিন্তু ৩১ জুলাই রামপাল উপজেলার কালীগঞ্জ গ্রামের আমানুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির মাছের ঘেরে কাঁকড়াটি পাওয়া যায়। পরে আমরা এটি সংগ্রহ করি। তখনই এটি মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিল। বাঁচিয়ে রাখার সব চেষ্টা করা হলেও গত ১০ আগস্ট এটি মারা গেছে। এখন ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।’

রাজকাঁকড়া বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘এই কাঁকড়া যে শুধু বাগেরহাটে পাওয়া গেছে তা নয়, বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতেও এর মৃতদেহ দেখা যায়। গভীর সাগরে মাছ ধরার সময় জেলেদের জালে এগুলো পাওয়া যায়। এই কারণে বিস্ময়কর এই কাঁকড়াটিকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখার জন্য যারা সমুদ্র বা গভীর সাগরে মাছ আহরণ করে সেসব জেলেকে সচেতন করা প্রয়োজন। এ জন্য আগে থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত