Ajker Patrika

 ‘স্যারেরা ভেবেছিলেন সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব না’

পল্লব আহমেদ সিয়াম, ইবি প্রতিনিধি
 ‘স্যারেরা ভেবেছিলেন সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব না’

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বেড়ে ওঠা জিহাদ হাসানের। তাঁর বাবা সাবেক সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট। পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের গাজী বাড়ীর অদম্য ছেলে জিহাদ। ফারুক হোসেন ও রেহানা আক্তার দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে জিহাদ ই ছোট। শুধু বয়সে নয়, শারীরিকভাবেও ছোট জিহাদ। তাঁর শারীরিক উচ্চতা ৩ ফুট। জিহাদ জয় করেছে সকল প্রতিবন্ধকতা।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় জিহাদের। বললেন নিজের পেরিয়ে আসা সময়ের কথা, স্বপ্নের কথা। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। সমাজের চারপাশে অনেকেই ভাবতেও পারেনি জিহাদ একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিজের মেধা ও যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় খুশি তাঁর মা-বাবা। 

জিহাদ বলেন, ‘ছোটবেলায় টাইফয়েড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হই। সেখান থেকেই স্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়। জন্মের পরে স্বাভাবিক থাকলেও মাত্র তিন বছর বয়সে টাইফয়েড ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শারীরিক বৃদ্ধি ৩ ফুটে থেমে যায়। স্বাভাবিকভাবে আর দশজনের মত হাটতে পারি না।’ 

যে হরমোনটি উচ্চতার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সেটি হলো মস্তিষ্কের পিটুইটারি নামক হরমোন গ্রন্থি নিঃসৃত গ্রোথ হরমোন। ছোটকাল থেকে এই হরমোনের আধিক্য হলে কেউ মাত্রাতিরিক্ত লম্বা হয় আর হরমোনটির কমতি হলে বেঁটে হয়ে থাকে। 

 ‘সমস্যা থাকার কারণে স্কুলে চান্স পাওয়ার পর ভর্তি নিতে চাননি ক্লাস শিক্ষকেরা। সেটা সপ্তম শ্রেণির ঘটনা। স্যারেরা ভেবেছিলেন সবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব না। পরে ওই স্কুলের শফিকুল স্যারের হস্তক্ষেপে ভর্তি হই। পরবর্তীতে স্কুল বন্ধু যোবায়ের ধ্রুব আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তেমনিভাবে কলেজে নাদিম নামে এক বন্ধু সহযোগিতা করেন। আজকের এই খুশির দিনে তাদের কথাও মনে পরে।’ 

জিহাদ বলেন, ‘আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছি। এসএসসি দিয়েছি ঢাকা মুসলিম মর্ডান স্কুল থেকে। এইচএসসি দিই ঢাকা বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজ থেকে। এসএসসিতে ৪.৬৭ পাই এবং এসএসসিতে পাই ৪.২৫। আমার ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করার। রেজাল্ট কম থাকায় সে সুযোগ আর হয়নি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি নেই। সেখান থেকেই গুচ্ছে পরীক্ষা দেওয়া।’ 

জিহাদ আরও বলেন, ‘আর দশটা মানুষের মত আমি জীবনে স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নকে লালন করেন ভর্তি হই বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম চয়েস ছিল ইংরেজি। ইংরেজি বিভাগ পেয়েছি এতেই আমি খুশি। পরিবার থেকে সব সময় সাপোর্ট পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া একটা যুদ্ধ ছিল আমার জন্য। সেই যুদ্ধে আমি জয়ী। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। আর পিছে ফিরে তাকানোর সময় নেই। সব সময় চাইতাম পড়াশোনায় যেন ঘাটতি না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে। অসুবিধা তো থাকবেই, সেগুলো মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’ 

জিহাদের মা রেহানা আক্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমাদের ছেলে দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে এতেই আমরা খুশি। ছোট থেকেই ওর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ। অনেকেই দেখে হাসিঠাট্টা করে। ওই সময়গুলো মা হিসেবে খুব পীড়া দেয়। তবে এখন থেকে আমার সকল কষ্ট সার্থক।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কী করতে চান-এই প্রশ্নের জবাবে জিহাদ বলেন, ‘আমার জীবনের ইচ্ছা বিসিএস ক্যাডার হওয়া। দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করা। বিশেষ করে আমার মত সমাজে যারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সমস্যায় নিমজ্জিত, তাদের নিয়ে আমি কাজ করব। তাদের আমি সহযোগিতা করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

বিড়াল নির্যাতনের ঘটনায় গ্রামীণফোন ও অ্যারিস্টোফার্মা কেন আলোচনায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত