Ajker Patrika

থানায় মীমাংসায় মত ছিল না, স্বামীর কবরের পাশেই থাকতে চান লালনভক্ত বৃদ্ধা

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৪, ২২: ৫৭
থানায় মীমাংসায় মত ছিল না, স্বামীর কবরের পাশেই থাকতে চান লালনভক্ত বৃদ্ধা

নিরাপত্তার ঝুঁকি থাক, আর যা–ই হোক, স্বামীর কবরের পাশেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চান কুষ্টিয়ার সেই লালনভক্ত চায়না বেগম। উচ্ছেদকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেছেন, আমি লালন ভক্ত বলে কি আমি মানুষ না! আমাকে এইভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে উচ্ছেদ করা হলো! যারা উচ্ছেদ করেছে তাদের ভেতরে মানবতা ও মনুষ্যত্ব কিছুই নেই। আমি তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন শাহের মাজারের সামনে লালনভক্ত ও অনুসারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে অন্যত্র ঘর বানিয়ে দেওয়ার শর্তে থানায় পুলিশের মধ্যস্থতায় অভিযুক্তদের সঙ্গে মীমাংসা হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

মানববন্ধনে চায়না বেগম বলেন, ‘আমাকে নতুন কোনো জায়গায় ঘর তুলে দিলে সেখানে আমি থাকব না, আমি আমার স্বামীর কবরের পাশেই থেকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। সেখানে থেকে যদি আমার সাপে কাটে, বাঘে খায়, আমি সেখানেই থাকতে চাই। কারণ আমার স্বামী বেঁচে থাকতে বলে গেছে, তার কবরের পাশে থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা প্রদীপ দিতে, আরাধনা করতে। আমার স্বামীর কবরের পাশে আমার ঘর যারা ভেঙেছে তাদেরই ওই স্থানে ঘর তুলে দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘থানায় বৈঠক করে এলাকার মেম্বার মাতব্বররা আমাকে নতুন জায়গায় ঘর করে দিয়ে সমাধানের কথা বলেছে। সেটাতে আমার মত ছিল না। এত বড় অপরাধের এই সমাধান আমি মানি না।’

এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চায়না বেগমের গুরুমা আম্বিয়া খাতুন, ছোট বোন আছিয়া বেগম, ভাই আমজাদ, লালনভক্ত হরফ মণ্ডল, সিরাজ শাহ প্রমুখ। এরপর কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি দেন।

এর আগে ২৬ জুন (বুধবার) সকাল ৬টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের টাকিমারায় ৮০ বছর বয়সী লালনভক্ত চায়না বেগমের কর্মকাণ্ড ‘অনৈসলামিক’ ঘোষণা দিয়ে মৃত স্বামীর কবরের পাশে নির্মিত ঘর ভেঙে দেন স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বর ও মাতব্বরেরা। দিশেহারা বৃদ্ধা প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো লাঞ্ছিত হন। কূলকিনারা না পেরে অভিযোগ করেন কুষ্টিয়া মডেল থানায়। চায়না বেগম এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার এনামুল হক, মাতব্বর মোশারফ হোসেন, আনার মণ্ডল ও সাইদুল হাজির নাম উল্লেখ করে ঘর ভেঙে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনেন। এরপর থেকে পোড়াদহ রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে গত শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় সমঝোতা বৈঠক চলে। বৈঠকে চায়না বেগমের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় অন্যত্র একটি নতুন ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার শর্তে সমঝোতা হয়। মীমাংসায় চায়না বেগম ও তাঁর বোনের স্বামী সাধু শাহাবুদ্দিন সাবুসহ স্থানীয় কাউন্সিলর, মাতব্বর ও অভিযুক্তরা উপস্থিত ছিলেন। তবে চায়না বেগমের দাবি, তাঁর মতের বিরুদ্ধে এই মীমাংসা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চায়না বেগম ও লালনভক্ত অনুসারীরা স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তাঁর নতুন ঘরের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ ছাড়া পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলবেন বলে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত