Ajker Patrika

যশোরে অন্তঃসত্ত্বা এইডস রোগীর অপারেশন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চিকিৎসকেরা

  • ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের পর অস্ত্রোপচারকক্ষ বন্ধ রাখতে হবে তিন দিন
  • একদল চিকিৎসক বলছেন, ওই রোগীর চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে
  • আরেক দল বলছেন, অস্ত্রোপচার করলে অন্যরা সেবাবঞ্চিত হবে, সংক্রমণঝুঁকি বাড়বে
­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৫: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এইডসে আক্রান্ত এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হবে কি না, তা নিয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। আজ রোববার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অস্ত্রোপচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া চিকিৎসকদের ভাষ্য, ওই নারীর চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া চিকিৎসকেরা বলছেন, ওই নারীর অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণঝুঁকি এড়াতে কয়েক দিন অস্ত্রোপচারকক্ষ বন্ধ রাখতে হবে। এতে অনেক রোগী সেবাবঞ্চিত হবেন। তা ছাড়া ওই নারীর অস্ত্রোপচার করা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে হবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গাইনি বিভাগ সূত্র বলেছে, মাস তিনেক আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই নারীর শরীরে এইডসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এখন তাঁর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো প্রয়োজন। নিয়ম অনুযায়ী, তাঁর অস্ত্রোপচার করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পরবর্তী তিন দিন অস্ত্রোপচারকক্ষের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক বলেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫-২০ জন প্রসূতির সন্তান প্রসব করানো হয়। তাঁদের অনেকেরই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া সার্জারি বিভাগের ৭ থেকে ১০টি, অর্থোপেডিকস বিভাগের ৬ থেকে ৮টি, নাক-কান-গলা বিভাগের ৩ থেকে ৫টি, ডেন্টাল বিভাগের ২ থেকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার করতে হয়। এ অবস্থায় হাসপাতালে তিন দিন অস্ত্রোপচারকক্ষ বন্ধ থাকলে এই রোগীরা সেবাবঞ্চিত হবেন।

এই চিকিৎসকদের দাবি, এত রোগীকে সেবাবঞ্চিত না করে ওই নারীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করে উন্নত সেবার ব্যবস্থা করা হোক। ঢাকায় তাঁকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইনি বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, এই রোগীর অস্ত্রোপচার কোনো বিষয় না। বিষয়টি হচ্ছে, শরীর থেকে নির্গত রক্ত ও তরল উপকরণ কীভাবে আর কোথায় নিষ্কাশন ও পরিশোধন করা হবে। সে বিষয়ে হাসপাতালে নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। শতভাগ প্রস্তুতি ছাড়া এমন রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মচারীরা সংক্রমণঝুঁকিতে পড়বেন। আতঙ্কে থাকবেন অন্য প্রসূতিরাও।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, হাসপাতালে এর আগে করোনা মহামারির সময় এরকম একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এ জন্য প্রাথমিকভাবে ওই অন্তঃসত্ত্বা রোগীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ওই রোগীকে ২৮ মে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এখন গাইনি বিভাগই সিদ্ধান্ত নেবে তারা অস্ত্রোপচার করবে, নাকি রোগীকে অন্য কোনো হাসপাতালে রেফার করবে।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘রোগী ডাক্তারের কাছে এলে তাঁর চিকিৎসা করা ফরজ। আর সেই রোগীকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। গাইনি বিভাগ রোববার ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিটা নিশ্চিত করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা বলেন, ‘এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচার সাধারণ হাসপাতালে করা ঝুঁকিপূর্ণ। আলাদা ও পর্যাপ্ত সুরক্ষাসম্পন্ন হাসপাতালেই এ ধরনের অস্ত্রোপচার করা যুক্তিযুক্ত। এ জন্য হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকা জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ফাঁস দিলেন স্ত্রী

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

‘ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যায় নয়, গুণে বিশ্বাসী ইরান, ইসরায়েল এবার আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখবে’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত