Ajker Patrika

গুজবের কারণে ভাঙচুর, নিয়ন্ত্রণে আসেনি রূপগঞ্জের আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২১, ১৭: ৪২
গুজবের কারণে ভাঙচুর, নিয়ন্ত্রণে আসেনি রূপগঞ্জের আগুন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অনেক মানুষ মারা গেছে–এমন গুজবে সেখানে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছে। 

আগুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারখানাটির অফিসারদের আবাসিক ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। তাঁদের ছোড়া ইটপাটকেলে অনেকে আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কারখানা এলাকায় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের ভিড় বাড়ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন নিখোঁজের প্রাথমিক তালিকা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। 

স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল আজকের পত্রিকাকে জানান, ভবনটিতে আগুন লাগার পর ভেতরে কর্মরত শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য কোনো  সিঁড়ি ছিল না এবং নিচের প্রধান গেট আটকে দেওয়া  হয়েছিল। তাঁর দাবি, আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেই ধারণা ছিল কারখানা কর্তৃপক্ষের। তাই ভেতরে অনেক মানুষ আটকা পড়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি, যা প্রশাসন লুকাচ্ছে। তাঁর আত্মীয় ওই কারখানায় কাজ করলেও ঘটনার সময় তাঁদের ডিউটি ছিল না বলে জানান তিনি। 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানাচ্ছেন, আগুন লাগা কারখানার ভেতরে প্লাস্টিক, কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য থাকার কারণে পানি দেওয়ার পরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। 

আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করছে। টানা আগুন জ্বলতে থাকায় ছয়তলা ভবনটিতে ফাটল ধরেছে। এ জন্য আরও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র জানায়, ভবনের ভেতরে কিছু পোড়া লাশ খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে কতটি লাশ, তা নিশ্চিত করেনি সূত্রটি। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘটনাস্থলে থাকলেও গণমাধ্যমের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলছেন না। 

শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা জানান, ষষ্ঠ তলায় কার্টনের গুদামের আগুন এখনো জ্বলছে। 

 রূপগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াকারখানাটির পঞ্চম তলায় সেমাই, সেমাই ভাজার তেল, পলিথিন; অন্য পাশে কারখানার গুদাম ছিল বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। কিছু কেমিক্যালও ছিল বলে তাঁরা জানান। 

ভবনটির নিচতলা পলিথিন তৈরির কারখানা। দ্বিতীয় তলায় টোস্ট-বিস্কুট, তৃতীয় তলায়  জুস-লাচ্চি, চতুর্থ তলায় ললিপপ, চকলেট তৈরির কারখানা ছিল বলে জানায় শ্রমিকেরা। 

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রূপগঞ্জের ভুলতায় জুস কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পড়েন শ্রমিক স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৩৪)। ঘটনাস্থলেই তাঁরা দুজন মারা যান। এরপর মোরসালিন (২৮) নামের একজন শ্রমিক প্রাণ বাঁচাতে ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেন। মোরসালিনকে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

কারখানাটিতে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করলেও আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে ১০০০ থেকে ১২০০ শ্রমিক কাজ করতেন বলে ইকবালসহ আরও কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন। 

বিভিন্ন রাসায়নিকসহ দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মকর্তা। 

আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের কাছে অনেকেই তাঁদের নিখোঁজ স্বজনের কথা জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে নিখোঁজদের তালিকা তৈরির কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়নি। 

পুলিশ বলছে, শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় বিঘ্ন ঘটছে, তাই বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়ে তাঁদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত