Ajker Patrika

হরিরামপুরের চরাঞ্চলে রাসেল’স ভাইপারের উপদ্রব, আতঙ্কে কৃষক

মাহিদুল ইসলাম মাহি, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ১৫: ৪০
হরিরামপুরের চরাঞ্চলে রাসেল’স ভাইপারের উপদ্রব, আতঙ্কে কৃষক

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলে রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্কে ভুগছেন কৃষকেরা। জমির ফসল ও গবাদি পশুর খাওয়ার জন্য ঘাস সংগ্রহ করতে যেতেও সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। তেমনি কাজে যেতে চাইছেন না কৃষিশ্রমিকেরাও। চরাঞ্চলে নিয়মিত বিষধর এই সাপের দেখা মেলাতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুরের কাছে জেগে ওঠা কাঞ্চনপুর ও ফরিদপুর সদর উপজেলার চরে সেলিমপুরের শতাধিক কৃষক জমি (বাৎসরিক ভাড়া) চাষ করেন। মূলত সেলিমপুরের বেশির ভাগ জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় কৃষকেরা ওই চরে জমি চাষ শুরু করেন। ওই চরে ভুট্টা, বাদাম, তিল, আমন ও আউশ ধানের চাষ করা হয়। 

ভুট্টা ঘরে তুলে তিল ও ধানের চাষ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে এক কৃষক তিল কেটে রেখে যান। পরে দুপুরে আঁটি বাঁধা সেই তিল তুলতে গিয়ে তিলের মধ্যে রাসেল’স ভাইপার সাপ দেখতে পান। এদিকে এই সাপের ভয়ে গরুর ঘাস কাটতেও আসছেন না অনেকে। 

এ ছাড়া কয়েক দিন আগে আজিমনগর ইউনিয়নের পশ্চিমচরে আজ্জেম নামের এক কৃষক একটি চন্দ্রবোড়া সাপ দেখে কেটে দুই ভাগ করেন। শিকারপুরে সাইদুল মোল্লা, রঘুনাথপুরের মুন্নু এবং লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কাজীকান্দা গ্রামে আকিদুলও চন্দ্রবোড়া সাপ দেখে আতঙ্কে পিটিয়ে মেরে ফেলার কথা জানান।

সেলিমপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম শনিবার সকালে বলেন, ‘কাঞ্চনপুর চরে গত বৃহস্পতিবার সকালে এক কৃষক তিলের মধ্যে রাসেল’স ভাইপার সাপ দেখতে পান। পরে তিল রেখে চলে যান শ্রমিকেরা। এত বড় চরে আমি ছাড়া আজ কোনো কৃষক আসেনি।’

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলে রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্কে ভুগছে কৃষক। ফাইল ছবিশিকারপুরের সাইদুল মোল্লা জানান, তাঁর জমির ধানের আঁটি গাড়িতে তোলার সময় এক শ্রমিক আঁটির নিচে চন্দ্রবোড়া সাপ দেখতে পেলে সাইদুল মোল্লা লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলেন। 

শ্রমিক আকিবুল জানান, ধান কাটার সময় সাপ দেখতে না পেলেও ধানের আঁটি ঘোড়ার গাড়িতে তোলার সময় ধানের আঁটির নিচে রাসেল’স ভাইপার সাপ দেখতে পান। তিনি জানতেন এই সাপ খুবই বিষধর। তাই তিনি ভয়ে চিৎকার দেন। পরে তার সঙ্গে থাকা অন্য শ্রমিকেরা সাপটি মেরে ফেলেন।
 
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে গত মার্চে রাসেল’স ভাইপার সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের ফরিদপুর জেলাসংলগ্ন পদ্মার চর এলাকায় কয়েকজনকে রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপে দংশন করে। তাঁরা ফরিদপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। পাশের ইউনিয়নের বসন্তপুর এলাকায় একজন ও এনায়েতপুর এলাকায় আব্দুল্লাহ নামের এক যুবককে রাসেল’স ভাইপার সাপ দংশন করে। একজনের দংশনের জায়গা পচে গেছে। আমার চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন, সুতালরি ও আমার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পদ্মাপাড়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। আমি বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় আছি।’

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গের উপদেষ্টা তৈয়বুল আজহার বলেন, রাসেল’স ভাইপার সাপটি পদ্মার তিনটি চরে দেখা গেলেও কয়েক মাস আগে হরিরামপুরের পদ্মাতীরবর্তী গ্রাম গরীবপুরেও দেখা গেছে। পৃথিবীর অন্যতম বিষধর সাপ এটি। ইদানীং ধানখেত, ভুট্টাখেতে এই সাপ দেখা যাচ্ছে। ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি চন্দ্রেবাড়ার প্রধান খাদ্য। এই সাপের কামড়ে ইতিমধ্যে এই এলাকায় কয়েকজন মারাও গেছেন। এই বিষধর সাপ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে গণসচেতনতা তৈরি করা জরুরি। 

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, হরিরামপুরের চরাঞ্চলে কৃষকদের সতর্কতার সঙ্গে ধান কাটতে হবে।
 
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রাসেল’স ভাইপারের মতো বিষধর সাপের কামড়ে চরাঞ্চলে কয়েকজন মারা গেছেন। বিষয়টা আমরা অবগত। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে আমরা কাজ শুরু করেছি। উপজেলা পরিষদ থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলে কৃষকদের বিশেষ জুতার (গামবুট) ব্যবস্থা করব।’
 
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১ মার্চ রঘুনাথপুরে লালমিয়া নামের এক কৃষককে ভুট্টাখেতে পানি দেওয়ার সময় দুপুরের দিকে বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপ কামড় দেয়। তাৎক্ষণিক ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পাঁচ দিন পর লাল মিয়ার মৃত্যু হয়। 

এ ছাড়া গত বছর উপজেলা সদরের বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পদ্মাপাড় থেকে একটি রাসেল’স ভাইপার ধরে নিয়ে আসেন বাল্কহেডের চালক। পরে এটিকে মেরে ফেলা হয়। এ ছাড়া লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ফসলের খেতে কাজ করতে গিয়ে সাপের দংশনে এক কৃষক মারা যান। যদিও চন্দ্রবোড়া নাকি অন্য কোনো সাপের দংশনে মৃত্যু হয়েছে তাঁর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত