Ajker Patrika

ঝিনাইদহে নলকূপে পানি উঠছে না, বিপাকে মানুষ 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহে নলকূপে পানি উঠছে না, বিপাকে মানুষ 

ঝিনাইদহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না। চাপ বাড়ছে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা অগভীর নলকূপে। হুমকির মুখে পড়েছে জীব–বৈচিত্র্য। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর ইরি ধানের খেতের সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট মাটির নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচেও পানি মিলছে না। 

জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে রয়েছে ছয় উপজেলা। এগুলো হলো শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু ও ঝিনাইদহ সদর। জেলার ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতী, চিত্রা, কপোতাক্ষ, ইছামতী, কুমার, কালীগঙ্গা ও ডাকুয়াসহ বেশ কিছু নদনদী প্রবাহিত। এসব নদনদীর প্রায় সবই এখন মৃত। এসব নদ-নদীর বুকে এখন ফসলের চাষ হচ্ছে। 

জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে নির্ধারিত ডিজাইন মেনে ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ৩১ হাজার নলকূপ রয়েছে। যেসব নলকূপে পানির কোন ঘাটতি নেই। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে যত্রতত্র পানি উত্তোলন করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বাসা বাড়ির অগভীর নলকূপে। ফলে গৃহস্থালির কাজে যেমন অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে তেমন গরু-ছাগল বা গৃহপালিত পশু-পাখির বিশুদ্ধ পানির উৎসেরও সংকট দেখা দিয়েছে। 

সরেজমিন শৈলকুপার মনোহরপুর, বিজুলিয়া, হিতামপুর, পৌরসভার হাবিবপুর, কবিরপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও কিছু নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলে এসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে। ফলে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। 

উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের আব্দুর রহমান মিল্টন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত এক মাস ধরেই তাদের নলকূপে পানি অল্প উঠছে কিন্তু সম্প্রতি কোন পানিই উঠছে না।’ 

শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের আওদা গ্রামের বাসিন্দা সুজন সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বাড়ির একটি টিউবওয়েলে বেশ কিছুদিন ধরেই পানি কম উঠছিল। সপ্তাহ হতে চলল আর পানি উঠছে না।’ 

টিউবওয়েল ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের ঘরের শ্রমিকেরা গ্রামাঞ্চলে নলকূপ বসিয়ে থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির লোয়ার বা স্তর পাওয়া যায় কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির লোয়ার মিলছে। তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না।’ 

জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলা স্কুলশিক্ষক শফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে টিউবওয়েলে পানি কম উঠছে। তবে মোটর চালিত টিউবওয়েলে একেবারেই পানি উঠছে না।’ 

জেলার পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশের মধ্যে চরম খরা প্রবণ এলাকা আমাদের এই ঝিনাইদহসহ আশপাশের অঞ্চল। গবেষকেরা বলছেন, মরু এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া দেশের অন্য এলাকা থেকে জলাশয়ও কম। সরকারের নিয়ম আছে এক কিলোমিটারের মধ্যে গভরি নলকূপ করা যাবে না কিন্তু এ নিয়ম কেউ মানছে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পানি প্রবাহের উৎস নদ নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।’ 

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলা জুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ১৬ হাজার গভীর ও ১৭ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল জানিয়েছে, যেন ডিজাইন মাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাশ হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে বলে মনে করেন তিনি। 

ঝিনাইদহ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) সামিউল পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইরি মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে ধানের জমিতে সেচকাজ করেন আমাদের কৃষকেরা। এ সময়টা বছরের শুষ্ক এবং উঞ্চকাল। এ সময় নদ–নদীর পানি কমে আসে। যে কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নেমে যায়। এ সময় আমাদের পানির ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। অপ্রয়োজনে পানি উত্তোলন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়ম মেনে পাম্প স্থাপন করলে সমস্যা কিছুটা কমবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত