Ajker Patrika

বাংলা নববর্ষকে ‘অনৈসলামিক’ বা ‘বিদেশি সংস্কৃতি’ বলা ধর্মীয় অপব্যাখ্যা: কবিতা পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদ। তাদের ভাষ্য, বাংলা নববর্ষকে ‘অনৈসলামিক’ বা ‘বিদেশি সংস্কৃতি’ বলে নানা ধরনের উসকানি ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাংলা নববর্ষ নিয়ে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে পরিষদ।

শুধু তা-ই নয়, এই অপপ্রচার রুখতে পাঁচটি দাবি জানিয়েছে পরিষদ। এগুলো হলো, বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ষড়যন্ত্র বা সহিংসতার আশঙ্কা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও গণমাধ্যমে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরা, ধর্মীয় অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে দেশব্যাপী ‘সংস্কৃতি রক্ষা অভিযান’ গড়ে তোলা এবং অপপ্রচারের জবাব দিতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এটি জানিয়েছেন তাঁরা।

আয়োজনে পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। এটি হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এই সর্বজনীন আনন্দঘন উৎসব আজ একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নিশানায়। কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বাংলা নববর্ষকে অনৈসলামিক বা ‘বিদেশি সংস্কৃতি’র অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা মোটেও সঠিক নয়; বরং ইতিহাস বিকৃতি ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যা।’

মোহন রায়হান আরও বলেন, ‘আজ একশ্রেণির লোক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া ‘শোভাযাত্রা’ ইউনেসকো-স্বীকৃত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী এটিকে ‘মূর্তিপূজা’ আখ্যা দিয়ে কটূক্তি করছে। এটি প্রকৃত অর্থে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ ও শুভবোধের বহিঃপ্রকাশ, যা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে বিশ্বমঞ্চে আমাদের পরিচয় তুলে ধরছে। কিন্তু বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও গোপন গ্রুপে নববর্ষ উদ্‌যাপনকে ঘিরে উসকানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে।’

মোহন রায়হান বলেন, ‘বাংলা নববর্ষকে লক্ষ্য করে চালানো এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ, এটি শুধু একটি উৎসব রক্ষার লড়াই নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ভাষা আন্দোলনের গর্ব ও জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। বাংলা নববর্ষ জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এটি বিভাজন নয়, একতা তৈরি করে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘ভারত আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করেছে। ভারতীয় যে টেলিভিশনগুলো এখানে আগ্রাসী ভূমিকা চালাচ্ছে, আমি এর বন্ধ চাই। আমরা কারও করদ রাজ্য নই। গতকালও সীমান্তে রক্ত ঝরেছে। আমরা দেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় কোনো উগ্রবাদের ছোঁয়া যাতে না লাগে, সেদিকে সবার লক্ষ রাখতে হবে।’

কবি মতিন বৈরাগী বলেন, ‘একশ্রেণির মানুষ ধর্মকে জীবিকা হিসেবে নেয়। তখন তারা এটাকে তার মতো ব্যাখ্যা করে। মানুষকে সংস্কৃতিমান করতে পারলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।’

গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, ‘আমরা নববর্ষে আত্মসমালোচনা করে নতুন বছরে নতুন মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই।’

ফিলিস্তিনে শহীদদের প্রতি ১ মিনিট নীরবতা পালন করে শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন। পরিষদের কবিরা নববর্ষের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করবেন। সঞ্চালনায় ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত