Ajker Patrika

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক: বিএনপির ভাগে ৩৬ জন, জামায়াত ৭ , অন্যান্য ৩

  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করে নিয়োগ
  • পরিবেশকপ্রতি ১ লাখ করে নেওয়ার অভিযোগ
  • বঞ্চিতদের ক্ষোভ, তালিকা বাতিলের দাবি
যশোর ও মনিরামপুর প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৬ মে ২০২৫, ১১: ৩৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যশোরের মনিরামপুরে কার্ডধারীদের মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির জন্য নতুন করে ৪৬ জন পরিবেশক নিয়োগ দিয়েছে উপজেলা খাদ্য দপ্তর। গত ২৯ এপ্রিল উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও নিশাত তামান্না ও সদস্যসচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহার যৌথ স্বাক্ষরিত এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ২০২৪ সালের নীতিমালা অনুসরণ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরিবেশক নির্বাচন করা হয়েছে। এ নিয়ে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা কেউ কেউ এ তালিকা বাতিল চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা ভাবছেন।

জানা গেছে, মনিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ২৩ হাজার ৪০০ উপকারভোগীর মধ্যে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা দরে মাসিক ৩০ কেজি করে বছরের পাঁচ মাসে চাল বিক্রির জন্য ২৬ জন পরিবেশক ছিলেন, যাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের অনুসারী। হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েকজন পরিবেশক আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় চাল বিক্রি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরপর পরিবেশক নিয়োগ-সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে পরিবেশক নিয়োগের নির্বাচিত তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সেখানে দৈবচয়নের (লটারি) মাধ্যমে গত ২৯ এপ্রিল ৪৬ জন পরিবেশক নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশক নিয়োগে বাস্তবে কোনো লটারি হয়নি। এ নিয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিব ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তবে সদস্যসচিব লটারি না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১৮২ জনের আবেদন বৈধতা পেলেও লটারির মাধ্যমে পরিবেশক নিয়োগ চূড়ান্ত না করে ইউএনও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে অধিকাংশ দলীয় পদ-পদবিধারী ৪৬ জন পরিবেশক নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন। এর মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ৩৬টি, জামায়াত ৭টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২টি ও ইসলামী আন্দোলন ১টি পরিবেশক পেয়েছে বলে জানা গেছে। আর এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবেশকপ্রতি ১ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। তার মধ্যে ইউএনও ১২-১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। ইউএনও নিশাত তামান্না তাঁর স্বামীর মাধ্যমে এই টাকার লেনদেন সেরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দলীয়ভাবে চাপে পড়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আবেদনকারী বলেন, ‘খাদ্যবান্ধবের পরিবেশকের জন্য আবেদন করেছিলাম। আমাদের বিষয়ে সরেজমিনে কোনো তদন্ত হয়নি। ডিলার (পরিবেশক) নিয়োগ চূড়ান্তের জন্য লটারির কথা বলা হলেও আমাদের ডাকা হয়নি। লটারি না করে হঠাৎ শুনি টাকার বিনিময়ে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে ৪৬ জন ডিলার নিয়োগ হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘লোকবল কম থাকায় আবেদনকারীদের গুদামের সক্ষমতা যাচাইয়ের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে পারিনি।’ লটারির মাধ্যমে পরিবেশক চূড়ান্ত করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘লটারি হয়নি। ইউএনওর সিদ্ধান্তে কমিটি কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করেছে।’

ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, ‘আবেদনে কারও রাজনৈতিক পদপদবি উল্লেখ নেই। এখানে ভাগ-বাঁটোয়ারার কিছু হয়নি। যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁরা এমন কথা বলছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত